কুমিল্লায় ৯ শহীদের স্বীকৃতিতে স্মৃতিস্তম্ভের দাবি পরিবারের

মাজহারুল ইসলাম বাপ্পি :

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও স্বীকৃতি কিংবা শহীদদের তালিকায় আজও নাম উঠেনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানাধীন মহানগরীর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড সংলগ্ন উত্তর রামপুরের ৯ শহীদের। তাঁদের লাশ কোথায় দাফন হয়েছে আজও তা জানার সুযোগ হয়নি। এক এক করে দীর্ঘ ৫৪ বছরেও চিহ্নিত হয়নি এই ৯ শহিদের স

মাধি। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল ১১ জনকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। তাদের মধ্যে দুজন জীবিত ফিরে এলেও ৯ জন আজও ফিরে আসেনি। এই নয়জন এখনো শহিদ হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি।

এ নিয়ে এলাকাবাসীসহ শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে রয়েছে চরম ক্ষোভ। এছাড়া পাকবাহিনীর হাতে শারীরিক নির্যাতন শেষে প্রাণে বেঁচে আসা সায়েদ আলীসহ দুজনের ভাগ্যেও মেলেনি কোনো স্বীকৃতি।

জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার অভিযোগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার সংলগ্ন উত্তর রামপুর (মিস্ত্রি পুকুর পাড়) এলাকার আলী মিয়া মজুমদার, গণি মিয়া মজুমদার, আহমদ আলী, আছমত আলী, সুলতান আহমদ আর্মি, মফিজ উদ্দিন, আব্দুল গফুর, আব্দুল খালেক, সায়েদ আলী, আব্দুল মজিদসহ ১১ জনকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই সময় ভাগ্যক্রমে সায়েদ আলী ও আব্দুল মজিদ বেঁচে গেলেও অন্যরা আর ফিরে আসেনি। তাদের লাশ কোথায় দাফন হয়েছে তা জানে না এসব শহিদের পরিবার। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও জাতির এই সূর্য সন্তানদের নামে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। এমনকি শহিদদের নামের তালিকায়ও তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে কোন প্রকার স্বীকৃতির মুখ না দেখেই বছর তিনেক আগে মৃত্যু বরণ করেছেন পাকবাহিনীর হাত থেকে বেঁচে আসা সায়েদ আলী।

শহীদ আলী মিয়া মজুমদারের ছেলে কামাল মজুমদার জানান, দিনটি ছিল ৩০ এপ্রিল শুক্রবার। জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমার বাবা শহীদ আলী মিয়া মজুমদার, তার সহোদর গণি মিয়া মজুমদারসহ এগারোজনকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। ১১ জনের মধ্যে দুজন বেঁচে আসতে পারলেও বাকিরা আসেননি। শহিদ পরিবারের সদস্য হয়েও কোন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো স্বীকৃতি কিংবা সুযোগ-সুবিধা পাইনি। শহীদদের স্মৃতিতে অন্তত একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।

পাকবাহিনীর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সায়েদ আলীর ছেলে কামরুল হাসান রায়হান বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা আমার বাবাকে আটক করে প্রথমে কুমিল্লা এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে পা উপরের দিকে বেঁধে একদিন এক রাত শারীরিক নির্যাতন চালায়। তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে পাকিস্তানিদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রাস্ট্রীয় কোন প্রকার স্বীকৃতি ছাড়াই তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। আশা করছি সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

শহিদ আহমেদ আলীর নাতি রুহুল আমিন মজুমদার জানান, আমার দাদা আহমদ আলী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আরেক চাচা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তিনবার আমাদের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে পাকিস্তানিরা। একজন শহিদ পরিবারের সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি না পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আর্থিক সহযোগিতা নয়, শহিদ হিসাবে সরকারের তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
error: ধন্যবাদ!