দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারে প্রতিটি খাতে বিশেষ করে সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে আরও গবেষণা চালানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আমি গড়ে তুলেছি। যাতে করে আমাদের যতটুকুই সম্পদ রয়েছে সেটাকে যেন যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি। কারণ গবেষণা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ এবং বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এই ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সর্বক্ষেত্রেই গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তার ওপর আমরা একশ ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছি, আর বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে।’
‘দেশের মানুষও যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সে জন্য বিজ্ঞান মনস্কভাবেই তাদের আমরা গড়তে চাই’, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর তার দল সরকারে আসার পর গবেষণার জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনকে অনেক বেশি সহজ করে তোলে এবং প্রতিটি সময় ও মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায়।’
তার সরকার মোবাইল ফোনকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়াতেই এটি এখন মানুষের হাতে হাতে চলে এসেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ বছর প্রায় ৩ হাজার ৮শ’র অধিক শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্টের আওতায় বঙ্গবন্ধু ও এনএসটি ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়। এর মধ্যে নির্বাচিত কয়েকজনের হাতে অনুষ্ঠানে চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক, ফেলোশিপ এবং অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্টের বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে এমএস, পিএইচডি এবং পিএইচডি-উত্তর অধ্যয়ন/গবেষণার জন্য ৬৪ জনকে, ৩ হাজার ২০০ জনকে এনএসটি ফেলোশিপ এবং ৫৬১ প্রকল্পের জন্য ৫৬১ জনকে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
‘দেশের বিজ্ঞান গবেষণায় এ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু গবেষণা করলেই চলবে না, এই গবেষণার ফলাফলটা কী, সেটাও জানতে চাই। আর সেটা যে দেশের কাজে লাগছে সেটাও আমরা নিশ্চিত হতে চাই।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি জানতে চেয়েছেন- ‘গবেষণার জন্য যে অর্থ ব্যয় করছি তার রেজাল্টটা কী, আমরা দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘কেবল গবেষণা করাটাই যথেষ্ট নয়। গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারলেই সে গবেষণা সার্থক হবে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদেরকে স্কলারশিপ দিচ্ছি এবং যারা গবেষণা করছেন তাদের একটা ডাটাবেজ হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘কার কি গবেষণালব্দ জ্ঞান আছে, সেটাকে আমার দেশের উন্নয়নে কোথায় কীভাবে কাজে লাগাতে পারি এবং সেই সুযোগ তাদের জন্য সৃষ্টি করে দেয়া দরকার। তাহলে যে ধরনের কাজে পারদর্শিতা অর্জন করছেন তাদের সেই ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারব।’
অতীতের দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে সবাই অবহেলার চোখে দেখত সেখানেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই বাংলাদেশকে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ বিজয়ী দেশ। সেই দেশকে কেউ অবহেলার চোখে দেখবে এটা কখনও মেনে নেয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সে কারণেই সব প্রচেষ্টা চালিয়েছি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা যেন এগিয়ে যেতে পারে এবং ভূমিকা রাখতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করার।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারে না। কারণ, কারো কাছে হাত পেতে আমরা চলি না।
তিনি বলেন, আমরা বাজেট ৭ গুণ বৃদ্ধি করেছি, স্বাক্ষরতার হার ৭৩ ভাগে বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়েছি, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি, সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, সেটা গবেষণার জন্যই সম্ভব হয়েছে। দেশে আজ স্ট্রবেরিসহ নানারকম ফলমূল এবং বিভিন্ন মৌসুমী তরিতরকারীর সারা বছরই চাষাবাদ হচ্ছে। আমরা যে হাইব্রিড ধান উৎপাদন করেছি, সেটাও গবেষণার ফসল। বিশ্বে এখন মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনে আমরা তৃতীয় এবং সবজী উৎপাদনেও এগিয়ে গেছি।
তিনি বলেন, অনেকেই এক সময় এর বিরোধিতা করেছেন। আমি জানি আমাদের ১৬ কোটির ওপরে মানুষ কিন্তু জায়গা কম। কাজেই আমাদের ফসল উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আগে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং এখন পুষ্টি নিশ্চয়তার দিকে নজর দিয়েছে।
তিনি জাতির পিতার অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে জাতির পিতা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ তিনি গড়ে তুলছিলেন। তার পরও এই দিকটা ভোলেননি। কারণ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন।’
পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের মেধাবী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা হল বাস্তবতা। কারণ, আমি পৃথিবীর বহুদেশ ঘুরেছি এবং অনেক দেশের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে এবং মিশে দেখেছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা একটু সুযোগ পেলে অনেক অসাধ্যসাধন করতে পারে।’ কাজেই শিক্ষাক্ষেত্রে সে সুযোগ সৃষ্টি করাটাই তার সরকারের কাজ বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।