কুমিল্লার বুড়িচংয়ে মুজিববর্ষে পাকাঘর পেয়ে অন্ধ বৃদ্ধা বানেছা’র চোখে আনন্দাশ্রু

মো.জাকির হোসেন :
দীর্ঘদিন আগেই স্বামী শহর আলী গত হয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ৮০বছর বয়সী বিধবা বানেছা বানু একমাত্র ছেলে ৩মেয়ে, নাতি, নাতবৌ ও তাদের সন্তান নিয়ে থাকেন বুড়িচং উপজের সদর ইউনিয়ের হরিপুর কলোনী-পাড়ায়। জড়াজীর্ণ ভাঙ্গা ঘরে সকলকে নিয়ে জবুথুবু হয়ে কোন রকমে রাত্রিযাপন কারতেন।
সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমিতে কোন রকমে ছনের তৈরি ঘরটিতে শীতে কিংবা রোদ বৃষ্টি ঝড়ে থাকতে হয়েছে এভাবেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টির রাতে আশে পাশের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিতেন গরু ঘর কিংবা অন্যের বারান্দায়। পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করা ছেলে ও তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাতি নিজের সংসার সংসারই চালাতে পারেন না। কোন কাজ থাকে তো কোন দিন কাজ নেই। অসহায় বানেছা বানু ভিক্ষা করতেন বিভিন্ন রেল স্টেশনে কিংবা ট্রেনে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে। অনেক সময় ট্রেন করে ভিক্ষা করতে করতে চলে যান বি-বাড়িয়া ও সিলেটে। পেট চালানোই দায় যেখানে সেখানে নতুন ঘর করা বানেছা বানুর জন্য আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কি বা হতে পারে। চোখে না দেখলেও একটি নতুন ঘরের স্বপ্ন দেখতেন হতদরিদ্র বানেছা বানু। যে ঘরে নাতি নাতবৌ মেয়েকে নিয়ে থাকবেন আনন্দ আর একটু আরামে। বৃষ্টি এলে বা ঝরের রাতে পরের ঘরে আশ্রয় নিতে হবে না যে ঘরটি ছেড়ে। আকাশ কুসুম কল্পনা বা স্বপ্ন নয় বাস্তবেই বৃদ্ধা বানেছা বানু পেলেন নতুন ঘর । যেমন ঘর বানেছা বানু চেয়েছিলেন তারচেয়েও ভালো ঘরই পেয়েছে বানেছা। ১লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত ঘরটি একেবারে বিনামূল্যে পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি। শুধু কি ঘর? না ঘরই নয়, বুড়িচংয়ের ইউএনও ইমরুল হাসানের তাৎক্ষণিক চেষ্টায় এক দিনেই দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ ও। আলো আধারের পার্থক্য অন্ধ বানেছা বানু না বুঝলেও নাতি নাতবৌ আর মেয়ের আনন্দ উল্লাস দেখে বানেছা বানুর মুখে তৃপ্তি আর আনন্দের ছাপ স্পষ্টই বোঝা যায়। চোখে না দেখলেও বেড়ার জায়গায় হাতরে দেখেন টিন আর পায়ের নিচে মাটির বদলে সমতল পাকা মেঝে তো ঠিকই উপলব্ধি করতে পারছেন তিনি। কাপড়ের আচলে চোখের আনন্দাশ্রু মুছে দোয়া করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুড়িচং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান ও প্রকল্প কর্মকর্তা মোস্তফা মাইদুল মুরাদের জন্য। আবেগাপ্লাত বানেছে বলেন, “আল্লাহ তুমি শেখ হাসিনারে আমার মত আরো যারা অসহায় আছে তাদের কে ঘর দেওয়ার শক্তি সামর্থ্য দেও। আল্লাহ যেন (ইউএনও) স্যারেরারে সবাইরে সুখে শান্তিতে রাখে দোয়া করি।”

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচী ওপ্রকল্পের আওতায় বুড়িচংয়ে ২০৬টি ঘর প্রদান করা হয়। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান বলেন, বানেছে বানু কিছুদিন আগে উপজেলা অফিসে গিয়ে নিজের গৃহ সমস্যার কথা জানায়। পরে তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাকে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। তাছাড়া একটি ঘর তার খুবই প্রয়োজন ছিলো। বানেছা বানুর মত যাদের একটি গৃহ খুবই প্রয়োজন য উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের পীর যাত্রাপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান, রুফিয়া খাতুন স্বামী বাবুল মিয়া, কামাল হোসেন, নাছিমা আক্তার ময়নামতি ইউনিয়নের বাজেহোরা গ্রামের প্রতিবন্ধী সোহেল মিয়া, রামপাল গ্রমের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র,রাজাপুর ইউনিয়নের চড়ানল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুলকাশেম মাষ্টা, বুড়িচং সদর পশ্চিমপাড়ার নুর জাহান সহ আরো অনেককে দেয়া হয়েছে। যাদের জমি আছে ঘর নাই তাদের জন্য ১লক্ষ টাকা এবং গৃহহীনদের জন্য ৩লক্ষ টাকা ব্যায়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকায় ২০৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৭মার্চ সকালে তাদের অনেকের মাঝেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও দুর্যোগ সহনীয় এসব গৃহ হস্তান্তর করা হয়। বর্তমান সরকার গৃহীত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!