প্রিয় শেখ মুজিব,
শুভ জন্মদিন। তোমার আজকের জন্মদিনটি ব্যতিক্রম। তুমি বেঁচে থাকলে একশো বছরের বুড়ো হতে। বয়সের সেঞ্চুরি হতো। তোমার নাতির সন্তান আমরীন, তাইকা, জারিফদের ভালো বন্ধু হতে। এই বয়সে তোমার মাড়ির দাঁত কি থাকতো? তোমার দরাজ গলা কি অটুট থাকতো? হয়তো থাকতো, আবার হয়তো না। তবে তুমি আমাদের কাছে আজীবনের সিংহপুরুষ হয়ে আছো, থাকবে।
আমরা বড়ই হতভাগা জাতি। নইলে স্বাধীনতার পাঁচ দশকে এসে জাতির পিতা নিয়ে বিতর্ক করতে হতো না। ভারতে কংগ্রেসের শত্রু বিজেপি কিন্তু জাতির পিতার প্রশ্নে বাপুজিকেই মানে। নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের পেছনে মহাত্মা গান্ধীর ছবিই টাঙানো থাকে। তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কক্ষে মুসলিম লীগ নেতা কায়েদ-ই-আজমের ছবি ঝোলানো থাকে। অথচ আমরা এখন তোমার স্বীকৃতির প্রশ্নের জাতীয় ঐক্য গড়তে ব্যর্থ হয়েছি। ক্ষমা করে দিও আমাদের।
বঙ্গবন্ধু তোমাকে একনজর দেখতে লোকারণ্য হয়ে যেত ঢাকার রেসকোর্স, কলকাতার বিগ্রেড ময়দান। জোট নিরপেক্ষ নেতাদের সম্মেলনে তোমার বক্তব্যের পর সোরগোল ওঠে মুজিব, বক্তৃতা চালিয়ে যাও। এমন নেতা কোথায় পাবে বাঙালি?
তোমার সহকর্মী এসপি মাহবুবের কাছ থেকে শুনেছি তোমার অসাধারণ মানবিকতার ঘটনা। ঢাকা জেলা পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত হয়েছিলো তোমার পুত্র শেখ কামাল। অথচ তুমি সেই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বেগম মুজিবকে বলেছিলে, ব্যাংক ডাকাত ধরতে তোমার ছেলে কেন দায়িত্ব নিয়ে মতিঝিলে গিয়েছিলো? নইলে সন্ধ্যায় পুলিশের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে গুলি খেতে হতো না। সেই পুলিশ অফিসারকে তুমি দায়িত্বে বহাল রেখেছিলে। সন্তানের মতোই আদর করতে।
হঠাৎ মধ্যরাতে নিরাপত্তা ছাড়াই তুমি বেরিয়ে যেতে ঢাকার অলিগলিতে মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখতে। অনেকেই জানে না, পিলখানায় বিডিআর আর গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার গোলাগুলির সময় তুমি উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলে। তুমি বলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবরুদ্ধ উপাচার্য মোজাফ্ফর স্যারকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী হয়েও তুমি ছুটে গিয়েছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তোমার কারণে ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়ন একসাথে পথ চলেছিলো। তুমি ছিলে উদার আর কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তোমার উদারতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকেরা তোমার বুকে গুলি চালিয়েছিলো। অথচ তোমাকে মচকাতে পারেনি আইয়ুব খান কিংবা ইয়াহিয়া খান।
তুমি ছিলে দূরদর্শী একজন নেতা। তাইতো মাত্র সাড়ে তিনবছরে ১২৭টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। যুদ্ধজয়ের তিনমাস না হতেই ভারতীয় সৈন্যরা তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাড়ি ফিরেছিলো। তুমি ছিলে বলেই ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের হয়েছিলো।
তোমার একশো বছর বয়স হতো আজ। তোমার কন্যাদের আয়োজনের কমতি ছিলো না। কিন্তু শেখ মুজিব, তুমি জানো- কেউই তোমার কন্যাদের কষ্ট বোঝে না। সবাই তোমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। তাইতো তোমার বড় মেয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলতে বাধ্য হয়, ৭৫’র ১৫ আগস্ট কোথায় ছিলো আওয়ামী লীগ নেতারা? তাইতো তোমার জন্মশতবার্ষিকীতে লোগো তৈরি করে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী। কারণ তোমার ছাত্রলীগ আজ আদর্শ থেকে দূরে চলে গেছে। তোমার মেয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে নিয়ে শঙ্কায় থাকে। যুবলীগের নাম ক্যাসিনোয় জড়িয়ে যায়।
তোমার মেয়েরা শুধু মনে জোর আর তোমার দোয়ায় এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশকে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দীর্ঘায়ু কামনা করি। সবাই বলে, শেখের বেটি শুধু বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করে। কারণ শেখ মুজিবের ধ্যানজ্ঞান ছিলো বাঙালির মুক্তি। তুমি ছিলে সফল পিতা। তুমি সফল হয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলে আর তোমার মেয়েদের হাত ধরে উন্নত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হবে।
তুমি নিশ্চিতে ঘুমাও টুঙ্গিপাড়ায়। যে টুঙ্গিপাড়াকে আলোকিত করে তুমি আমাদের জাতির পিতা হয়েছিলে। তোমার মেয়েদের কোরআন তেলওয়াত শুনতে তুমি অধীর আগ্রহে রয়েছো। রাত পোহালেই ওরা যাবে টুঙ্গিপাড়ায় তোমার কাছে। তুমি আমাদের সবার জন্য দোয়া করিও। তোমার বাঙালি জাতিকে যেন পরম করুণাময় হেদায়েত দান করেন।
জয় মুজিবের জয়। জয় বাংলার জয়। জয় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জয়। জয় বাংলা।
ইতি
নাজমুল হোসেন
তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজ
তোমার স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক।