শক্ত হাতেই সমালোচনার জবাব দিলেন তামিম। আরও একবার নিজের জাতটা চেনালেন। আর প্রমাণ করলেন সেই চিরায়ত বাণী- ফর্ম ইজ টেমপোরারি, বাট ক্লাস ইজ পারমানেন্ট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের দিনটিকে নিজের করে নিলেন তিনি। গড়লেন একের পর এক রেকর্ড। অবশেষে বাউন্ডারি লাইনে কার্ল মুম্বার বলে শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরলেন তিনি।
ফেরার আগে ১৩৬ বলে ১৫৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন তামিম। ২০ চার ও ৩ ছক্কায় এ নান্দনিক ইনিংস সাজান তিনি। এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি।
এ ম্যাচে খেলতে নামার আগে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন তামিম। ধীর হয়ে গেছেন, দলকে মন্থর শুরু এনে দিয়ে বিপদে ফেলছেন- এরকম কতশত বাক্যবাণে জর্জরিত হচ্ছিলেন তিনি। তাকে রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছিলেন সমালোচকরা। এবং তার দায় কিঞ্চিৎ তামিমেরও। মঙ্গলবার সেঞ্চুরি দিয়েই সমালোচনার জবাব দিলেন এই ড্যাশিং ওপেনার। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০৬ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। তার আগে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে ৪২ বলেই তুলে নিয়েছিলেন ফিফটি। পুল, ফ্লিক, লেগ গ্লান্স, স্ট্রেট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ— সব শটই খেলেছেন তিনি।
গত ২৩ ইনিংসে ওয়ানডেতে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না তামিমের। প্রায় দু’বছর পর তিন অংশ স্পর্শ করে ব্যাট উচিয়ে তুললেন তিনি। সেঞ্চুরির পথে ১৪টি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি হাকিয়েছেন তিনি।
আর ১০০ স্ট্রাইক রেটে তামিম ইকবালের সর্বশেষ ফিফটি এসেছিল ২০১৯ সালে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। সবশেষ পঞ্চাশ পেরোনো স্কোর করেছিলেন ২০১৯ সালের ২০ জুন, নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে।
গত বিপিএল থেকেই ধীরলয়ের ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচনার মধ্যে তামিম। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের নির্বিষ বোলিং আক্রমণের সামনেও তামিম পারেননি সেই খোলস থেকে বের হতে। দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জিও তামিমকে বাড়তি শট খেলার পরামর্শ দেন। কাল লম্বা অনুশীলন সেশনে তামিমকে পুরোনো ছন্দে ফেরানোর কাজই করেছেন ব্যাটিং কোচ। রান করার ক্ষুধা দেখা গেছে তামিমের ব্যাটিংয়েও। অনুশীলনটাকেই যেন মাঠের ম্যাচে টেনে আনলেন।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে লিটন দাস স্ট্রাইক নিয়েছিলেন, আজ নিলেন তামিম। প্রথম বল থেকেই ওপেন স্টান্স নিয়ে খেলেছেন। প্রথম ৮ বলে কোনো বাউন্ডারি না মারলেও নবম বলে কার্ল মুম্বাকে পুল শটে চার। এরপরই যেন সব জড়তা ঝেড়ে বেরিয়ে এলেন পুরোনো তামিম।
একের পর এক দৃষ্টি নন্দন শটে বেশ কয়েকবার বাউন্ডারির বাইরে পাঠান। ৪২ বলের ফিফটিতে ৪০ রানই করেন চার মেরে। তামিমের যখন ৫০ রান, দলের রান তখন ৬৬। এরপর কিছুটা সতর্ক থেকে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে আবারও আক্রমণাত্মক তামিম। শেষ ৫৭ রান তুলেছেন মাত্র ৩০ বলে। এরমধ্যে, মাতুমবোদজির ৪০-তম ওভারের ৪ বলে তুলে নেন ১৮ রান। তামিম যখন স্বরূপে, নির্ভার থাকতে দোষ কী!