করোনা মহামারির কারণে ২০১৯ সালের পবিত্র হজে বাংলাদেশিসহ কোনো বিদেশি হজযাত্রী অংশ নিতে পারেননি। তাই হজযাত্রীদের টাকা নিয়ে গ্রুপ লিডার উধাও জাতীয় সংবাদগুলো এবার দেখতে হয়নি। নচেৎ ফি বছর এ জাতীয় সংবাদ, ইহরাম পরিধান করেও হজে যেতে না পারা হজযাত্রীদের কান্নারত ছবি আমাদের দেখতে হয়।
বিষয়টি নিয়ে বেসরকারিভাবে হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট এজেন্সির কর্তারা রীতিমতো বিরক্ত। তারা প্রতারক গ্রুপ লিডাদের কবল থেকে বের হয়ে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মূলত হজযাত্রী সংগ্রহের ক্ষেত্রে একশ্রেণির এজেন্সির মালিক গ্রুপ লিডারদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সে হিসেবে বলা চলে, গ্রুপ লিডারদের দৌরাত্মের কারণে হজ এজেন্সির মালিকরা অনেকটা অসহায়।
যদিও হজ ব্যবস্থাপনায় গ্রুপ লিডার বলে কিছু নেই। আইনের দৃষ্টিতে তারা অবৈধ। এসব অবৈধ গ্রুপ লিডারদের অপতৎপরতা বন্ধ সময়ের দাবি।
এ দাবি বাস্তবায়নে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে গ্রুপ লিডারদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
সম্প্রতি হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর উদ্যোগে হজ ও উমরা ব্যবস্থাপনা, খসড়া হজ ও উমরা আইন এবং করজে হাসানা সংক্রান্ত তিন দিনব্যাপী ধারাবাহিক মতবিনিময় সভার শেষ দিন সভাপতির বক্তব্যে হাব সভাপতি এ ঘোষণা দেন।
হাব সভাপতি বলেন, হজযাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব এবং হজ নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করতে দালালদের মূল উৎপাটন করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট ও কোটা বাণিজ্য বন্ধ করা হয়েছে। হজযাত্রীদের ট্রলিব্যাগ নিয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি বন্ধ করতে পারায় হাজীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
হজ এজেন্সির মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আরও জানানো হয়, যদি চলতি বছর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়; তাহলে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার কাছে লিখিত অনুরোধ জানানো হবে।
অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাবের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার, হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি এস এম ইব্রাহিম, যুগ্-মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, মুফতি মোস্তাফিজুর রহমান, আকবর আলী, মাওলানা মাহবুবুর রহমান, আবু তাহের, সুপার এয়ার সার্ভিসের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা আশরাফুল হক ও মাওলানা জাহিদ আলম।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, আগে কোনো হজ এজেন্সি অনিয়ম করলে এক কোটি থেকে দু’কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতো। বর্তমান খসড়া হজ ও উমরা আইনে অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে ১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
হাব পল্লীর টাকা ফেরত প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, যেহেতু হাব পল্লীর জমির ক্রেতা ও বিক্রেতা একজনই, তাই কিছু দিন আগে হাবের গুরুত্বপূর্ণ সভায় হাবের সকল সাবেক সভাপতি, সাবেক মহাসচিবদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, হাব পল্লীর জমি বিক্রেতার নিকট থেকে ফেরত নিয়ে পুরো টাকা সংশ্লিষ্ট সদস্যদের ফেরত দেওয়া হবে।
সভায় সৎ দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত হাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সন্তোষ এবং কর্জে হাসানার অর্থ দ্রুত ফেরত পাওয়ায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
হাব সভাপতি বলেন, নতুন হজ ও উমরা আইনে দায়ী এজেন্সিগুলোর অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। নতুন আইনে এজেন্সির মালিকানা পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না বলেও হাব সভাপতি তসলিম উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, বিড়ম্বনাহীন ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষে হজ এজেন্সির মালিকদের নিয়ে টানা তিন দিন মতবিনিময় সভার আয়োজন করে হাব। প্রথম দিন হজ লাইসেন্স নং-১ থেকে ৬০০, দ্বিতীয় দিন হজ লাইসেন্স নং-৬০১ থেকে ১০৫০ ও তৃতীয় দিন হজ লাইসেন্স নং-১০৫১ থেকে ১৫৩৯ নং পর্যন্ত মালিকরা অংশ নেন। পরবর্তী মতবিনিময় চট্টগ্রামের হওয়ার কথা রয়েছে।