কুমিল্লা সিটি মেয়র সাক্কুকে বিএনপি থেকে অব্যাহতির গুঞ্জন

স্টাফ রিপোর্টার।।

নির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভায় উপস্থিত না থাকায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। সে নোটিশের জবাবও দিয়েছেন মেয়র সাক্কু।

কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কুমিল্লায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মেয়র সাক্কু অব্যাহতির কোন চিঠি পাননি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেছেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন, কিন্তু দল থেকে অব্যাহতির কোন চিঠি তিনি পাননি। দল যদি অব্যাহতি দেয় দিবে, অসুবিধা কি?

জানা গেছে, দলের কর্মকৌশল ঠিক করতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সাথে গত ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর মতবিনিময় সভা করে বিএনপি। সে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদেরও। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ মতবিনিময় সভা হয়।

কিন্তু সভায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কোন কোন সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও। এই অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে দল থেকে তাকে চিঠি দেওয়া হয়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের কারণে ব্যস্ত থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। এক সাপ্তাহ আগে চিঠির মাধ্যমে কুমিল্লায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জানা গেছে, আমেরিকান চেম্বারের সাবেক সভাপতি আফতাবুল ইসলাম মঞ্জুর বাসায় কার্টিসি ভিজিটের অংশ হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার আসেন এবং চা চক্রে মিলিত হন। সেখানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহাদাত হোসেন, কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন, কুমিল্লার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন, চ্যানেল আই এর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবুল কাশেম হৃদয়, বিশিষ্টজনদের মধ্যে চিকিৎসক আবু আইয়ূব হামিদ ও জহিরুল হক দুলাল উপস্থিত ছিলেন। দুপুরের মধ্যে ঐ চা চক্র শেষ হয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু গত ১৫ নবেম্বর জানান, নির্বাহী কমিটির সভায় যারা অনুপস্থিত ছিল তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তার মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোশেনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও অনুপস্থিত ছিল। তাকে কারণ দর্শাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি জবাব দিয়েছেন। কি লিখেছেন তা জানি না।

গতকাল ৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, মেয়র সাক্কুর বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা ফাইল দেখা ছাড়া বলতে পারবো না। মেয়র সাক্কুর বিষয়ে দল কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভায় অনুপস্থিত সদস্যদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। তবে কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি বলে তিনি জানেন।

এ দিকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে কুমিল্লায় বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিন্তু দলীয় দায়িত্বশীল কোন সূত্র থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

সূত্রগুলোর মতে, কারণ দর্শানোর প্রেক্ষিতে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা শুধুমাত্র মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ছাড়া আর কেউ জানার সুযোগ নেই। দল থেকেও বিষয়টি বিশেষ কারণে প্রকাশ করা হচ্ছে না। গুঞ্জনটি আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে যখন মেয়র সাক্কু গ্রুপের অন্যতম নেতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম কুমিল্লা শহরের শিশুমঙ্গল রোডস্থ কার্যালয়ে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে অংশ নিয়ে মঞ্চে বসেন তখন।

ঐ সমাবেশটি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের নেতৃত্বাধীন বিএনপির নেতাকর্মীরা আয়োজন ও বাস্তবায়ন করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সেখানে বক্তব্য রাখেন। অনেকে মনে করছেন, তলে তলে অনেকে হাজী ইয়াছিন গ্রুপের সাথে যোগ দিয়ে থাকলেও বিএনপির সাক্কু গ্রুপের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যেই অংশ নিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন, সহসা বিএনপির কুমিল্লা মহানগর কমিটি ও জেলা কমিটি হচ্ছে। সেখানে কোন একটিতে পদ পেতে যাচ্ছেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর।

এ ছাড়া মহানগর বিএনপির কমিটিতে সাক্কু ছাড়া তার গ্রুপের কয়েক নেতা স্থান পেতে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতা শামছুজ্জামান দুদু ও আবুল খায়ের আমাকে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে সমাবেশে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তখন আমাদের নেতাদের সাথে কথা বলে সমাবেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আমি সে সমাবেশে গিয়েছি।

এ দিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাথে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত না থাকায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন স্বীকার করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র সাক্কু জানান, দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন, কিন্তু দল থেকে অব্যাহতির কোন চিঠি তিনি পান নি। যদি অব্যাহতি দেয়- দিবে, অসুবিধা কি?

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে চিঠি দিয়েছে, নির্বাহী কমিটির সভায় যাইনি কেন তার ব্যাখ্যা চেয়েছে। আমি উত্তর দিয়েছিলাম সে দিন আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের সাথে আমার বৈঠক ছিলো। যে দিন বৈঠক তার দুই দিন আগে ঢাকা থেকে চিঠি আসছে মিটিংয়ের সে জন্য আমি যেতে পারিনি।

তিনি বলেন, ‘দল তাদের। আমি চল্লিশ বছর বিএনপি করি। এটি তারেক রহমান সাহেবের ব্যাপার। পার্টির সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তারা যা খুশি তা করুক। আমি আমার মতো চলতাছি।’

সূত্র: কুমিল্লার কাগজ

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!