মোজাম্মেল হক আলম :
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোন এলাকার চিত্র। এ সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মহাদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুরের বিভিন্ন উপজেলার পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও যাত্রীসাধারণ। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে শত শত যানবাহন চলাচল করছে। জরাজীর্ণ এ সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।
শনিবার সরেজমিন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম, বাঘমারা বাজার, সোনাইমুড়ী চাষীর হাট, নাথেরপেটুয়া, সোনাইমুড়ী-চৌরাস্তা সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এ আঞ্চলিক মহাসড়কের করুণ দশা। পিচ ঢালাই সড়কের খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাতের বেলায় এসব গর্তে যাত্রী ও মালবাহী গাড়ির চাকা আটকে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। দীর্ঘদিন এ সড়কটি সংস্কার না করায় যাতায়াত করতে গিয়ে নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর ও ভোলাসহ অন্য জেলার হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ভারী বর্ষণ শুরু হলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মীরা গর্তে ইট বিছিয়ে এবং সুরকি ও বালু দিয়ে রোলার মেশিনে চাপা দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন নোয়াখালী, সোনাপুর, মাইজদী, চৌমুহনী, সোনাইমুড়ী, রামগঞ্জ, চাটখিল, চরআলেকজান্ডার, রামগতি, রায়পুর, লক্ষীপুর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ থেকে হাজার হাজার মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, এ সড়কটির দুরবস্থার কারণে পণ্যবাহী যানবাহন চালকরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেন। যার প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। ৫০ মিনিটের দূরত্বের এ পথ পার হতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। স্থানীয়রা পারতঃপক্ষে এ সড়ক এড়িয়ে বিকল্প গ্রাম্য রাস্তায় যাতায়াত করছেন।
সড়কের নোয়াখালী-সোনাইমুড়ী-চৌরাস্তা, বিপুলাসার, লাকসাম জংশন, বাইপাস এলাকা, বাঘমারা বাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় সড়কের পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীরা চলাচল করতে গিয়ে গর্তে পড়ে যানবাহন উল্টে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। এ কারণে এ পথে কোনো রিকশা, সিএনজি ও অটোরিকশা যেতে চায় না। চালক যেতে রাজি হলেও ৩০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা দাবি করে।
অসংখ্য খানা-খন্দের পাশাপাশি লালমাইয়ের বাঘমারা, লাকসামের জংশন ও বাইপাস, খিলাবাজার, বিপুলাসার ও নাথের পেটুয়া বাজার এলাকার রাস্তা সরু হওয়ায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। সড়কটির দু’পাশে পানি নিষ্কাশনে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই।
বাসচালক দেলোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নোয়াখালী-কুমিল্লা সড়ক থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তা আরো ভালো। এ সড়কের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে শরীর ব্যথা ও গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়।
নোয়াখালী বিআরটিএ কার্যালয়ের পরিবহন শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে এ সড়কের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু যানবাহন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কটি প্রশস্তকরণসহ উন্নত প্রযুক্তিতে সংস্কার প্রয়োজন হলেও তা করা হয়নি।
মহাসড়কের কুমিল্লা পদুয়ার বাজারের পর থেকে ভাঙা শুরু। বেশি খারাপ অবস্থা বাগমারা বাজার ও লাকসাম বাইপাসের দক্ষিণ অংশে। এছাড়া লালমাই, হরিশ্চর, লাকসাম জংশন, লাকসাম বাইপাস, চন্দনা, কৃষ্ণপুর, খিলা, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাসার, সোনাইমুড়ি, বেগমগঞ্জ থানা এলাকাসহ মাইজদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙা রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার তথ্যমতে, কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার ফোর লেন উন্নীতকরণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলাসহ সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া কাজ ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তবে কাজের ধীরগতির কারণে তা আরো ২ বছরেও শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন পরিবহন শ্রমিকরা।
দৌলতগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ বলেন, দৌলতগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ বাইপাসের বেহাল অবস্থা। রাস্তার দুর্গতির কারণে বাণিজ্যিক কেন্দ্রখ্যাত এ বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাইপাসের কাজটি দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানান তিনি।
কুমিল্লা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, সড়ক ভাঙা হওয়ায় গাড়ি বিকল হচ্ছে। এছাড়া করোনা সঙ্কট কেটে গেলে বাসসহ অন্য পরিবহন চলাচল বেড়ে যাবে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোঃ আহাদ উল্লাহ বলেন, সড়কের যেখানে প্রয়োজন সেখানে সংস্কার করা হচ্ছে। এদিকে, ফোরলেন প্রকল্পে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারের বাইপাস ও লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার অংশের ফোর লেন আপাতত হচ্ছে না। সরকার এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবেন। বর্তমানে রাস্তার অবস্থা খারাপ হলেও করোনার কারণে মিটিং না হওয়ায় গত ৩/৪ মাস ম্যান্টেনেস কাজের জন্য পারচেজ কমিটি অনুমোদন দিতে না পারায় ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছেনা। তবে আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি রাস্তা মেরামতের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে সহসাই রাস্তা সংস্কার করা হবে।