মুরাদনগরে নজরুল-নার্গিসের স্মৃতি বিজড়িত কবিতীর্থ দৌলতপুর এখনো অবহেলিত

আরিফ গাজী :

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার দৌলতপুর গ্রামে এসেছিলেন। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান আর ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত। দেশ স্বাধীন হয়ে দীর্ঘ সময় পেড়িয়ে গেলেও এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোনো পাঠাগার বা ইনস্টিটিউট। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আগামী ২৭ মে শুক্রবার বিকেল তিনটায় কবির ১২৩তম জন্মবার্ষিকী পালন হবে দৌলতপুরে।

প্রথম পর্বে আলোচনা সভা দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এফসিএ প্রধান অতিথি ও কবি নজরুল ইনস্টিটিউট’র নির্বাহী পরিচালক (অতি: সচিব) মোহাম্মদ জাকীর হোসেন প্রধান আলোচক হয়ে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

দ্বিতীয় পর্বে উপজেলার শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন। মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে নজরুল তোরণ। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরা টুকরা বোর্ডে সাদা কালিতে লেখা কবির পঙিক্তমালা। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার এগোলেই খানবাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়ি। এ বাড়িতেই কবি ছিলেন। এ বাড়ির পলেস্তারা খসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না সংস্কার। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির বাসরঘর।

জানা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুকটি। অযন্ত ও অবহেলার কারণে সে সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে এখন তা আর ওই বাড়ির কেউই বলতে পারে না। একসময় ওই ঘরে বাসরখাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা পাঁকা ঘরে রাখা হয়েছে।কবিপত্নী নার্গিস বংশের উত্তরসূরি মোনালিসা খান বলেন, এ বাড়ির পুকুরঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতলপাটিতে বসে গান ও কবিতালিখতেন।

খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে নজরুল মঞ্চ। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা প্রশাসন ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন অনুষ্ঠান করে থাকে। এর বাইরে আর কিছুই এখানে হয়নি। এলাকাবাসী জানান, ওই মঞ্চে বছরের অধিকাংশ সময় গরু চরে। শিশুরা হামাগুড়ি দেয়।

নজরুল নার্গিস শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক নুরুল ইসলাম মাষ্টার বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা হোক।

নজরুল গবেষক অধ্যাপক শ্যামা প্রসাদ বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষনের দাবি জানাচ্ছি।

কবিপত্নী নার্গিসের ভাইপো বাবলু আলী খান বলেন, প্রতিবছর এখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে কবি নজরুলের নামে পাঠাগার ও দর্শনাথর্ীদের জন্য অতিথী ভবন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া স্থানিয়দের দাবি কোম্পানীগঞ্জ থেকে নবীনগর উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি কবির নামে করা।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!