ঢাকার ১৩টি অভিজাত ক্লাবসহ সারা দেশে সব ধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি দেশের কোথাও ‘জুয়ার উপকরণ’ পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দুই আইনজীবীর করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালত বলেছেন, লটারি ছাড়া হাউজি, ডাইস, ওয়ান টেন, চরচরির মতো অন্যান্য খেলা দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। আইনে এগুলো নিষেধ আছে। এ ধরনের খেলার অনুমতি, আয়োজন করা ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হল। এছাড়া এসব খেলার ইলেকট্রনিক ও অন্য সরঞ্জামাদি জব্দ করতে বলা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, যেসব খেলার ফলাফল দক্ষতার বদলে ‘চান্স’ বা ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া। আদালত বলেছেন, ঢাকা মহানগর ও মহানগরের বাইরে থ্রি কার্ড, ফ্লাস, হাউজি, নিপুণ খেলার আয়োজন করা অপরাধ। আদালত বলেছেন, যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী।
কেননা সংশ্লিষ্ট আইন ও মহানগর পুলিশ আইনে এ বিষয়ে নিষেধ করা আছে। অপরাধ ধনী ও দরিদ্রের ক্ষেত্রে সমান। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে- কারও সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি মনে রাখতে হবে। আদালত আরও বলেছেন, সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো উচিত। আদালত প্রত্যাশা করেন, সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে ইনডোর গেমের নামে ডাইস ও হাউজি খেলার ‘বেআইনি ব্যবসার আয়োজন’ চ্যালেঞ্জ করে মোহাম্মদ সামিউল হক ও রুকন উদ্দিন মো. ফারুক নামে দুই আইনজীবী ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন।
আবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ এবং পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট অনুযায়ী টাকার বিনিময়ে ‘ইনডোর গেম’ খেলা অবৈধ এবং সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হলেও ক্লাবগুলো ওই কাজ করে আসছে।
তখন ওই আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৩টি ক্লাবে ‘আইনবহির্ভূতভাবে ও টাকার বিনিময়ে’ হাউজি, ডাইস, তাস ও যে কোনো ধরনের জুয়া খেলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও শেখ হাসান আরিফের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
পাশাপাশি এসব ক্লাবে বেআইনিভাবে হাউজি, কার্ড ও ডাইস খেলার ব্যবসার আয়োজন করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
১৩টি ক্লাব হল- ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, ধানমণ্ডি ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, ঢাকা লেডিস ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাং সিনিয়রস ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, সিলেট ক্লাব ও খুলনা ক্লাব।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম মহানগর, খুলনা মহানগর, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালক এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকদের এ আদেশ পালন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
কিন্তু ঢাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষের লিভ টু আপিলে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির আদেশ দেন। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে সোমবার রায় ঘোষণা করেন। সেই রায়ে রুলটি যথাযথ ঘোষণা করা হলে ক্লাবগুলোয় টাকার বিনিময়ে খেলার আয়োজনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রেদোয়ান আহমেদ রানজীব। ঢাকা ক্লাবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
বিপুল বাগমার বলেন, ১৩ ক্লাবসহ মেট্রোপলিটন ও মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অর্থাৎ সারা দেশে এ ধরনের খেলা বন্ধ করতে বলেছেন আদালত।