ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার আরেক বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে ব্যাব। বাড়ির পাঁচটি সিন্দুকে থরে থরে সাজানো নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা পেয়েছে র্যাব।
এ ছাড়া ওই বাসা থেকে সোয়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআর, এক কেজি সোনার গহনা, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চায়নিজ ইয়েন, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম জব্দ করেছে র্যা ব।
অভিযান শেষে মঙ্গলবার র্যা ব ৩–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১১৯/১ হোল্ডিংয়ে মমতাজ ভিলা নামের ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় সোমবার মধ্যরাত থেকে র্যা বের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। পরে মেশিন এনে টাকা গোনা করা হয়। টাকা গুনে শেষ করতে ১টা বেজে যায়।
পরে র্যা ব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, বাসায় নিচতলার পাঁচটি সিন্দুকে থরে থরে সাজানো ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা এবং ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভারী ভারী সোনার গহনা পাওয়া গেছে। যার ওজন প্রায় এক কেজি।
এই অর্থ ও সোনার গহনা থানায় হস্তান্তর করবে বলে জানিয়েছে র্যা ব। পরে সেখান থেকে নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হবে।
র্যা ব ৩-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম ফয়জুল ইসলাম বলেন, সংকীর্ণ গলির ভেতরে ওই বাসার অভিযানের সময় কেউ ছিলেন না। বাসাটি আকারে ছোট হলেও সবকিছু বেশ সুরক্ষিত অবস্থায় ছিল।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতার বাড়ি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়েই তাদের এই সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন র্যা বের ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এনু-রুপনের দুই ডজন বাড়ির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা এ বাসার সন্ধান পাই। তবে এখান থেকে নতুন কাউকে আটক করা যায়নি।
এদিকে মমতাজ ভিলায় অভিযানের মধ্যেই ওই এলাকায় এনু ও রুপনের আরও একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়ার খবর আসে। লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১০৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১০ তলা ওই ভবনের নামও মমতাজ ভিলা। ওই বাড়িতেও অভিযান চালানো হবে বলে র্যাব সদরদফতরের সহকারী কমিশনার সুজয় সরকার সে সময় জানান।
ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক এনু ছিলেন গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আর তার ভাই রুপন ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে ওয়ান্ডারার্সে অভিযান চালিয়ে জুয়ার সরঞ্জাম, কয়েক লাখ টাকা ও মদ উদ্ধার করে র্যাব।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর গেণ্ডারিয়ায় প্রথমে এনু ও রুপনের বাড়িতে এবং পরে তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিন্দুকভর্তি প্রায় ৫ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
র্যা বের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, সিন্দুকে পাওয়া ওই টাকার উৎস ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো। টাকা রাখতে জায়গা বেশি লাগে বলে কিছু অংশ দিয়ে সোনা কিনে রাখতেন এনামুল।
ওই ঘটনার পর মোট সাতটি মামলার করা হয়, যার মধ্যে অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়া পরিচালনা ও অর্থপাচারের অভিযোগে চারটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
দুই ভাইয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৯১টি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে প্রায় ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে র্যা ব কর্মকর্তা সেদিন বলেছিলেন, এসব ব্যাংক হিসাব এখন অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনামুল ও রুপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন নিদেনপক্ষে ৬টি। পুরনো বাড়িসহ কেনা জমিতে গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন ইমারত। স্থানীয় লোকজন জানান, এই দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। আর নেশা হলো বাড়ি কেনা।
জুয়ার টাকায় এনামুল ও রুপন কেবল বাড়ি ও ফ্ল্যাটই কেনেননি, ক্ষমতাসীন দলের পদও কেনেন বলে জানা যায়।
২০১৮ সালে এনামুল পান গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ। আর রুপন পান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান। তারা সরকারি দলের এসব পদপদবিতে জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘ্নে চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানান।