কুমিল্লায় বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন, ৭ দিনেও গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্তকারী

আরিফ গাজী।।

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিবস্ত্র করে মারধরের ভিডিও ধারণকারী জাকির হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভূক্তভোগী এক নারী। একইসঙ্গে বিচার না পেলে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না বলেও জানান ভুক্তভোগী ওই নারী।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন চাপিতলায় নিজ বাড়ীতে ভুক্তভোগী ওই নারী সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সুমি আক্তার বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার ননাশের জামাই জাকির হোসেন বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে হুমকি দেয়া হয় কিভাবে স্বামীর সংসার করি সে দেখে নেবে এবং যে কোনো মূল্যে সে আমাকে তার করে নিবে। আমি গর্ভবতী হওয়ার ফলে আমার বাবার বাড়ি বেড়াতে আসি।

গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১টা ৩০মিনিটের সময় কয়েকজন লোক ঘরের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করতে চাইলে আমি আমার মা বাধা দেয়ার চেষ্টা করি। একপর্যায় ঘরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে শীদ কেটে কয়েকজন ঘরে ঢুকে আমিসহ আমার মা ও ছোট ভাইয়ের হাত, মুখ কস্টেপ দিয়ে বেধে ফেলে।

পরে তারা দরজা খুলে দিলে একে একে ১২ জন ঘরে প্রবেশ করে। সেখানে থাকা একজনের মুখের মাক্স খুলে গেলে আমি লক্ষ করে দেখি সে আমার ননাশের জামাই জাকির হোসেন। আমি চিনে ফেলেছি বিষয়টি বুঝতে পেরে জাকির হোসেন আমার মাকে মেরে ফেলার জন্য তার লোকজনকে বলে।

এ সময় আমি তার পায়ে ধরে কাকুতি-মিনতি করে বলি দুলাভাই আমার মাকে ছেড়ে দেন। সে কোন কথা না শুনে আমাকে টেনে হেঁচড়ে পাশের রুমে নিয়ে গিয়ে পরনে থাকা জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন করতে থাকে। এক পর্যায় সে আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতে দিতে বলে আমি তকে যখন যেখানে যেতে বলবো তুই একা চলে আসবি আর এই কথা যদি কারো কাছে বলছ তাহলে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিবো।

তখন তর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো ওপায় থাকবে না। এমন সময় তার সাথে থাকা একজন বলে ওঠে বাচ্চা নষ্ট করতে না আইসোস? সেটা করছ না কেন। তখন আমাকে বিবস্ত্র অবস্থায় জাকির পেটে সজোরে লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চিৎকার করতে থাকলে তারা সকলেই সেখান থেকে চলে যায়। যাওয়ার আগে আলমারিতে থাকা নগদ ১২ হাজার টাকা আমার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন ও একটি পাসপোর্ট নিয়ে যায়।
ওই রাতেই আমার মাকে গুরুত্বর অবস্থায় মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।

পরদিন শুক্রবার সকালে ৯৯৯ নম্বারে ফোন করে বিষয়টি জানানো হলে তারা বাঙ্গরা বাজার থানার নাম্বার দিয়ে সেখানে যোগাযোগ করতে বলেন। তাৎক্ষণিক বিষয়টি বাঙ্গরা বাজার থানায় জানানো হয়। শুক্রবার সারাদিনেও পুলিশ না আসায় বিকাল ৫টার দিকে বাঙ্গরা বাজার থানায় গিয়ে আমার বাবা কবির হোসেন একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগের পরদিন শনিবার দুপুরে বাঙ্গরা বাজার থানার এস আই ওমর ফারুক ঘটনার তদন্ত করতে আমাদের বাড়িতে আসেন। তার হাতে থাকা অভিযোগের কাগজে আমাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারনের বিষয়টি না থাকার কারণ জানতে চাইলে সে বলে এই ধরনের বিষয় সহজে আমলে নেয়া যায়না। আচ্ছা যাই হোক খরচের টাকা দেন। কিসের খরচের টাকা দিব এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন তেল খরচের টাকা দেন। তখন আমার কাছ থেকে ১ হাজার ৫শত টাকা তেল খরচ বাবদ নিয়ে যান এস আই ওমর ফারুক।

তিনি আরও জানান, থানায় অভিযোগ হয়েছে বিষয়টি জানতে পেরে জাকির আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে ভিডিও ছড়িয়ে দিবে যদি অভিযোগ তুলে না নেই। তাঁর ভয়ে আমার বৃদ্ধ মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েছেন আমরা বাড়ি ছেড়ে পাশের বাড়ির চাচার এখানে আশ্রয় নিয়েছি। থানা পুলিশের কাছ থেকেও আমি আশানুরূপ কোনো সাড়া পাচ্ছি না।

জাকির হোসেনের লোকজন আমাকে হুমকি দিচ্ছে যে, ‘পুলিশ কেনা হয়ে গেছে। মামলাইতো করতে পারবি না। অভিযোগটি শেষ হউক তারপর তুই কেমনে বেঁচে থাকিস আমরা দেখে নেবো। আমি আমার নগ্ন ভিডিও ধারণকারী জাকির হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমি যাতে ন্যায় বিচার পাই এ জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কুমিল্লা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
error: ধন্যবাদ!