কুমিল্লা নগর ও জেলাতে একাধিক খুনের ঘটনায় উৎকন্ঠায় মানুষ! ধরা পড়ছেনা খুনীরা!

এমদাদুল হক সোহাগ :
কুমিল্লায় একের পর এক লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনায় মানুষের মনে ভয় ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘাতকদের চিহ্নিত করে আটক করতে না পারায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর মানুষের আস্থার ঘাটটি দেখা দিয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কুমিল্লা নগর ও জেলা জুড়ে ছয়টি আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত কোন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
বছরের প্রথম দিন কুমিল্লার গোমতী নদীর পালপাড়া ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় কুমিল্লার অত্যন্ত পরিচিত চিকিৎসক লিয়াকত আলী খানের ছোট ছেলে শাহাদাৎ আলী খান ওরফে সাবাত খানের মরদেহ। শুরুতে কোতয়ালী থানা পুলিশ হাতে স্কচটেপ লাগানো অজ্ঞাত লাশ হিসেবে মরদেহ উদ্ধার করলেও পরে জানা যায়, লাশটি সাবাত খানের। সাবাত বাসা থেকে বেড়িয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর বাবা কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করেছিলেন। সাবাত খানের পর সারা দেশে আলোচিত হয়েছে কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য ও মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক খায়রুল আলম সাধনের হত্যাকান্ডের ঘটনাটি। গত ৯ জানুয়ারি বিকেলে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার মোস্তফাপুর এলাকায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ থেকে খায়রুল আলম সাধনের মরদেহ উদ্ধার করে সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ। নিহতের শরীরে, মুখে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা তাকে অন্যত্র হত্যার পর এই স্থানে মরদেহ ফেলা হয়। তবে এই ঘটনায় মামলা হলেও খুনের রহস্য এখনো বের হয়নি।
সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারী জেলার বরুড়া উপজেলার আড্ডা ইউনিয়নের আড্ডা বাজার সংলগ্ন পল্লী বিদ্যুতের আড্ডা অফিসের ইনচার্য মো: শরীফ খানকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার মদ্যভদ্রঘাট গ্রামে। তিনি দুই বছর ধরে পল্লী বিদ্যুতের আড্ডা বাজার অফিসের ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে জেলার বরুড়া উপজেলার খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের একটি টমেটো ক্ষেতের মধ্যে পাওয়া যায় আমেনা আক্তার (২৫) নামে এক নারীর মরদেহ। আমেনা ওই গ্রামের কৃষক মাজেদ মিয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় বুধবার (১৫ নভেম্বর) তার বাবা মাজেদ মিয়া অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বরুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
নিখোঁজের ৬ দিন পর গত ১১ জানুয়ারি শনিবার রাতে জেলার লালমাই উপজেলার বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকায় প্রবাসী জুয়েল রানার শিশু ছেলে আবু সুফিয়ান সানির (৬) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও হত্যার কারণ ও খুনিরা এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নাওতলা থেকে নৈশপ্রহরী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিনের (২৬) ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই হত্যার রহস্য এবং খুনিদের বিষয়টি এখনো অজানাই রয়ে গেছে।

এর আরো আগে, গত বছরের অক্টোবরে আদর্শ সদর উপজেলার দক্ষিণ দুর্গাপুর মডেল ইউনিয়নের সাতরা চম্পকনগর এলাকার স্কুল ছাত্র মেহেদী হাসান রিফাতকে তাঁর ঘরের পিছনে কুপিয়ে হত্যা করে ডোবাতে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত মেহেদী হাসান রিফাতের চাচা। মেহেদী হাসান রিফাতের বাবা আলমগীর সৌদি প্রবাসী। ছেলে হত্যার খবর পেয়ে ছুটে আসেন এবং জানাজায় অংশ নেন। ছেলের খুনীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে। অত্যন্ত আক্ষেপ নিয়ে দেশ ছেড়ে নিজ কর্মস্থলে গিয়েছেন। এখন পর্যন্ত শিশু মেহেদী হাসান রিফাত হত্যা মামলা আলোর মুখ দেখেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার বারের সিনিয়র আইনজীবী লেখক ও গবেষক এডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আরো সোচ্চার হতে হবে। পুলিশকে আরো সচেষ্ট হতে হবে।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী আলী আকবর মাসুম বলেন, প্রথমত প্রশাসন ও পুলিশকে রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সড়ে এসে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও সেবার জায়গায় ফিরে আসতে হবে। দ্বিতীয়ত অন্যায্য অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের যে অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা চলছে, সেটি বন্ধ করতে হবে। মূলত অন্যায্য অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের যে অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা চলেছে তার কারনেই সমাজে হানাহানি-মারামারি, হত্যা গুম চলছে।
কুমিল্লা জেলা জজ কোর্টের এপিপি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান ভূইয়া জুয়েল বলেন, কুমিল্লায় হত্যাকান্ড বেড়ে চলছে, যার কারনে আমরা খুবই উদ্বিঘ্ন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব পালনে আরো সচেষ্ট হতে হবে। পাশাপাশি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ঘাতকদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কুমিল্লা জজ কোর্টের জননিরপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের সাবেক পিপি প্রগতিশীল আইনজীবী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু বলেন, সমাজে অপরাধ প্রবণতা থাকবেই। প্রশাসন ও পুলিশের মূল দায়িত্ব হচ্ছে অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা। দুর্ভগ্যজনকভাবে প্রশাসন ও পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা এসব বিষয়ে উদাসীন। পুলিশ শুধু মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্র ছাড়া বাকী বিষয়ে উদাসীন।
শাহাদাৎ আলী খান সাবাতের হত্যাকান্ডের বিষয়ে ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহীন কাদির বলেন, মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। আমারা অনেক চেষ্টা করেছি। আশা করি দ্রুত হত্যাকান্ডের জট খুলবে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!