আজ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। ভোক্তাদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দুঃখের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে টেলিযোগাযোগ খাতের ভোক্তারা আজও অধিকার বঞ্চিত।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শুধুমাত্র খাদ্য দ্রব্য, ঔষধ, প্রসাধনী, ওজনে কম, দাম বেশি ও নিম্নমানের বিপরীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও ভোক্তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে নিষ্পত্তি করেন।
এসকল অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ভোক্তা অধিদপ্তর সফল হলেও টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে এ অধিদপ্তর সফলতা দেখাতে পারেনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের সাথে তাল মেলাতে ও আইন যুগোপযোগী করতে এ দপ্তর কার্যত ব্যর্থ।
ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ৩৯ ধারায় সেবা খাতের মধ্যে ছোট পরিসরে টেলিকম সেবার উল্লেখ রয়েছে। এ সেবায় প্রতারণা করলে সর্বোচ্চ শাস্তি ১ বছর কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
গত বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ভোক্তা অধিদপ্তরে টেলিযোগাযোগ খাতের অভিযোগ ছিল প্রায় ১৬ হাজার। এর মধ্যে অধিদপ্তর জিপি ও রবিকে জরিমানা করলে ২০১৭ সালে জিপি হাইকোর্টে ভোক্তা অধিদপ্তরের জরিমানা করার এখতিয়ার নিয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে গ্রাহক বা ভোক্তা যাবে কোথায়?
টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ৫৯ ধারায় গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তির বিধান আছে। শুধু তাই নয় এ আইনে অভিযোগ ৭ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান আছে।
আছে ৩০০ কোটি টাকার জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিলের মত কঠিন শাস্তির বিধান। যদিও এ জরিমানা থেকে গ্রাহক এক কানাকড়িও পায় না। ভোক্তা অধিদপ্তরের চাইতে বিটিআরসি এ খাতে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে বেশি সক্ষম।
কারণ তার আছে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান। আমরাও তাই কমিশনের উপরেই আস্থাশীল বেশি ছিলাম।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১০ এর ৮৭ (০১) ধারা অনুযায়ী গত ১২ জুন ২০১৯ গণশুনানী করে। সেই গণশুনানীতে গ্রাহকদের পক্ষে আমরা বেশ কিছু প্রশ্ন কমিশনের কাছে তুলে ধরি। যার উত্তর গত ৫ মার্চ ২০২০ কমিশন প্রকাশ করে।
ওই প্রশ্নোত্তর পর্বের ৬নং প্রশ্নের মধ্যে ছিল রিটেইলারদের অতিরিক্ত অর্থ আদায়, প্যাকেজ বিক্রয়ে অপারেটরদের প্রতারণা, ডেটা ব্যবহারে ভোগান্তি। উত্তর কমিশন জানিয়েছে এক্ষেত্রে গ্রাহকরা চাইলে বিটিআরসি বা ভোক্তা অধিদপ্তরের শরণাপন্ন হতে পারে।
বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান একজন বিচারপতি ছিলেন এবং পদমর্যাদার অধিকারী। তারপরেও কমিশন কি জানে না যে, জিপি ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযোগ নিষ্পত্তির বিরুদ্ধে মামলা করে বসে আছে। যার এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
তাহলে গ্রাহকরা ভোক্তা অধিদপ্তরে গিয়ে বা ভোক্তা অধিদপ্তরই গ্রাহকদের জন্য কি করতে পারে। তাই এ কথা বলতেই হয়, টেলিযোগাযোগ খাতের ভোক্তারা আজও অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন।
লেখক: মহিউদ্দীন আহমেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন