দুষ্টচক্রের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, দানবিক শক্তি হটিয়ে মানবিক শক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানবিক শক্তিই পারে সৃজনশীল রাজনীতিকে জাগ্রত করতে। দুষ্টচক্রের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে- এটাই শেখ হাসিনার নির্দেশ। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন, সারা জীবন মানুষের সেবা করতেন, তারাই একসময় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতেন। এখন প্রায়ই দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছেন। এখন মানব পাচারকারীরাও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন। আমলারা সারা জীবন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে অবসরে গিয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মাবন পাচারকারী পাপুলদের মতো অনেকেই এই দেশে আছে। তাদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি হবেন তারাই, যারা জনগণের কাছাকাছি থাকেন, আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করেন। কিন্তু এখন আমলারা রাজনীতিবিদ হচ্ছেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে ঢুকে পড়ছেন। দিন শেষে এরা নিজেদের স্বার্থটাই দেখবেন। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন না তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে সংসদ সদস্য পদে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের প্যাডে চিঠি দেওয়া হয়েছিল- এটা নিয়ে এখন দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় চলছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, পাপুল একজন স্বতন্ত্র এমপি। তিনি আওয়ামী লীগের এমপি নন। তবে শুনেছি কেউ একজন আওয়ামী লীগের প্যাড ব্যবহার করে একটি চিঠি ইস্যু করেছিলেন। কিন্তু যিনি চিঠি দিয়েছিলেন, তিনি কি এখতিয়ার রাখেন? আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার কেবল দলের সাধারণ সম্পাদকের। এ ছাড়া চিঠি দেওয়ার অধিকার অন্য কারও নেই। কাজেই অন্য কোনো ব্যক্তি যদি চিঠি দিয়ে থাকেন, ওই চিঠির গুরুত্বও থাকার কথা নয়।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ব্যক্তি পাপুলকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনো কথা নেই। এ ধরনের মানুষ রাজনীতিতে এসেই জনপ্রতিনিধি হওয়া রাজনীতি ও জাতির জন্য হতাশাজনক। এ ধরনের মানুষ যদি বাংলাদেশে রাজনীতিতে সুযোগ পায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশটাকেও ধ্বংস করতে পিছপা হবে না। এখন আমাদের সময় এসেছে, এ ধরনের অসাধু মানুষদের, মানব পাচারকারী, যারা মানুষকে দুরবস্থার মধ্যে ঠেলে দেয়, মানুষের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়, এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। কারণ এ ধরনের অনেক পাপুল আমাদের দেশে আছে। এই পাপুলদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতেই হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে রক্ষা করতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে। যদি এমন পাপুল আমাদের দলের ভিতরে থেকে থাকে, বা অন্য দলেও থেকে থাকে, তাহলে এদের বের করে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। আগে দেশ বাঁচাতে হবে।’

রাজনীতিতে ব্যবসায়ী ও আমলাদের প্রাধান্য পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দলের দুঃসময়ের এই নেতা বলেন, আগে জনকল্যাণ করে, জনগণের সঙ্গে থেকে সারা জীবন সাধনা করে জনপ্রতিনিধি হতেন। এখন হঠাৎ করে ব্যবসায়ী ও আমলারা রাজনীতিতে আসছেন। রাজনীতি তো রাজনীতিবিদদের করার কথা। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তরাই রাজনীতি করার কথা। যারা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারাই জনপ্রতিনিধি হবেন, এটাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটছে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বর্তমান নেতা-কর্মীদের একটা দূরত্ব চলছে বলে গুঞ্জন আছে-এমন প্রশ্নে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগ করেছেন, তারা সব সময়ই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন, থাকবেন। তারা দেশের যে কোনো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবেনই। আজকে করোনার পরিস্থিতিতেও দলের দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা মাঠে আছেন। যারা হাইব্রিড, সুবিধাভোগী, দলে এসেছেন নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য, তারা নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন। তারা সব সময় জনগণ থেকে দূরে থাকবেন। সে কারণে মানসিক দূরত্ব তৈরি হতেই পারে। তবে দুর্দিনের সহযোদ্ধারা যারা আছেন, তারাই আওয়ামী লীগকে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন। যারা সুবিধাবাদীদের দলে ঢুকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের কাছে আমাদের কোনো প্রত্যাশা নেই। তাদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক, সজাগ আছি। সুবিধাবাদীরা যেন কোনো ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য আলোচনা, পর্যালোচনা দলের ভিতরে সবই আছে। নেত্রীর একটা নির্দেশনা আছে, আমরা হাইব্রিড ও নব্যদের বের করে দেব। যারা সুযোগ-সুবিধার জন্য দলে প্রবেশ করে, তাদের চিহ্নিত করছি।’ তিনি বলেন, ‘দলে নতুন-পুরনো কোনো বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল। সংগ্রামী একটি দল। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার দল। অর্জনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ। মানুষের কল্যাণের সঙ্গে আওয়ামী লীগ। মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ। ৭১ বছর পূর্ণ করেছি। এই আওয়ামী লীগে প্রবীণ লোকের সংখ্যা বেশি। নতুনের আগমন ঘটবে। নতুনের প্রয়োজন আছে। তা না হলে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হবে না। প্রবাহ বাড়বে না। আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, প্রবহমান নদীর মতো। চলতেই থাকবে। নতুনদের আকৃষ্ট করার মধ্য দিয়েই কাজ করছি। কিছু দলছুট লোক, সরকারের বিভিন্ন জায়গায়, বিচ্ছিন্ন জায়গায় ঢুকতে পারে। তারা ত্যাগী ও দুঃসময়ের কর্মীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। এদের আমরা চিহ্নিত করছি।’ নাছিম বলেন, হাইব্রিডদের সঙ্গে ত্যাগীদের পার্থক্য থাকবেই। ত্যাগীদের কষ্ট, তাদের দলের জন্য আত্মত্যাগ, অবদান ও বিসর্জন অনেক বেশি। এরাই অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। গণতান্ত্রিক মানুষ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার মানুষ। দুঃসময়ের নেতা-কর্মীদের এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন, শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। তাহলে যারা সুবিধার জন্য দলে এসেছে, তারা সুবিধা করতে পারবে না। আবার সতর্ক থাকতে হবে, তারা যেন দলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে না পারে, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে না পারে। কারণ আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। নব্য লীগার, হাইব্রিডদের দিয়ে দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, দল যেন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, সে জন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগে এসেছেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন, সুযোগ নেবেন এটাই স্বাভাবিক। কীভাবে সুবিধা নিলেন, সেটা কতটা বৈধ, কতটা অবৈধ, তা অবশ্যই দেখার আছে। আওয়ামী লীগ বিবেচনায় নেবে।
পরবর্তী সময়ে জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন করতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা দল করতে গিয়ে জেল খেটেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, যারা বারবার জামায়াত-শিবির-বিএনপি এবং ১৫ আগস্টের খুনিদের সহায়তাকারীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর অভাব নেই। ভবিষ্যতে জেলা-উপজেলা কমিটিতে এসব নেতার মূল্যায়ন করা হবে।

লকডাউনে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। হয়তো গতিপ্রকৃতি, কৌশল ও ধারা পরিবর্তন হয়েছে। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উৎসাহিত করছি। দেশের মানুষের পাশে থাকাও সাংগঠনিক কাজের অংশ।’ বিগত সম্মেলনে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতীতেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছি। আমি দায়িত্বকে ইবাদতের মতো মনে করি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করি। মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল, শোষণ-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ধনী-গরিবের ভিতরে ব্যবধান কমিয়ে এনে একটি সুন্দর বাংলাদেশ নির্মাণ। শোষণমুক্ত আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার জন্য আওয়ামী লীগ ৭১ বছর কাজ করে আসছে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্যই যারা দুর্দিনে-দুঃসময়ে সাহসী যোদ্ধা, যারা নীতিহীন নন, দলের সঙ্গে কখনো বেইমানি করেননি, বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, দল থেকে বিপথগামী হননি, অথবা সুবিধা নেওয়ার জন্য এদিক-সেদিক যাননি, কাজ করার জন্য তাদের যথেষ্ট সুযোগ আছে এই দলে। আমি সে কাজটি করার জন্য সব নিজের সবটুকু শক্তি, মেধা, সততা, দক্ষতা ব্যবহার করতে চাই। আওয়ামী লীগে কাজ করার অফুরন্ত সুযোগ আছে। অনেক সাহসী, যোগ্য ও সৎ মানুষ আওয়ামী লীগে আছেন। সৃজনশীল মানুষ আছেন। এসব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করলে দিনে দিনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হবে। আওয়ামী লীগ শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে থাকবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। শেখ হাসিনার প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ সারা জীবন পালন করেছি, করছি, আমৃত্যু করব।’

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
error: ধন্যবাদ!