০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পিস্তল নিয়ে গ্রেফতার হওয়া রাসেল সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের কেউ নয়- সায়েম মজুমদার  নাঙ্গলকোটে মহিলাদল আদ্রা উওর ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার লক্ষে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন কুমিল্লায় ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে কিশোর কুমিল্লায় চাঁদাবাজবিরোধী অভিযানে হামলা, আহত ৩ পুলিশ সদস্য ইউসুফ মোল্লা টিপুকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে যৌথ বিবৃতি কুমিল্লায় যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল কুমিল্লা সদর দক্ষিণে পিস্তলসহ যুবদল কর্মী আটক দুর্গাপূজায় ৯ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হানিফ ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ২

মুরাদনগরে ন্যায় বিচারের আশায় প্রশাসনের দূয়ারে ঘুরছে প্রতিবন্ধী পরিবার

  • তারিখ : ০৬:০৩:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 427

আরিফ গাজী :

আমি অন্ধ। আমার পরিবারে দুই সন্তানসহ তিনজন প্রতিবন্ধী। এক সন্তানকে মেরে ফেলেছে। সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ও মানুষের সহযোগিতায় আমি চলি। থাকার জন্য আমার কোন ঘর নেই। অন্যের ঘরে থাকি। বাবার লিখে দেওয়া ৪ শতক জায়গায় করা দোকানঘরও প্রতিবেশী প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছি না। কখনো থানায়, কখনো ভূমি অফিস, আবার কখনো জেলায়- সবার দূয়ারে ঘুরে আমি এখন ক্লান্ত। রাষ্ট্রের কাছে জায়গার সিএস, আরএস, বিএস, দলিল, নামজারি ও খাজনা রশিদ আছে। সেখানে প্রতিবেশী আবু সাইদ এবং আবুল খায়েরের জবর দখলের কারণে ঘর উঠাতে পারছি না।

দোকান ঘরের সামান্য ভাড়া দিয়ে আমার ঔষুধের খরচটা চলতো। বর্তমানে তা থেকেও বঞ্চিত। আমি চাই আমার ন্যায্য অধিকার। বিন¤্রচিত্তে এমনটাই বলছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ ইউসুফ- তিনি উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন আকুবপুর ইউনিয়নের রাজাবাড়ি (বলিঘর) গ্রামের মৃত আব্দুল আলীমের ছেলে।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ ইউসুফ দীর্ঘ ত্রিশ বছর মামার বাড়ি ছিলেন। বাড়ি এসে নিজের ঘর না থাকায় অন্যের ঘরে থাকেন। ঘরের এমন লাঞ্চনা দেখে দয়াবশত: এগিয়ে আসেন ইউসুফের মামারা। তারা তাকে ঘর তৈরির জন্য ইটসহ মিস্ত্রীরি পাঠান। ইউসুফ নিজের জায়গায় ঘর করতে গেলে তাতে বাঁধা প্রদান করে মিস্ত্রিরীকে হুমকি ধমকি দিয়ে বিদায় করে দেন প্রতিবেশী চাচাত ভাই আবু সাইদ ও তার লোকজন। এতে ইউসুফ ও সাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়।

এ ঘটনা মিমাংসার লক্ষে স্থানীয় সালিশ হয়, মাতাব্বররা কাগজপত্র ঘেটে দেখেন যে, জায়গাটির প্রকৃত মালিক প্রতিবন্ধী পরিবার। আবু সাইদ বৈঠকে মিমাংসা মানলেও পরে আর সেই মোতাবেক কাজ করেনি। সে জোর করে ওই জায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ইউসুফের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পৈত্রিক সম্পত্তির উপর নির্মিত দোকান ঘরটি বছরে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ভাড়া নেয় মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আবু সাইদ। প্রথম তিনবছর নিয়মিত ভাড়া দিলেও গত সাত বছর যাবত ভাড়া দিচ্ছেন না। ওই জায়গা থেকে দুটি বড় মেহগনি গাছ কেটে ফেলেন এবং টিনের বেড়াটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। কিছু বললে তাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবু সাইদ বলেন, এখানে ৮ শতক জায়গা আছে এর মধ্যে চার শতক আমাদের। আমি কারো জায়গা দখল করি নাই। প্রতিবন্ধী ইউসুফের বাধাঁর কারণে জায়গা খারিজ করতে পারছিনা।

মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন বলেন, প্রতিবন্ধী ইউসুফের অভিযোগ পেয়েছি। আদালতে মামলা ছাড়া ব্যক্তিগত জায়গা উচ্ছেদ করা যায় না। তারপরও আমরা দুই পক্ষকে ডেকে একটা শুনানী করব। প্রতিবন্ধী ইউসুফের কাগজ সঠিক হলে জায়গা ছেড়ে দিতে বলব।

বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, প্রতিবন্ধী ইউসুফ থানায় আসছিল- যেহেতু এইটা জায়গা সম্পত্তির বিষয়, সেহেতু তাকে বিজ্ঞ আদালতের স্বরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। এছাড়া তাকে কেউ অন্যায় ভাবে নির্যাতন করলে অভিযোগ পেলে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

মুরাদনগরে ন্যায় বিচারের আশায় প্রশাসনের দূয়ারে ঘুরছে প্রতিবন্ধী পরিবার

তারিখ : ০৬:০৩:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

আরিফ গাজী :

আমি অন্ধ। আমার পরিবারে দুই সন্তানসহ তিনজন প্রতিবন্ধী। এক সন্তানকে মেরে ফেলেছে। সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ও মানুষের সহযোগিতায় আমি চলি। থাকার জন্য আমার কোন ঘর নেই। অন্যের ঘরে থাকি। বাবার লিখে দেওয়া ৪ শতক জায়গায় করা দোকানঘরও প্রতিবেশী প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছি না। কখনো থানায়, কখনো ভূমি অফিস, আবার কখনো জেলায়- সবার দূয়ারে ঘুরে আমি এখন ক্লান্ত। রাষ্ট্রের কাছে জায়গার সিএস, আরএস, বিএস, দলিল, নামজারি ও খাজনা রশিদ আছে। সেখানে প্রতিবেশী আবু সাইদ এবং আবুল খায়েরের জবর দখলের কারণে ঘর উঠাতে পারছি না।

দোকান ঘরের সামান্য ভাড়া দিয়ে আমার ঔষুধের খরচটা চলতো। বর্তমানে তা থেকেও বঞ্চিত। আমি চাই আমার ন্যায্য অধিকার। বিন¤্রচিত্তে এমনটাই বলছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ ইউসুফ- তিনি উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন আকুবপুর ইউনিয়নের রাজাবাড়ি (বলিঘর) গ্রামের মৃত আব্দুল আলীমের ছেলে।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ ইউসুফ দীর্ঘ ত্রিশ বছর মামার বাড়ি ছিলেন। বাড়ি এসে নিজের ঘর না থাকায় অন্যের ঘরে থাকেন। ঘরের এমন লাঞ্চনা দেখে দয়াবশত: এগিয়ে আসেন ইউসুফের মামারা। তারা তাকে ঘর তৈরির জন্য ইটসহ মিস্ত্রীরি পাঠান। ইউসুফ নিজের জায়গায় ঘর করতে গেলে তাতে বাঁধা প্রদান করে মিস্ত্রিরীকে হুমকি ধমকি দিয়ে বিদায় করে দেন প্রতিবেশী চাচাত ভাই আবু সাইদ ও তার লোকজন। এতে ইউসুফ ও সাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়।

এ ঘটনা মিমাংসার লক্ষে স্থানীয় সালিশ হয়, মাতাব্বররা কাগজপত্র ঘেটে দেখেন যে, জায়গাটির প্রকৃত মালিক প্রতিবন্ধী পরিবার। আবু সাইদ বৈঠকে মিমাংসা মানলেও পরে আর সেই মোতাবেক কাজ করেনি। সে জোর করে ওই জায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ইউসুফের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পৈত্রিক সম্পত্তির উপর নির্মিত দোকান ঘরটি বছরে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ভাড়া নেয় মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আবু সাইদ। প্রথম তিনবছর নিয়মিত ভাড়া দিলেও গত সাত বছর যাবত ভাড়া দিচ্ছেন না। ওই জায়গা থেকে দুটি বড় মেহগনি গাছ কেটে ফেলেন এবং টিনের বেড়াটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। কিছু বললে তাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবু সাইদ বলেন, এখানে ৮ শতক জায়গা আছে এর মধ্যে চার শতক আমাদের। আমি কারো জায়গা দখল করি নাই। প্রতিবন্ধী ইউসুফের বাধাঁর কারণে জায়গা খারিজ করতে পারছিনা।

মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন বলেন, প্রতিবন্ধী ইউসুফের অভিযোগ পেয়েছি। আদালতে মামলা ছাড়া ব্যক্তিগত জায়গা উচ্ছেদ করা যায় না। তারপরও আমরা দুই পক্ষকে ডেকে একটা শুনানী করব। প্রতিবন্ধী ইউসুফের কাগজ সঠিক হলে জায়গা ছেড়ে দিতে বলব।

বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, প্রতিবন্ধী ইউসুফ থানায় আসছিল- যেহেতু এইটা জায়গা সম্পত্তির বিষয়, সেহেতু তাকে বিজ্ঞ আদালতের স্বরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। এছাড়া তাকে কেউ অন্যায় ভাবে নির্যাতন করলে অভিযোগ পেলে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।