মুরাদনগরে মৃত্যুর ২২বছর পর শ্মশান থেকে উঠে এসে জমি লিখে দিলেন মালিক!

আরিফ গাজী।।

কুমিল্লার মুরাদনগরে মৃত্যুর ২২ বছর পর শ্মশান থেকে উঠে এসে জমি লিখে দিলেন মালিক। এমন খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

পরে খবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার পূর্বধইর পশ্চিম ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের মৃত হরিচরণ দাসের ছেলে সুরেন্দ্রচন্দ্র দাস ১৯৯৯ সালের ১২ ডিসেম্বর মারা যান। পরে তার রেখে যাওয়া ১৬ শতক জমি কৌশলে হাতিয়ে নিতে দলিল লেখক জহিরুল ইসলামের মাধ্যমে গত ১৩ ডিসেম্বর একই গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে দেলোয়ার হোসেন লিখে নেন (যার দলিল নং ১৩৫৫০)। শুধু তাই নয়, জহিরুল ইসলাম নিজেই এ দলিলের শনাক্তকারী হন। জমিটি মহেশপুর মৌজার ৩৫০ নং বিএস খতিয়ানের ৭৭৭ নম্বর দাগের।

অভিযুক্ত দলিল লেখক জহিরুল ইসলাম (৫৪) মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার চাপিতলা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তার সনদ নং ১১২। এদিকে সত্যতা পাওয়ার পরও দলিল লেখকের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রহিম সরকার বলেন, মহেশপুর গ্রামের মৃত হরিচরণ দাসের ছেলে সুরেন্দ্রচন্দ্র দাস ১৯৯৯ সালের মারা গেলেও তারই ১৬শতক জমি একই গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়া ছেলে দেলোয়ার কিভাবে লিখে নেন তা আমার বোধগম্য নয়।

দলিল গ্রহীতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দ্বীনেশচন্দ্র দাসের কাছ থেকে আমি ১৬ শতক জমি কিনি। কিন্তু দলিল নেওয়ার পূর্বে জানতে পারি, জমির প্রকৃত মালিক মৃত সুরেন্দ্রচন্দ্র দাস। এর পর বিষয়টির সমাধান খুঁজতে দলিল লেখক জহিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলি। তিনি বলেন- অতিরিক্ত খরচ দিলে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব কাগজপত্র তৈরি করে রেজিস্ট্রি অফিস ম্যানেজ করে দলিল করা সম্ভব। তার কথায় আমি রাজি হই। সে মোতাবেক ১৩ ডিসেম্বর জহিরুল ইসলাম দলিলটি রেজিস্ট্রি করেন।’

পারিবারিকভাবে জমির বর্তমান মালিক মৃত সুরেন্দ্রচন্দ্র দাসের ভাতিজা অমরচন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার বাবা দ্বীনেশচন্দ্র দাস দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক ও হার্টের রোগী। আর সেটিকেই কাজে লাগিয়ে দ্বীনেশচন্দ্র দাসকে মৃত সুরেন্দ্রচন্দ্র দাস বানিয়ে দলিল লেখক জহিরুল ইসলামের যোগসাজশে দেলোয়ার হোসেন ১৬ শতক জমি লিখে নেন। ঘটনার দিন আমি বাড়ি ছিলাম না। পরে লোকমুখে বিষয়টি জানতে পারি।’

অভিযুক্ত দলিল লেখক জহিরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। সরাসরি তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানান।

উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহজাহান মুন্সী আমাদের সময়কে বলেন, ‘মারা যাওয়ার ২২ বছর পরও দলিল দেওয়ার ঘটনা সবার মুখে মুখে। এ জালিয়াতির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না। তবে এ সাব-রেজিস্ট্রার আসার পর সব দলিল লেখক সমান সুযোগ পান না। সঠিক কাগজপত্র নিয়ে দলিল করতে গিয়ে অনেকে হয়রানিরও শিকার হন। আবার অনেকেই নিজে কাগজপত্র তৈরি করে সন্ধ্যার পর দলিল করেন।’

একাধিক দলিল লেখকও জানান, সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম মুরাদনগরে যোগদানের পরই চার-পাঁচজনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। ওই চক্রটি ভুয়া ভোটার আইডি, আরএস ও বিএস খতিয়ান, দাখিলা এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দলিল করছেন। এতে সরকার যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি রেজিস্ট্রি অফিসের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে। মৌখিকভাবে সাব-রেজিস্ট্রারকে এসব বিষয়ে জানানো হলে তিনি ওই চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযোগকারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, ‘মোবাইলে এসব কথা বলতে পারব না। আপনি অফিসে আসেন, আপনার বিষয়টা আমি দেখব।’ এই বলে লাইন কেটে দেন।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!