সেই আরিফের মুখে রাতভর নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের একটি দল রাতভর কীভাবে তাকে নির্যাতন করেছিল তার রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।

জামিনে মুক্ত হওয়ার পর রোববার দুপুরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আরিফ সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন, খোদ জেলা প্রশাসনের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার) নাজিম উদ্দীন এ হামলার নেতৃত্ব দেন। নিজ হাতে পেটান। আর এনকাউন্টারে দেয়ারও হুমকি দেন।

এসময় রাষ্ট্রের কাছে নিজের নিরাপত্তার দাবিও করেছেন সাংবাদিক আরিফ।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে এনে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি টাস্কফোর্সের। তবে এ ঘটনার পর আরিফুলের স্ত্রী দাবি করেন, পুরো ঘটনাই সাজানো।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিকদের আরিফ বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে আমার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমাকে মারধর করা হয়। প্রথম আঘাত করেন আরডিসি (সহকারী কমিশনার, রাজস্ব) নাজিমুদ্দিন। এরপর আমাকে টেনে হেঁচড়ে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। এরপর মাইক্রোতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত ও চোখ বেঁধে ফেলা হয়।

‘এসময় আমাকে এনকাউন্টার দেয়া হবে বলে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। আমি অনেক অনুরোধ করার পরও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকেন মাইক্রোবাসের অন্যরা। তারা আমাকে বারবার কালেমা পড়ে নিতে বলছিলেন।’

আরিফ আরও বলেন, আমি অনেক আকুতি মিনতি করি। আল্লাহর ও আমার সন্তানের কসম দিয়ে তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাই আমি। এরপরও তারা ক্ষ্যান্ত হচ্ছিলেন না। আমাকে বারবার বলছিলেন কালেমা কালেমা পড়ে নে। এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন আরডিসি।

তিনি বলেন, ‘এরপর সেই স্থান থেকে ঘুরিয়ে আমাকে ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অনেক কষ্টে বুঝতে পারি আমাকে ডিসি

অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে সেখানে একটি রুমে নিয়ে আবার আমাকে গালি দিতে থাকেন আরডিসি নাজিমুদ্দিন। তারা আমাকে মারধর করেন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেছেন।

সাংবাদিক আরিফ বলেন, সবশেষে আমার চোখবাঁধা অবস্থায় চারটি স্বাক্ষর করিয়েছেন। যেহেতু চোখ বাঁধা ছিল তাই কোথায় স্বাক্ষর করেছি আমি জানি না। এরপর তারা আমাকে কারাগারে রেখে আসেন। তারা যে আমাকে নির্যাতন করেছেন তার চিহ্ন আমার সারা শরীরে আছে।’

এদিকে আরিফকে তুলে নেয়া ও সাজা দেওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। গতকাল শনিবার রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয় এর তদন্তে।

প্রশাসনমন্ত্রী কালই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। আজ সকালে আরিফের জামিন হয়। শুধু তা–ই নয়, প্রতিবাদের মুখে আজ কুড়িগ্রামের ডিসিকে প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে ঘোষণা দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও সাজা দেয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে ধরে এনে নির্যাতন চালানোর পর মাদক দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এ অভিযোগের সঙ্গে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে তদন্তে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত অন্যদেরকেও প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
error: ধন্যবাদ!