বিশেষ সংবাদদাতা :
ফরচুন বরিশাল না কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স? কে হবে বিপিএলের এবারের চ্যাম্পিয়ন? শেষ হাসি কার? শেরে বাংলায় ট্রফি উঁচু করে ধরবেন কে-সাকিব আল হাসান নাকি ইমরুল কায়েস? আজ রাতেই মিলবে এ সব কৌতুহলি প্রশ্নের উত্তর।
আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় ২০২২ বিপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি হবে সাকিবের বরিশাল আর ইমরুলের কুমিল্লা। টুর্নামেন্টের ফেবারিট দুই দলই শিরোপার মঞ্চে।
আজকের ফাইনালের আগে ‘স্টেস রিহার্সেল’ দেখে ফেলেছেন ক্রিকেট অনুরাগিরা। ঠিক তিনদিন আগে কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি হয়েছিল এই দু’দল। লো স্কোরিং সে ম্যাচে কুমিল্লাকে ১০ রানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে বরিশাল।
হেরে কোয়ালিফায়ার টু’তে খেলতে হয় কুমিল্লাকে। সেই পর্বে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে উড়িয়ে দিয়ে অবশেষে ফাইনালে নাম লেখায় ফাফ ডু প্লেসি, মঈন আলি, সুনিল নারিন, লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমানদের দল।
কোচ, ক্রিকেটার, ফ্র্যাঞ্চাইজি, বোদ্ধা-বিশ্লেষক সবাই মানছেন-এবারের বিপিএলের সেরা দুই দলই ফাইনালে। কাগজে-কলমের পাশাপাশি মাঠের পারফরম্যান্স বিবেচনায় আনলেও বরিশাল আর কুমিল্লা বাকিদের চেয়ে এগিয়ে।
তবে দুই দলের শুরুটা ছিল দু’রকম। কুমিল্লা শুরু করেছিল সাবলীল ঢংয়ে। আর বরিশাল জয় দিয়ে শুরু করলেও পরের দুই ম্যাচ টানা হেরে অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিল।
পরে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ভুল ত্রুটি শুধরে পারফরম্যান্সের গ্রাফ ওপরে তুলে অন্যদের ছাড়িয়ে যায় বরিশাল। এ মিশনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
দুই দলে সমান তিনজন করে বেশ নামি ও অতি কার্যকর বিদেশি ক্রিকেটার আছেন। কুমিল্লার হয়ে খেলছেন ফাফ ডু প্লেসি, সুনিল নারিন আর মঈন আলি।
সঙ্গে এ মুহুর্তে দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার লিটন দাস ও এক নম্বর পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। সম্ভাবনাময় ফ্রন্টলাইনার মাহমুদুল হাসান জয় বেশ কার্যকর অবদান রাখছেন। অফস্পিনার নাহিদুল ইসলামও ভাইটাল ব্রেক থ্রু দিয়েছেন।
অন্যদিকে বরিশালেও আছেন তিন ভিনদেশি- ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো আর মুজিব উর রহমান। তবে গেইল এখনও নিজের রূপ দেখাতে পারেননি। ব্রাভো ব্যাট হাতে আহামরি কিছু করতে না পারলেও বোলিং দিয়ে পুষিয়ে দিচ্ছেন। আর আফগান ‘রহস্যময় স্পিনার’ মুজিবও নিজের সুনাম বজায় রেখে পারফরম করেছেন।
এর বাইরে তরুণ মারকুটে ওপেনার মুুনিম শাহরিয়ার বরিশালের নতুন সেনসেশন। গত বছর আবাহনীর হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ময়মনসিংহের এ সাহসী যুবা এবার করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম দিকে খেলতে না পারলেও পরের দিকে নিজেকে মেলে ধরেছেন। পাওয়ার প্লে‘তে মুনিম শাহরিয়ারের ঝড়ো ব্যাটিং বরিশালের টপ অর্ডারে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। ব্যাটিং অর্ডারে এসেছে স্থিতি।
কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে বরিশালের মূল চালিকাশক্তি হলেন অধিনায়ক সাকিব। ব্যাট ও বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বোলিংটা ঠিকই ছিল। তবে নিষেধাজ্ঞার খাড়া মুক্ত হবার পর ব্যাটের ধার কমে গিয়েছিল। এবার আবার যেন সেই হারানো ছন্দ ফিরে পেয়েছেন সাকিব।
ব্যাট হাতে সেই চেনা সাকিবের দেখা মিলেছে। তার বল হাতে নেওয়া মানেই প্রতিপক্ষ শিবিরে কাঁপন ধরানো। আর ব্যাট হাতে যেন সেই ২০১৯ বিশ্বকাপের সাকিব। একদম স্বচ্ছন্দে খেলছেন। ব্যাট হাসছে। রানের ফুলঝুরি ছুটছে। চার ও ছক্কা হাঁকাচ্ছেন মনের মতো করে।
এখন পর্যন্ত ২৭৭ রান ও ১৫ উইকেট শিকারি সাকিব এরই মধ্যে নিজেকে এবারের আসরের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজকের ফাইনালেও সাকিবই ‘কী ফ্যাক্টর’।
ফাইনালের আগে ট্রফি হাতে ছবি তোলা আর মিডিয়া সেশন কোনটাতেই তিনি আসেননি। তাই ফাইনাল নিয়ে সাকিবের চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য-পরিকল্পনার কথা জানা যায়নি। সাকিবের হয়ে উইকেটকিপার ও মিডল অর্ডার নুরুল হাসান সোহান কথা বলেছেন।
কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে দু’পক্ষই সতর্ক-সাবধানি। বরিশাল উইকেটকিপার সোহান, কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন, কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ও কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের কেউ নিজ দলকে ফেবারিট বলেননি।
তাদের সবার সুর প্রায় একরকম, দুই দলের শক্তি সমান এবং ফাইনাল হচ্ছে স্নায়ুর লড়াই। এ লড়াইয়ে যারা নিজেদের স্বাভাবিক রেখে পারফরম করতে পারবে, জয় তাদেরই হবে। এখন দেখা যাক, মাঠে কোন দল জ্বলে ওঠে?