০৭:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পিস্তল নিয়ে গ্রেফতার হওয়া রাসেল সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের কেউ নয়- সায়েম মজুমদার  নাঙ্গলকোটে মহিলাদল আদ্রা উওর ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার লক্ষে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন কুমিল্লায় ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে কিশোর কুমিল্লায় চাঁদাবাজবিরোধী অভিযানে হামলা, আহত ৩ পুলিশ সদস্য ইউসুফ মোল্লা টিপুকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে যৌথ বিবৃতি কুমিল্লায় যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল কুমিল্লা সদর দক্ষিণে পিস্তলসহ যুবদল কর্মী আটক দুর্গাপূজায় ৯ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হানিফ ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ২

কুমিল্লার গর্ব ৫২ এর ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার

  • তারিখ : ০৭:৩৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / 1558

মাজহারুল ইসলাম বাপ্পি :

৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। কুমিল্লার যে ক’জন সাহসী বীর সন্তান ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে নিজের জীবন বাজি রেখে ভাষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের অন্যতম কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃতি সন্তান আলী তাহের মজুমদার। রাজধানী ঢাকার বাহিরে কুমিল্লায় তাঁর বাড়ি অবস্থিত হওয়ায় এমনকি আঞ্চলিকতার প্রভাব না থাকায় ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পরও ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অর্থাৎ শত বছর বয়সেও একুশে পদক থেকে বঞ্চিত দেশের সূর্য সন্তান ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারী আসলে তাঁর কদর কিছুটা বাড়লেও বছরের বাকি সময়টুকু একাকীত্বভাবে কাটাতে হয়।

ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার জানায়, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাস আসলে প্রশাসন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ নানা পেশাজীবি লোকজন খোঁজ নিতে আসে। বছরের বাকী এগার মাস তেমন আর কারো দেখা মিলেনা। আলী তাহের মজুমার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত চাঁদপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম মোঃ চারু মজুমদার এবং মাতা সাবানী বিবি। পরিবারের ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তৃতীয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুমিল্লায় মূলত ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৮ সালে। পাকিস্তানের জিন্নাহ সাহেব যখন ঢাকায় এসে বলল উর্দু’ই হবে এ দেশের এক মাত্র রাষ্ট্রভাষা। তাৎক্ষনিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জিন্নাহ’র বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তিনি বলেন ১৯৪৮ সালে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিক থেকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে একটি মিছিল নিয়ে আসে। এ খরব শুনে যুবলীগ ও তমুদ্দীন মজলিসের কর্মীরা এবং কুমিল্লার স্কুল কলেজের ছাত্ররা পাল্টা মিছিল বের করে। এই মিছিলে তারা উর্দু ভাষার বিপক্ষে প্রতিবাদ জানায়। এক সময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়া ছুড়ি হয় এতে বেশ ক’জন আহত হয়। ফলে উর্দু ভাষার পক্ষে মিছিল কারীরা ওই সময় কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা ও কুমিল্লায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রায় ঘন ঘন মিছিল হতো। আর এই আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ রূপধারন করে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে। এই ভাষা সৈনিক আরো বলেন, অতীন্দ্র মোহন রায় এসে যখন আমাদের উদ্দেশ্যে করে বলল, যে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার ও বরকত সহ আরো অনেকেই নিহত হয়েছে। এই কথা শুনার পর আলী তাহের মজুমদার সহ অনেকে কুমিল্লার সকল স্কুল, কলেজের ছাত্রদেরকে ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরার আহব্বান জানায়। তখন রাজগঞ্জ রাণীর বাজার সহ পুরো কুমিল্লায় “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই স্লোগান নিয়ে তারা কঠিন আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরে। আর এই আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে প্রধান ভূমিকায় সক্রিয় ছিলেন আজকের আলোচিত ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। অথচ আজ ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর পরও মানবেতর জীবন যাপন করছেন ৫২ এর ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। আলী তাহের মজুমদার ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে আরো জানান, যারা ঢাকাসহ সারা দেশে ভাষা আন্দোলনের জন্য নিজেকে আতœনিয়োগ করেছেন তারা অনেকেই বীরচিত একুশে পদক অর্জন করেন। ঢাকার বাহিরের মফস্বলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সন্তান হওয়ায় বীরচিত পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নির্ভীক কন্ঠে তিনি বলেন, জীবনের শেষ বসন্তে শত’বছর এর উপরে পৌছে গিয়েছি। মনে হয় মরার আগে বীরচিত একুশে পদক আমার ভাগ্যে জুটবে কিনা জানি না। এ পর্যন্ত অনেক সরকারকে ক্ষমতায় দেখেছি কিন্তু কোন সরকার’ই কোন দিন আমার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়’নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার।

শেয়ার করুন

কুমিল্লার গর্ব ৫২ এর ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার

তারিখ : ০৭:৩৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০

মাজহারুল ইসলাম বাপ্পি :

৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। কুমিল্লার যে ক’জন সাহসী বীর সন্তান ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে নিজের জীবন বাজি রেখে ভাষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের অন্যতম কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃতি সন্তান আলী তাহের মজুমদার। রাজধানী ঢাকার বাহিরে কুমিল্লায় তাঁর বাড়ি অবস্থিত হওয়ায় এমনকি আঞ্চলিকতার প্রভাব না থাকায় ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পরও ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অর্থাৎ শত বছর বয়সেও একুশে পদক থেকে বঞ্চিত দেশের সূর্য সন্তান ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারী আসলে তাঁর কদর কিছুটা বাড়লেও বছরের বাকি সময়টুকু একাকীত্বভাবে কাটাতে হয়।

ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার জানায়, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাস আসলে প্রশাসন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ নানা পেশাজীবি লোকজন খোঁজ নিতে আসে। বছরের বাকী এগার মাস তেমন আর কারো দেখা মিলেনা। আলী তাহের মজুমার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত চাঁদপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম মোঃ চারু মজুমদার এবং মাতা সাবানী বিবি। পরিবারের ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তৃতীয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুমিল্লায় মূলত ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৮ সালে। পাকিস্তানের জিন্নাহ সাহেব যখন ঢাকায় এসে বলল উর্দু’ই হবে এ দেশের এক মাত্র রাষ্ট্রভাষা। তাৎক্ষনিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জিন্নাহ’র বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তিনি বলেন ১৯৪৮ সালে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিক থেকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে একটি মিছিল নিয়ে আসে। এ খরব শুনে যুবলীগ ও তমুদ্দীন মজলিসের কর্মীরা এবং কুমিল্লার স্কুল কলেজের ছাত্ররা পাল্টা মিছিল বের করে। এই মিছিলে তারা উর্দু ভাষার বিপক্ষে প্রতিবাদ জানায়। এক সময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়া ছুড়ি হয় এতে বেশ ক’জন আহত হয়। ফলে উর্দু ভাষার পক্ষে মিছিল কারীরা ওই সময় কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা ও কুমিল্লায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রায় ঘন ঘন মিছিল হতো। আর এই আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ রূপধারন করে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে। এই ভাষা সৈনিক আরো বলেন, অতীন্দ্র মোহন রায় এসে যখন আমাদের উদ্দেশ্যে করে বলল, যে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার ও বরকত সহ আরো অনেকেই নিহত হয়েছে। এই কথা শুনার পর আলী তাহের মজুমদার সহ অনেকে কুমিল্লার সকল স্কুল, কলেজের ছাত্রদেরকে ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরার আহব্বান জানায়। তখন রাজগঞ্জ রাণীর বাজার সহ পুরো কুমিল্লায় “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই স্লোগান নিয়ে তারা কঠিন আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরে। আর এই আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে প্রধান ভূমিকায় সক্রিয় ছিলেন আজকের আলোচিত ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। অথচ আজ ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর পরও মানবেতর জীবন যাপন করছেন ৫২ এর ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। আলী তাহের মজুমদার ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে আরো জানান, যারা ঢাকাসহ সারা দেশে ভাষা আন্দোলনের জন্য নিজেকে আতœনিয়োগ করেছেন তারা অনেকেই বীরচিত একুশে পদক অর্জন করেন। ঢাকার বাহিরের মফস্বলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সন্তান হওয়ায় বীরচিত পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নির্ভীক কন্ঠে তিনি বলেন, জীবনের শেষ বসন্তে শত’বছর এর উপরে পৌছে গিয়েছি। মনে হয় মরার আগে বীরচিত একুশে পদক আমার ভাগ্যে জুটবে কিনা জানি না। এ পর্যন্ত অনেক সরকারকে ক্ষমতায় দেখেছি কিন্তু কোন সরকার’ই কোন দিন আমার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়’নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার।