অযত্ন অবহেলায় দিন দিন সমতল ভূমিতে পরিণত হচ্ছে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়। এটি রক্ষা করে বিনোদন স্পট ও কৃষির সাফল্য দিয়ে প্রাচুর্যের আকাশ ছুঁতে পারে লালমাই পাহাড়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসতে পারে স্থানীয় জনপদে, মিটতে পারে বিনোদনের চাহিদা। সূত্রমতে, কুমিল্লার লালমাই, সদর দক্ষিণ, বরুড়া ও সদর উপজেলার পাশে লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের অবস্থান। তবে এর ভূমির ৯৫ ভাগ সদর দক্ষিণ উপজেলায়। কিছু অংশ সদর উপজেলায়।
সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই ও বড় ধর্মপুর মৌজায় লালমাই পাহাড় অবস্থিত। জমির পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার একর। এর অধিকাংশ ভূমি ব্যক্তি মালিকানায়। রয়েছে বন বিভাগ ও সরকারের খাসভূমি। এখান থেকে বিভিন্ন সড়ক ও বাড়ির নির্মাণ কাজে মাটি কেটে নেওয়া হয়। অনেকে এটাকে মাটির উৎসস্থল মনে করে। পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যক্তিগত ভূমির পাহাড় কেটে বাড়ি করা হচ্ছে। বড় ধর্মপুরে সড়কের পাশে পাহাড় কাটা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করতে গিয়েও পাহাড়ের মাটি কাটা হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, সময়ের প্রয়োজনে এখানে আরও প্রতিষ্ঠান হবে, সড়ক হবে। তবে তা যেন পাহাড়কে রক্ষা করে হয়।
পাহাড়ের পাশে শালবন বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি জাদুঘর। গড়ে উঠেছে কয়েকটি বেসরকারি বিনোদন পার্ক। পাহাড়কে ঘিরে দেশের দর্শনার্থীদের ভিড় সারা বছর লেগেই আছে। ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির বলেন, ভূতত্ত্ববিদদের মতে লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের বয়স তিন কোটি বছরের বেশি। ইতিহাস ও প্রকৃতি রক্ষায় এই পাহাড় সংরক্ষণ জরুরি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নদী রক্ষা কমিটির মতো প্রশাসন থেকে লালমাই পাহাড় রক্ষারও কমিটি হতে পারে। তবে তা যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে পাহাড় রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শহীদুল হক বলেন, লালমাই পাহাড়ে ৪০ হেক্টর জমিতে কাসাভা চাষ হয়। এ ছাড়া বাঁশ, মাল্টা, লেবু, কচুর ছড়াসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। কৃষি ও প্রকৃতির ভারসাম্যের জন্য লালমাই পাহাড় সংরক্ষণ প্রয়োজন। সামাজিক বন বিভাগ কুমিল্লার বিভাগীয় কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিম বলেন, কোটি বছরের প্রাচীন লালমাই পাহাড়। এটি কুমিল্লা ও দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থান।
এটিকে সংরক্ষণ জরুরি। রতনপুর থেকে ধর্মপুর সড়কটির পাশে পাহাড় ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এখানে বন বিভাগের ৫০০ একরের বেশি জমি রয়েছে। সালমানপুরে আমরা ১৭ একরের একটি বিরল উদ্ভিদ উদ্যান করেছি। এখানে আরও ৩০ একর জমি যোগ করা হলে বড় উদ্যান হবে। যা বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সরকারের সঙ্গে পাহাড় রক্ষায় স্থানীয়দেরও এগিয়ে আসতে হবে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, পাহাড়ে রয়েছে ৪০টির বেশি প্রত্ন স্থাপনা। পাহাড় সংরক্ষণ না হলে এগুলোও বিনষ্ট হতে পারে। বাকি প্রত্ন স্থাপনাগুলো খনন হলে প্রত্ন পর্যটনে কুমিল্লায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। দেশের প্রয়োজনে এই পাহাড় রক্ষায় আমাদের আরও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, আগে কিছু পাহাড় কাটা হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। পাহাড় কাটা বন্ধে আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছি। পাহাড় সংরক্ষণে আমাদের তদারকি অব্যাহত থাকবে।
সূত্র:
বিডি প্রতিদিন