মেহরাব অপি :
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী খাদিজা আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় শশুড়-শাশুড়ি ও স্বামীসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা করা হয়েছে। গৃহবধুর মা সেলিনা বেগম বাদি হয়ে মঙ্গলবার কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন।
খাদিজা আক্তার উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামের দুবাই প্রবাসী মোঃ মামুনের স্ত্রী ও পার্শবর্তী শুভপুর ইউনিয়নের কৈয়ারধারী গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের মেয়ে। বুধবার সরেজমিন স্থানীয়দের সাথে কথা বলে খাদিজাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। মামলায় আসামীদের কয়েকজন হলেন; খাদিজার স্বামী মামুন, শশুর মোক্তল হোসেন, শাশুড়ী নিলুফা বেগম ও ঝা শিমু।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বিয়ের পর থেকেই খাদিজা আক্তার বহু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে দু’টি অবুঝ শিশুর কথা চিন্তা করে সংসার করে আসছিল। নির্যাতনের এসব ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে সে কয়েকবার বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে স্বামীর এলাকার ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন রানার নেতৃত্বে উভয় পক্ষের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় শালিস-বৈঠকের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার পূণরাবৃত্তি ঘটবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে খাদিজাকে নিয়ে আসে স্বামীর পরিবার।
মামুন বিদেশ যাওয়ার সময় ৩ লাখ টাকা নেয়াসহ ঘর নির্মাণ ও জমি ক্রয় বাবদ বিভিন্ন সময় ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। গত ২৯ জুলাই একই দাবি করায় পরিবারের অক্ষমতার কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে খাদিজার স্বামী মামুনের নির্দেশে তার মা-বাবা তাকে বিভিন্ন উপায়ে শারীরিক নির্যাতন করে। এতে খাদিজা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে তার শয়ন কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। পরে বাড়ির লোকজন এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যায় খাদিজা।
এ বিষয়ে নিহত খাদিজা আক্তারের মা সেলিনা বেগম কুমিল্লা এসডি নিউজ ২৪ কে বলেন, ‘ঘটনার পরদিন রাত দশটায় খাদিজার স্বামী মামুন দুবাই থেকে ফোন করে বলে খাদিজার অবস্থা ভালো নয়, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এসময় সে খাদিজার চিকিৎসার জন্য ২ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় যেতে বলে ফোন কেটে দেয়। আমার মেয়ে ফাঁস দিতে পাওে না। এটি পরিকল্পিত হত্যা। শাহবাগ থানা পুলিশ কর্তৃক লাশের সুরতহাল রিপোর্টেও শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি এসেছে। খাদিজার সারা শরীরে কালো-নীলা ফুলা জখমের চিহৃ রয়েছে। আমি ঘটনারর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি’।
এ বিষয়ে মুন্সিরহাট ইউপির ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সাহাব উদ্দিন রানা কুমিল্লা এসডি নিউজ ২৪ কে বলেন, ‘দাম্পত্য জীবনে খাদিজার সাথে স্বামীর পরিবারের সমস্যা ছিল। শ^শুর বাড়ি থেকে চলে গেলে আমি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে কয়েকবার শালিস বেঠক করে খাদিজাকে তার শ^শুর বাড়িতে নিয়ে আসি। সুষ্ঠু তদন্ত স্বাপেক্ষে খাদিজার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা হোক’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা শুভ রঞ্জন চাকমা কুমিল্লা এসডি নিউজ ২৪ কে জানান, ‘খাদিজার মৃত্যুর পরে তাঁর অভিভাবকরা আমার কাছে আসে। এখনো থানায় কোনো মামলা করেনি। আদালতে মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। নির্দেশনা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব’।