কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের ‘গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতালে’ নেই রোগী ও চিকিৎসক। একটি ভবন গরু-ছাগলের খামারে পরিণত হয়েছে। এখানকার ছয়টি ভবনের মধ্যে চারটি দ্বিতল। কিন্তু ভবনগুলোতে নেই জানালা। কয়েকটি ভবনের দরজাও নেই, থাকলেও তা তালাবদ্ধ। সীমানাপ্রাচীর নেই। ভবনগুলোর ভেতরে ও আশপাশে গরু-ছাগল চড়ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ফটকটি বন্ধ, ডাকাডাকি করলেও কারো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় এ যেন কোনো ভূতুড়ে আস্তানা। ছয়টি ভবনের মধ্যে একটি সচল থাকলেও নেই কোনো পাখা। কোনো কোনো কক্ষে দরজা-জানালা নেই। কোনো কক্ষে পানি জমাট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
অন্য একটি ভবনে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, হাসপাতাল নয়, যেন ব্যক্তিগত কোনো গোডাউন। রয়েছে বিভিন্ন রকমের খাদ্য, ওষুধ, কেমিক্যাল, ইত্যাদি। অন্য ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি গরু-ছাগলের খামারে রূপান্তরিত হয়েছে। দুর্গন্ধে প্রবেশ করা প্রায় অসাধ্য। দোতলা ভবনের উভয় তলায় লালন-পালন হচ্ছে গরু-ছাগল। আর অতিরিক্ত জঙ্গলের কারণে অন্য দুটি ভবনে যাওয়াই অসম্ভব।
জানা যায়, ২০০৪ সালের ১৫ এপ্রিল তৎকালীন সংসদ-সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন চার কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালের ১৩ জুন নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান এটি উদ্বোধন করেন।
আরও জানা যায়, ২০১৪ সালের ৪ জুন হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার জন্য কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মুজিবুর রহমান স্বাস্থ্য সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে জনবল নিয়োগসহ নানা ধরনের সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই বছরই সেখানে চিকিৎসকের ছয়টি এবং নার্স ও কর্মচারীর ছয়টি পদ অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয় এক চিকিৎসা কর্মকর্তাকে। তিনি এখানে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ছিলেন।
হাসপাতালে নার্স ও কর্মচারীর পাঁচটি পদ থাকলেও বর্তমানে রাকিবুল হাসান নামে একজন ওয়ার্ডবয় কর্মরত আছে। এছাড়া সপ্তাহে ছয়দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন করে চিকিৎসক এসে রোগী দেখেন। গোহারুয়া ২০ শয্যা হাসপাতালের জন্য বিভিন্ন পদে চিকিৎসকের কথা থাকলেও নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসক এখানে নেই।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা থেকে একজন ডাক্তার এলেও সময়ের অনেক পরে আসেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চলে যান। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, হাসপাতালটি উন্নত করে আবাসিক চিকিৎসাসেবা চালু করা দরকার।
জেলা সিভিল সার্জন জানান, স্টাফ সংকটের কারণে হাসপাতালটি পরিপূর্ণভাবে সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না।