কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিলি আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আল্লামা মাহমুদুল হাসান। তিনি আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত এবং ঢাকার যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার মহাপরিচালক। মোট ১২৫ জন ভোটারের মধ্যে মাহমুদুল হাসান ৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী পেয়েছেন ৫০ ভোট।
বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সরকারি স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য গঠিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ‘আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন মাহমুদুল হাসান। মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি পেয়েছেন ৭৭ ভোট। আর মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন রাজু পেয়েছেন ৪০ ভোট। সভাপতির প্রস্তাবে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সিনিয়র সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বেফাকসূত্রে জানা যায়, বৈঠকে ১৫৭ মজলিসে আমেলা সদস্যের মধ্যে ১২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ছিল না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বেফাকের সহসভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। তার সঙ্গে ছিলেন খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের মাদ্রাসায়ে নূরে মদিনার মুহতামিম আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী ও ঢালকানগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জাফর আহমদ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বেফাকের সভাপতি আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালে এ পদটি শূন্য হয়।
একাধিক কওমি নেতা বলেন, কওমি মতাদর্শীদের মধ্যে আল্লামা আহমদ শফীর শক্তিশালী বলয় রয়েছে তা বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে ফের প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান আল্লামা শফী অনুসারী বিধায় গোপন ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হন। তারা বলেন, বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলয়; যার প্রভাব পড়তে পারে হেফাজতে ইসলামের আমির নির্বাচনসহ কওমি মতাদর্শী নানা সংস্থার অন্যান্য নির্বাচনেও। বেফাকের একাধিক সূত্র জানান, প্রতি পাঁচ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে বেফাকের কমিটি গঠন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বেফাকের কাউন্সিল হয়। পরবর্তী কাউন্সিল হবে ২০২৩ সালে। আল্লামা শফীর মৃত্যুর কারণে শূন্য হওয়া পদটি পূরণে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত করা হয় গতকালের আমেলা বৈঠকে।
পরবর্তী কাউন্সিল পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। সূত্র জানান, আল্লামা আহমদ শফী-পরবর্তী বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচন করার জন্য গতকাল সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শাহজালাল কনভেনশন সেন্টারে মজজিসে আমেলার বৈঠক বসে। বৈঠকের শুরুতে আল্লামা আহমদ শফীর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া হয়। এরপর গোপন ভোটের মাধ্যমে পরবর্তী মজলিসে আমেলা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তাব করেন বর্তমান মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। আল্লামা আবদুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মজলিশে আমেলার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেফাকের সহসভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, আল্লামা মাহমুদুল হাসান, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুর রহমান হাফেজ্জী, মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামীদ, আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী, আল্লামা সাজিদুর রহমান, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলনের অভিনন্দন : বেফাকের নবনির্বাচিতদের অভিনন্দন জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই ও মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ এক শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, আমরা আশা করব নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ বেফাকের নীতিমালা অনুসরণ করে বেফাককে সুষ্ঠুভাবে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করবেন।