দেলোয়ার হোসেন জাকির :
১৮৮৫ সালে ত্রিপুরার ম্যাজিষ্ট্রেট এফ এইচ স্ক্রাউন একটি পাঠাগার স্থাপনের জন্য অনুমতি ও ভূমি বরাদ্দ চেয়ে ত্রিপুরার মহারাজার কাছে আবেদন করেন।
পরে বীর চন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর অনুমতি দিলে শহরের প্রানকেন্দ্রে একটি আধাপাকা ছনের ছাউনি নির্মাণ করেন। সেটিই ছিল বীর চন্দ্র মাণিক্য দেববর্মণ বাহাদুর নির্মিত প্রথম স্থাপনা।
১৯৩০ সালে মহারাজের নির্মিত আধাপাকা ছনের ছাউনি ভেঙ্গে বর্তমান টাউনহলের কাঠামো নির্মাণ করা হয়। ১৯৩৫ সালে কলকাতার থিয়েটারের আদলে বর্তমান ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পরবর্তিতে কুমিল্লা বীর চন্দ্র গণ পাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের ১০ বারের মতো সংস্কার করা হয়েছে, বর্তমানে যে ভবন টি তা মহারাজ বীর চন্দ্র মাণিক্য দেববর্মণ বাহাদুর নির্মিত মূল ভবন নয়। ইতিহাস থেকে জানা গেছে ১৯৩০ সালের পরও কুমিল্লা টাউন হলের সংস্কার হয়েছে বহুবার।
টাউন হলটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী, বর্ষায় হলের ভেতরে দুই ফুট পানি জমে, পাঠাগারের বইগুলো ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না, নষ্ট হচ্ছে, ছোট-বড় কোন অনুষ্ঠানই করা যায় না। ভবনের সামনের অংশ একেবারেই জরাজীর্ণ, পলেস্তরা খসে পড়ছে, দেয়ালগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে ।
কুমিল্লা টাউন হলে বহুতল আধুনিক মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর পরই একটি মহল ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে ক্ষোভের সাথে জানান এমপি বাহার। তিনি বলেন, কুমিল্লা “ ক্যু ” এই ষড়যন্তেৃর সাথে জড়িত।
টাউন হলে আধুনিক ভবন নির্মাণ নিয়ে কুমিল্লা সদর ৬ এর সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তীতুল্য ও জনপ্রিয় সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেববর্মণের কুমিল্লার বাড়িটি দীর্ঘ বছর মুরগির খামার করে রাখা হয়েছিল, আমি উদ্যোগ নিয়ে বাড়িটি উদ্ধার করে সংস্কার করার পর সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা নওয়াব, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর ইতিহাস পুনরুদ্ধার করে জাতীয় সংসদে দাবি জানিয়েছি নওয়াব ফয়জুন্নেসার জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত ও নওয়াব ফয়জুন্নেসার বাড়িটি পুরাকির্তী হিসেবে গ্রহন করা হয়েছে।
১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণীতে ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও রাখার দাবি উত্থাপনকারী ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাম বর্তমান প্রজন্ম ভুলে গিয়েছিল, কুমিল্লা স্টেডিয়াম ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে নাম করণ করা হয়েছে।
এ সমস্ত কাজগুলো করার সময় কুমিল্লা ও কুমিল্লার বাইরের কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। কুমিল্লার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রক্ষায় প্রতিদিন কাজ করছি।
এমপি বাহার বলেন, সাহিত্য ও সংগীত এবং ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের ‘ধূমকেতু’ নজরুলের বহু কীর্তির সাক্ষী উপমহাদেশের প্রাচীনতম নগর কুমিল্লা। বিশেষ করে কবির প্রেম, বিয়ে ও বিচ্ছেদসহ ব্যক্তিজীবনের দীর্ঘ দিনলিপির স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে কুমিল্লা ঘিরে। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের স্মৃতি সংরক্ষণে কুমিল্লায় তৈরি হয়েছে নজরুল ইন্সটিউট, কুমিল্লায় কবির সকল স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেখান থেকে বর্তমান প্রজন্ম কবি নজরুলের কর্মময় জীবন নিয়ে গবেষণ করছে।
জরাজীর্ণ কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার করে ব্যাপকভাবে সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এমপি বাহার বলেন, কুমিল্লাকে নিয়ে কেউ ভাবে না, ষড়যন্ত্রের কারণে কুমিল্লা অনেক পিছিয়ে গেছে, কুমিল্লা ফ্লাইওভার করার সময় অনেকে বাধা দিয়েছে সমালোচনা করেছে।
কুমিল্লা উন্নয়নের বিষয়ে কাজ শুরু করলে একটি গ্রুপ বিরোধিতা করে, এমপি বাহার জানান, জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় ১৮৯৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, বর্তমানে কলেজের পুরাতন টিনসেড ঘরগুলো জরাজীর্ণ, ভেঙ্গে গেছে।
তিনি জানান, ভিক্টোরিয়া কলেজে উন্নয়নের জন্য মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, তাহলে কি ঐ ভাঙ্গা ঘরগুলোর স্থানে নতুন ভবন তৈরি হবে না। কুমিল্লার সকল সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুশীল সমাজ কুমিল্লা টাউন হলে নতুন ভবন নির্মাণের পক্ষে মতামত দিয়েছেন, কুমিল্লার মানুষ চায় এখানে একটি আধুনিক ভবন হোক কিছু ষড়যন্ত্রকারি ছাড়া।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন ত্রিপুরার আগরতলায় মহারাজ বীর চন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর নির্মিত টাউন হল ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে, বর্তমানে ভবনটি রবীন্দ্র শত বার্ষিকী ভবন নামে পরিচিত।