০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পিস্তল নিয়ে গ্রেফতার হওয়া রাসেল সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের কেউ নয়- সায়েম মজুমদার  নাঙ্গলকোটে মহিলাদল আদ্রা উওর ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার লক্ষে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন কুমিল্লায় ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে কিশোর কুমিল্লায় চাঁদাবাজবিরোধী অভিযানে হামলা, আহত ৩ পুলিশ সদস্য ইউসুফ মোল্লা টিপুকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে যৌথ বিবৃতি কুমিল্লায় যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল কুমিল্লা সদর দক্ষিণে পিস্তলসহ যুবদল কর্মী আটক দুর্গাপূজায় ৯ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হানিফ ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ২

মুরাদনগরে আধুনিকতার ছোঁয়া আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

  • তারিখ : ০৫:০৮:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১
  • / 491

আরিফ গাজী, মুরাদনগর :

কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সঙ্কটের মুখে পড়েছে এই মৃৎশিল্পটি। প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের ভিড়ে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প। তারপরও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য এখনও ধরে রাখার চেষ্টা অনেকেরই।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রামচন্দ্রপুর ও কামাল্লার পাল পাড়া এলাকায় এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত কয়েকশ’ মৃৎশিল্পীর পরিবার এখন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। এসব মাটির তৈরি খেলনা, হাঁড়ি-পাতিল জাতীয় জিনিসগুলো বিক্রি না হওয়ায় কুমারপাড়া এখন অনেকটা নীরব। তাদের হাতে নেই কোনো কাজ, মানবেতর জীবন যাপন করছে উপজেলার কয়েকশ’ মৃৎশিল্পীর পরিবার।

মৃৎশিল্পীরা জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র বের হওয়ার কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো চলে না। দীর্ঘ এক বছর ধরে কোনো ধরনের মেলা বা সামাজিক অনুষ্ঠান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই মৃৎশিল্পীরা।

আগে তেমন একটা প্লাস্টিক এবং অ্যালুমুনিয়াম জাতীয় পণ্য বাজারে না থাকায় মাটির তৈরি কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, ফুলের টপসহ নানা সামগ্রী বেশি বেশি বিক্রি হতো। কিন্তু এখন প্লাস্টিক-অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় পণ্যে বাজারে সয়লাব এবং তার দাম কম থাকায় প্রতি ঘরে ঘরে এসব সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে গেছে। যার কারণে মাটির তৈরি তৈজসপত্র এখন তেমন একটা বিক্রি হয় না। ফলে মৃৎশিল্পীরা পরিবার নিয়ে আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটচ্ছেন।

উপজেলার কামাল্লা গ্রামের সুমন পাল বলেন, বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও আমরা কিছুটা ধরে রেখেছি। কামাল্লাসহ আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল, কিন্তু বর্তমানে তেমন একটা চাহিদা নেই। আর মাটি থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম যে পরিমানে বাড়ছে কাজ করে আর লাভের মুখ দেখিনা।

কথা হয় মৃৎশিল্পী আসুতোশ পালের সাথে। তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো নাই, দিন পাল্টাচ্ছে। মানুষ আর আমাদের জিনিসপত্র তেমন একটা নেয় না। চাহিদা কম, তার উপর আবার সকল জিনিসের দাম বেশি।

মৃৎশিল্পী নমিতা রাণী পাল বলেন, বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। এছাড়া কোন কাজ জানি না। এতো কষ্ট করে সব তৈরি করি। তাতেও বাজারে তার কোন চাহিদা নেই। বিভিন্ন হাটে দোকান দিয়ে বেড়াই। যা বিক্রি হয়, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ছেলে- মেয়েদের নিয়ে কোন রকম দিন কাটাচ্ছি।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ জানান, অন্যান্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অনুদানের তালিকায় ইতিমধ্যে মৃৎশিল্পের নাম আনা হয়েছে। সমাজকল্যান অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তাদেরকে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যাতে তারা আধুনিকতার সাথে মিল রেখে শিল্প টিকিয়ে রাখতে পারে। আমরা দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিভিন্ন সময় শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করেছি। তারপরও যদি মৃৎশিল্পীদের মধ্যে কোনো দুস্থ ও অভাবগ্রস্ত পরিবার আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো।

শেয়ার করুন

মুরাদনগরে আধুনিকতার ছোঁয়া আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

তারিখ : ০৫:০৮:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১

আরিফ গাজী, মুরাদনগর :

কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সঙ্কটের মুখে পড়েছে এই মৃৎশিল্পটি। প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের ভিড়ে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প। তারপরও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য এখনও ধরে রাখার চেষ্টা অনেকেরই।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রামচন্দ্রপুর ও কামাল্লার পাল পাড়া এলাকায় এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত কয়েকশ’ মৃৎশিল্পীর পরিবার এখন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। এসব মাটির তৈরি খেলনা, হাঁড়ি-পাতিল জাতীয় জিনিসগুলো বিক্রি না হওয়ায় কুমারপাড়া এখন অনেকটা নীরব। তাদের হাতে নেই কোনো কাজ, মানবেতর জীবন যাপন করছে উপজেলার কয়েকশ’ মৃৎশিল্পীর পরিবার।

মৃৎশিল্পীরা জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র বের হওয়ার কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো চলে না। দীর্ঘ এক বছর ধরে কোনো ধরনের মেলা বা সামাজিক অনুষ্ঠান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই মৃৎশিল্পীরা।

আগে তেমন একটা প্লাস্টিক এবং অ্যালুমুনিয়াম জাতীয় পণ্য বাজারে না থাকায় মাটির তৈরি কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, ফুলের টপসহ নানা সামগ্রী বেশি বেশি বিক্রি হতো। কিন্তু এখন প্লাস্টিক-অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় পণ্যে বাজারে সয়লাব এবং তার দাম কম থাকায় প্রতি ঘরে ঘরে এসব সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে গেছে। যার কারণে মাটির তৈরি তৈজসপত্র এখন তেমন একটা বিক্রি হয় না। ফলে মৃৎশিল্পীরা পরিবার নিয়ে আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটচ্ছেন।

উপজেলার কামাল্লা গ্রামের সুমন পাল বলেন, বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও আমরা কিছুটা ধরে রেখেছি। কামাল্লাসহ আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল, কিন্তু বর্তমানে তেমন একটা চাহিদা নেই। আর মাটি থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম যে পরিমানে বাড়ছে কাজ করে আর লাভের মুখ দেখিনা।

কথা হয় মৃৎশিল্পী আসুতোশ পালের সাথে। তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো নাই, দিন পাল্টাচ্ছে। মানুষ আর আমাদের জিনিসপত্র তেমন একটা নেয় না। চাহিদা কম, তার উপর আবার সকল জিনিসের দাম বেশি।

মৃৎশিল্পী নমিতা রাণী পাল বলেন, বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। এছাড়া কোন কাজ জানি না। এতো কষ্ট করে সব তৈরি করি। তাতেও বাজারে তার কোন চাহিদা নেই। বিভিন্ন হাটে দোকান দিয়ে বেড়াই। যা বিক্রি হয়, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ছেলে- মেয়েদের নিয়ে কোন রকম দিন কাটাচ্ছি।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ জানান, অন্যান্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অনুদানের তালিকায় ইতিমধ্যে মৃৎশিল্পের নাম আনা হয়েছে। সমাজকল্যান অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তাদেরকে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যাতে তারা আধুনিকতার সাথে মিল রেখে শিল্প টিকিয়ে রাখতে পারে। আমরা দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিভিন্ন সময় শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করেছি। তারপরও যদি মৃৎশিল্পীদের মধ্যে কোনো দুস্থ ও অভাবগ্রস্ত পরিবার আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো।