ওমানে কুমিল্লার প্রবাসীর ঝুলানো লাশ উদ্ধার, পরিবারের দাবী হত্যা

মো.জাকির হোসেন :

জীবিকার প্রয়োজনে প্রবাসে ৮ বছর কাটানো দুলাল (৩৭)’র আর দেশে ফেরা হলোনা। গত ৮ নভেম্বর ওমানের ইবরাতে তার কক্ষের বাইরে মাটিতে পা লাগানো অবস্থায় গলায় ফাঁসলাগানো নিথর দেহ পুলিশ উদ্ধার করেছে। পরিবারের দাবী আতœহত্যা হলে লাশ ঝুলানো থাকতো। এভাবে কেউ নিজ থেকে ফাঁস দিতে পারেনা। তার সঞ্চিত অর্থের লোভে কেউ হত্যা করে এভাবে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। তবে মালিক পুলিশের উদ্বৃতি দিয়ে জানায় সে আতœহত্যা করেছে। এঅবস্থায় পরিবারের সদস্যরা পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছেন প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের।

নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়,জেলার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের মোকাম গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে দুলাল ২০১২ সালের শেষ দিকে জীবিকার প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে যায়। সেখানে আল মোবারক নামের একটি কোম্পানীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। কোম্পানীটি ওমানের সালালা শহরে অবস্থিত। তবে এর শ্রমিকরা থাকতো ইবরা নামের অন্য একটি শহরে। সেখানে একটি কক্ষে দুলালসহ ৮ জন বাঙ্গালী বসবাস করতো।

যখন যেখানে যে কাজের প্রয়োজনে কোম্পানী তাদের পুরো ওমানের বিভিন্ন শহরে পাঠাতো। সাম্প্রতিক সময়ে করোনার প্রভাবে তারা ৮ জনেই একই কক্ষে আইসোলেশনে ছিল। দুলালের সহকর্মী কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বাতাইছড়ি এলাকার আবুল কালাম মোবাইল ফোনে জানান, প্রতি দিনের মতো গত ৮ নভেম্বর দুপুর ১ টায় (ওমান সময়) আমরা সবাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যাই। কিছু সময় পরে পাশে থাকা এক নাইজেরিয়ান দেখে চিৎকার করলে আমরা বাইরে গিয়ে দেখি দুলালের লাশ কক্ষের বাইরের জানালার পাইপের সাথে গামছা দিয়ে ঝুলানো। তবে তার পা মাটিতে লাগানো ছিল।

তিনি আরো বলেন,৫ মিনিটের মধ্যেই কোম্পানীর লোক মারফত পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ দুলালের কক্ষের বাকী ৭ জন বাংলাদেশী ও পাশের একটি কক্ষের ৪ পাকিস্তানীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একই সময় প্রথম দেখা নাইজেরিয়ান ও কোম্পানীর একজন সুপার ভাইজারকে থানায় নিয়ে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ,স্বাক্ষর ও আকামা জব্দ রেখে ছেড়ে দেয়।

তিনি আরো বলেন,দুলাল খুবই ভালো ছিলো,কারো সাথে কোন ঝগড়া করে নাই কখনো। নিহত দুলালের বড় ভাই আওয়াল হোসেন জানান,পরিবারে তারা বাবা-মা এবং ৪ ভাই। অভাব ছিলনা পরিবারে। সেজন্য দেশে টাকা পাঠানোর প্রয়োজনীয়তাও তেমন ছিলনা। ফলে দুলাল ৮ বছরের সমস্ত সঞ্চিত অর্থ সেখানেই রেখেছিল। সম্প্রতি সে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানিয়েছিল আগামী এক মাসের মধ্যে সে দেশে আসবে। তার মৃত্যুর পর টাকা-পয়সার বিষয়টি আড়াল হয়ে গেছে। দুলাল ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। সিগারেট পান করতো না। এ অবস্থায় ৮ বছরের রোজগারের অর্থ নিয়েও পরিবারের সদস্যদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন,আমার ভাইকে অর্থের লোভেই কেউ হত্যা করতে পারে। তিনি আরো বলেন,যেভাবে লাশের পা মাটিতে লেগে আছে তাতে একটি মানুষ ফাঁসিতে না ঝুলে মরতে পারেনা। কেউ তাকে মেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝৃুলিয়ে রেখেছে। তিনি জানান,ঘটনার পর সেখানকার কোম্পানীর মালিকের সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন,পুলিশ তাকে জানিয়েছে দুলাল আতœহত্যা করেছে। তবে কেন সে আতœহত্যা করেছে সেটা সে জানে না। মালিক আরো বলেন,যত দ্রুত সম্ভব সে দুলালের লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।

এদিকে নিহতের বড় ভাই আওয়ালসহ তার বাবা ফরিদ মিয়ার দাবী, প্রতি বছর দু’ঈদে সে পরিবারের কাছে কিছু টাকা পাঠাতো। বাকী সব টাকাই সেখানে সঞ্চয় রাখতো। এ অবস্থায় টাকার লোভে তার কক্ষ বা পাশের কোন কক্ষের কেউ দুলালকে হত্যা করে লাশ ঝুঁলিয়ে রেখেছে। পরিবারের পিতা,ভাই পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে ওমানের বাংলাদেশী দুতাবাসের সহযোগীতায় সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দুলালের হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ যত দ্রুত সম্ভব লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবী করছেন।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!