লাকসাম প্রতিনিধি: কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ধর্ষিতা ভাতিজির গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করে চাচার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। নাঙ্গলকোটের বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের হেসিয়ারা পূর্বপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষক চাচা সোহেল (৪৫) হেসিয়ারা গ্রামের আবদুল মন্নানের ছেলে। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস.আই) আখতার হোসেন ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলে ধর্ষক চাচা সোহেলের সম্পৃক্ততা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্রুত মামলার চার্জশীট দ্রুত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, নাঙ্গলকোটের বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের হেসিয়ারা পূর্বপাড়ার আপন চাচা সোহেল (৪৫) তার কিশোরী ভাতিজিকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে (১৪) ধর্ষণের পর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের উদ্যোগে গত ১৩ জুন কিশোরীর বাবা তার আপন ভাই ধর্ষক সোহেলকে (৪৫) আসামী করে মামলা করেন। পরদিন ১৪ জুন পুলিশ আসামি ধর্ষক সোহেলকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে। ওই কিশোরী তার চাচা সোহেলকে দায়ী করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিশোরীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
গত জুন মাসের শেষ দিকে সিজারের মাধ্যমে ওই কিশোরী মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়। পরে নাঙ্গলকোট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর মধ্যস্থতায় কিশোরীর মেয়ে সন্তানটিকে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে এক নিঃসন্তান দম্পত্তির নিকট দত্তক দেয়া হয়। সন্তানটিকে দত্তক দেয়ার শর্ত ছিল, ডিএনএ পরীক্ষাসহ মামলার তদন্তের স্বার্থে যে কোন সময় সন্তানটিকে হাজির করতে হবে। পরে কিশোরীর সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়।
পুলিশ ধর্ষক চাচা সোহেলকে জেলে প্রেরণের এক মাসের মধ্যে গত ১৪ জুলাই সোহেল জামিনে মুক্ত হয়।
এদিকে বাবা আবদুল মন্নান তার ধর্ষক ছেলের বিরুদ্ধে মামলা তুলে না নিলে বড় ছেলে ও ধর্ষিতা কিশোরীর বাবাকে সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করাসহ ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে আসছিল। অভিযোগ রয়েছে, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির কথা না ভেবে এ কাজে প্রতিবেশীরাও ওই বৃদ্ধের সঙ্গে হাত মেলায় এবং কিশোরীর বাবাকে আপোসের জন্য চাপ দিতে থাকে।
কিশোরীর বাবা ভিটেমাটিসহ অন্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে তার পিতা আবদুল মান্নান, বোন রেখা আক্তার, মামা ইমাম হোসেনসহ আত্মীয়স্বজনের চাপের মুখে ধর্ষক ভাই সোহেলের জামিনের জন্য কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করে।
ধর্ষক সোহেল কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তার বাবা আবদুল মান্নান, মামা ইমাম হোসেন, বোন রেখা আক্তারসহ কতিপয় অতিউৎসাহী আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় গত ১৭ জুলাই ধর্ষক সোহলেকে ফুলের মালা পড়িয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহকারে রাজসিকভাবে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ধর্ষক সোহেল গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর আত্মীয়স্বজনের জন্য ভুরিভোজের আয়োজন করেন। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ধর্ষক সোহেলকে ফুলের মালা পরিয়ে মোটরশোভাযাত্রা সহকারে বাড়ি নেওয়ার ছবি ও ভিডিও গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি আদালতের নজর এলে জামিনের ১৫দিন পর আদালতের বিচারক ধর্ষক সোহেলকে আদালতে হাজির হতে বলেন। সোহেল আদালতে হাজির হলে বিচারক তার জামিন বাতিল করে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
এদিকে, চাচার ধর্ষণের শিকার হয়ে কিশোরী কন্যা সন্তানের মা হওয়ার ঘটনায় সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার হাতে এসে পৌঁছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাঙ্গলকোট থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) আখতার হোসেন কিশোরীর ভাইকে থানায় ঢেকে নিয়ে তার বোনের সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল তার চাচার সাথে মিলে যাওয়ার বিষয়টি জানান।
এ ব্যাপারে এসআই আখতার হোসেন বলেন, চাচাকে অভিযুক্ত করে আদালতে দ্রুত মামলার চার্জশীট প্রদান করা হবে।
বিডি প্রতিদিন