মো. জাকির হোসেন :
পরকীয়ার জের ধরে স্বামীর সাথে অভিমান করে দুই সন্তানের জননীর বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। শনিবার রাত ৩ টায় কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
নিহতের নাম খায়রুন নাহার ঝুনু (৪০)। তার স্বামীর নাম আলহাজ্ব মোঃ শাহ আলম। আত্মহত্যার ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় লাশ উদ্ধার করি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরসহ অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইননানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।
নিহত খায়রুন নাহার ঝুনুর দুই সন্তানের মধ্য বড় মেয়ে হাফসা জাহান সামিয়া (১৬)। সে ইস্পাহানী স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর ছোট ছেলে আলামিন সিয়াম (১৪) ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী।
নিহত খায়রুন নাহারের বড় মেয়ে সামিয়া বলেন, গত তিন বছর আগে আমার বাবা শাহআলম প্রতিবেশী লাকি আক্তার পাখির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রায়ই আমার বাবা আমার মায়ের সাথে দূর্ব্যবহার করতো।
এছাড়াও গত ১৪ জুন কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকায় একটি বাসায় ওই মহিলা ও আমার বাবা আছে এমন খবরে আমার মা ওই বাসায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। ওইদিন লাকি আক্তার পাখির স্বজনরা আমার মাকে বেদম প্রহার করে।
এ ঘটনার ৩ দিন পর আমার মা গত ১৭ জুন কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন সেলে একটি অভিযোগ দায়ের করে।
গতকাল রবিবার রাতে আমার আমার মা আমার বাবাকে বলে, হয় আমার সাথে না হয় ওই মহিলার সাথে থাকো। এ নিয়ে তর্কাতর্কির মাঝে আমার আম্মা রাত দেড়টায় গোপনে বিষপান করে। পরে আমি বিষয়টি টের পেয়ে যাই। তখন আমার মা বলে তোমরা আমাকে মাফ করে দিও। পরে আমার আব্বু আম্মাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেয়ার পথে আম্মা মারা যায়।
আমার মা মারা যাওয়ার জন্য ওই মহিলা লাকি আক্তার পাখি দায়ী। আমি তার বিচার চাই।কারন আমার বাবা তাকে ছেড়ে আসতে চাইলেও ওই মহিলা আমার বাবাকে ব্যাক্ল মেইল করে। যার কারনে ওই মহিলাকে ছেড়ে আসতে পারে নি আমার বাবা।
স্থানীয় সমাজসেবক রফিকুল ইসলাম বলেন, শাহ আলমের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে তার স্ত্রী খায়রুন নাহার অভিযোগ করে। এ নিয়ে শালিস দরবার করে কোন সুরাহা হয় নি। আমরাও চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হউক।
নিহতের বড় বোন মোমেনা আক্তার বলেন, ওই মহিলার কারনে আমার বোনের সাংসারিক জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়। আমরা বেশ কয়েকবার বোন জামাই শাহআলমকে বুঝিয়েছি। শাহআলম আমাদেরকে বলে ওই মহিলার সাথে আর সম্পর্ক থাকবে না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তবে গতকাল রোববার রাতে আমার বোনের মেয়ে ফোনে জানায়, আমার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করে। আমরা সকালে এসে বাড়ির উঠানে লাশ দেখতে পাই।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে লাকি আক্তার পাখি জানান, আমাদের সম্পর্ক সাড়ে ৩ বছর ধরে। গত ২০২০ সালের শেষের দিকে আমরা আইন সম্মতভাবে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকে আমি আমার বাবার বাড়ীতে অবস্থান করি। আমার স্বামী মাঝে মাঝে আমার বাড়ীতে আসতো। তবে কখনো আমি তাকে তার বাড়ী নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করি নি।
আপনি কেন একজন বিবাহিত পুরুষকে আবার বিয়ে করার জন্য আগ্রহী হলেন এমন প্রশ্নে লাকি আক্তার পাখি বলেন, পাঁচ বছর আগে আমার পূর্বের স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়। কারন আমার স্বামী নেশাগ্রস্ত ছিলো। আমার দুই মেয়ে। একটা অবলম্বন দরকার। পাশাপাশি আমার স্বামী মোঃ শাহ আলম বলছে ইসলাম আইন অনুযায়ী ভরণপোষণ দিতে পারলে ৪ বিয়ে জায়েজ আছে। তাই আমিও রাজি হই।