কুমিল্লায় হাসপাতালে সন্তানের সেবা না পাওয়ার খবরে পিতার মৃত্যু

মো.জাকির হোসেন :
কুমিল্লার বুড়িচংয়ের মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই গ্রামের শাহ আলম(৫৫) নামে এক ডায়বেটিকস রোগী শনিবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য একাধিক হাসপাতালে নিয়ে গেলেও নানা কারণে কোন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাকে সেবা দিতে রাজি হয়নি। পরে নগরীর মুন নামের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসা সেবার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে শাহ আলম কোন হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়টি পরিবারে জানাজানি হলে তার বৃদ্ধ পিতা মোঃ আবদুল বারেক (৮০) রোববার ভোর সাড়ে ৪টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। শাহ আলম বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কোরপাই এলাকার মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন।

নিহত শাহ আলমের ছেলে শরীফ জানায়, ৬ জুন শনিবার রাত ১১ টায় আব্বার(শাহ আলম) শরীর খারাপ হলে আমরা তাকে প্রথমে স্থানীয় ইষ্টার্ন মেডিকেল কলেজ নামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিলে তাকে শুধু স্যালাইন দিয়ে এক ঘন্টা রেখে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলে। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিলে সেখানে এক্স-রে করানোর কথা বলে এবং করোনা ছাড়া অন্য কোন রোগী রাখে না বলে জানায়।

এসময় তাকে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় কুমিল্লা ডায়বেটিকস হাসপাতালে নেয়া হলে তারা আইসিউতে নিতে হবে বলে পাশ্ববর্তী মুন হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে নেয়ার পরও আব্বাকে বাঁচাতে পারিনি। রাত দুইটা থেকে ৬টা পর্যন্ত আমরা এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে খালি ছোটাছুটিই করেছি।

নিহত শাহ আলমের ভগ্নিপতি মোঃ রফিক জানান, শনিবার রাতে শাহ আলমের শরীর হঠাৎ করে অসুস্থ হয়। এসময় তার দুই ছেলে শরীফ-আরিফ তাকে স্থানীয় কাবিলা এলাকার ইষ্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে স্যালাইন দিয়ে কুমিল্লা শহরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে সেখানেও রাখা হয় নি শাহ আলম ভাইকে, পাঠানো হয় কুমিল্লা ডায়বেটিকস হাসপাতালে।

ওই হাসপাতালেও তাকে না রাখা হলে পরে তাকে নেয়া হয় নগরীর ঝাউতলা এলাকার মুন হাসপাতালে। পরবর্তীতে সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার আগেই সকাল ৬ টায় মারা যান শাহ আলম।

মোঃ রফিক আরো জানান, শাহ আলমের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন কিছু আমরা বুঝতে পারি নাই। এছাড়া তার জ্বর, সর্দি, কাশি এমন ধরনের কোন লক্ষণ ছিলো না। শাহ আলমের চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার বিষয়টি পরিবারে জানাজানি হলে আমার শ্বশুর আবদুল বারেক ভোর সাড়ে ৪টায় মারা যান। তবে আমরা কোন হাসপাতালে চিকিৎসা পাইনি।

একই বাড়ির শাহ আলামেরই আরেক ভগ্নিপতি সুন্দর আলী জানান, শাহ আলমকে কয়েকটা হাসপাতালে নেয়া হলো। তাকে সামান্যতম চিকিৎসা দেয়া হলো না। বিনা চিকিৎসায় শাহ আলম মারা যায়। সন্তানের চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার খবরে আমার শ্বশুর মোঃ আবদুল বারেকও মারা যান।

বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ মীর হোসেন মিঠু জানান, এটা খুবই দুঃখজনক যে শাহ আলম কোথাও চিকিৎসা পাননি। যেহেতু কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন আইসোলেশনের ব্যবস্থা আছে, তার যদি করোনাও হত তাহলেও তাকে চিকিৎসা দেয়ার কথা ছিলো। আর করোনার লক্ষণ উপসর্গ না থাকলে অন্য হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেয়ার কথা ছিলো।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভাবে কেউ ফিরে যাওয়ার কথা নয়। তবে যদি আইসিইউতে নেয়ার মত রোগী হয়, তাহলে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলা হয়ে থাকতে পারে। কারণ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সবগুলো আইসিইউ এখন শুধুমাত্র করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!