কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে টিআই ও সার্জেন্টের রমরমা টোকেন বাণিজ্য

মাজহারুল ইসলাম বাপ্পি :

কুমিল্লায় অভিনব কায়দায় চলছে পুলিশের রমরমা টোকেন বাণিজ্য। পট পরিবর্তনের পর কিছু দিন থেমে থাকলেও নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের এ টোকেন বাণিজ্য। এর আগে অর্থের বিনিময়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশার সামনের গ্লাসে টোকেন স্টিকার লাগিয়ে পরিবহণ চলাচল করত। তবে এখন টোকেন বাণিজ্যের কৌশল পালটেছে পুলিশ। ৫ আগস্টের পর থেকে টোকেনে মোবাইল নাম্বার ও গোপন চিহ্ন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর নাম দেয়া হয়েছে টিআই-সার্জেন্ট টোকেন। স্টিকার বাবদ সরাসরি কিংবা নিজস্ব দালালের মাধ্যমে আগে নেওয়া হতো ৬০০ টাকা এখন তা বৃদ্ধি করে ১০০০ থেকে ১২০০ পর্যন্ত করা হয়েছে।

কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তোফায়েল ও সার্জেন্ট তারেকসহ কয়েকজন অসাধু ট্রাফিক পুলিশের নেতৃতে এ টোকেন বাণিজ্য পরিচালনা করা হয়। মাসিক টোকেন না নিলে সার্জেন্ট তারেক ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল এমরানকে দিয়ে অনটেষ্ট সিএনজি অটোরিক্সা আটক করে রাখা হয়। এদের কিছুক্ষণ আটকে রেখে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিতে হয় সিএনজি অটোরিক্সা। নিরুপায় হয়ে তাদের এই টোকেনের নামে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে চালকরা।

এটি কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড চৌরাস্তার প্রায় প্রতিদিনের চিত্র। টিআই ও সার্জেন্টদের টোকেনের চাঁদার ভাগ কনস্টেবল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন। পুলিশের বড় কর্তারা এ বাণিজ্যের কথা জানলেও পুলিশের টোকেন বানিজ্য ও চাঁদাবাজি বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার থেকে ব্যানার প্রতি ১০০০ টাকা করে মাসে দিতে হচ্ছে টিআইকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্টিকারের মতো একটি নাম্বার সম্বলিত টোকেন চালকদের দেয়া হয়। টহল বা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালে ওই টোকেন দেখালেই মেলে দ্রুত ছাড়ের সিগন্যাল। না হলে নানা অজুহাতে আটকানো হয় গাড়ি। মাঠপর্যায়ের কয়েকজন দালাল ও পুলিশের যোগসাজশে এ টোকেন বাণিজ্য চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তনে টোকেন বানিজ্যে দালালদেরও পরিবর্তন এসেছে। পতিত সরকারের আমলেও পুলিশের টোকেন বানিজ্য করে অনেক দালাল রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এখনও ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের পকেটে যাচ্ছে টোকেন ও চাঁদাবাজির লাখ লাখ টাকা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে টোকেন বাণিজ্যে ভাটা পড়ে। মাঝখানে কিছুদিন পুলিশও ছিল নিষ্ক্রিয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার স্বরূপে ফিরেছেন টিআই’র নেতৃত্বে কিছু অসাধু সার্জেন্টরা।

সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘টিআই ও সার্জেন্ট স্যারের টোকেনে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে কান্দিরপাড় রোডে গাড়ি চালাচ্ছি। শুধু আমি নই, আমার মতো কয়েক’শ এর ওপর চালক এভাবে টাকা দিয়েই টোকেন নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এই টোকেন থাকলে শহরের কোথাও সমস্যায় পড়তে হয় না।’আমি প্রতি মাসে টোকেন বাবত এক হাজার টাকা চাঁদা দেই।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিএনজি চালক জানান, কুমিল্লায় অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের সুযোগ করে দিতে যখন পুলিশ অবৈধভাবে টোকেন বাণিজ্যে নামে, তখন গাড়ি প্রতি মাসে ৬০০ টাকায় নেওয়া হতো। ৫ আগস্টের পর টোকেনের দাম চলে যায় গাড়িপ্রতি এক হাজার টাকায়। নভেম্বর থেকে থেকে নতুন কৌশলে স্টিকার চালু হয়।
সার্জেন্ট তারেকের নিকট টোকেন বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন কিছু অটো সিএনজি অটোরিক্সা চললেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকি।

এ বিষয়ে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় দায়িত্বে থাকা টিআই তোফায়েল বলেন, আমি কোন প্রকার টোকেন বানিজ্যের সাথে জড়িত না। পুলিশের কেউ জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
error: ধন্যবাদ!