চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মোসা: দিলোয়ারা আক্তার শিউলি (২৫) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ।
নিহত দিলোয়ারা উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর পূর্বপাড়ার মৃত মো: ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো: হেলাল উদ্দীনের স্ত্রী ও একই ইউনিয়নের কেন্দুয়া গ্রামের মো. ফয়েজ আহম্মদ ভূঁইয়ার একমাত্র মেয়ে। মোসা: হাফসা আক্তার (৩) নামে নিহতের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
এঘটনায় নিহতের পিতা ফয়েজ আহম্মদ বাদী হয়ে দিলোয়ারার স্বামী হেলাল উদ্দীন, হেলালের ভাই মফিজুর রহমান, মা মমেনা বেগম ও ভাবি ঝর্ণা বেগমের নাম উল্লেখ করে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
দিলোয়ারার পরিবার ও থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই হেলাল উদ্দীন-দিলোয়ারা দম্পতির মাঝে পারিবারিক কলহ চলে আসছিলো। পারিবারিক কলহের এসব ঘটনায় স্থানীয়ভাবে কয়েকদফা শালিস বৈঠকে বসে তাদের উভয়কে মিলিয়ে দেয়া হয়। নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে সংসারও করছিল দিলোয়ারা। গত কিছুদিন পূর্বে দিলোয়ারার স্বামী হেলাল উদ্দীন সিএনজি কেনার কথা বলে দিলোয়ারাকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতক বাবদ তিন লাখ টাকা এনে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে মেয়ের অনুরোধে তার সুখের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে ধার-দেনা করে ১ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদান করে তার বাবা ফয়েজ আহম্মদ।
উক্ত টাকা নেয়ার কয়েকদিন পর মামলায় উল্লেখিত অন্যান্য বিবাদীদের (মফিজ, মমেনা ও ঝর্ণা) নির্দেশ ও কু-পরামর্শে ১নং বিবাদী (হেলাল) প্রতিনিয়ত দিলোয়ারাকে আরো ১ লাখ টাকা (যৌতুক) নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। বিবাদীদের দাবীকৃত যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজসে দিলোয়ারাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। দিলোয়ারা বিবাদীদের এমন কর্মকান্ডের বিষয়টি তার বাবাকে অবহিত করলে তিনি স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে জানিয়ে শালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন।
শালিশ বৈঠকে উপস্থিত লোকজনের সামনে বিবাদীগণ ভবিষ্যতে কোন ধরণের অত্যাচার নির্যাতন করবেনা মর্মে মৌখিক অঙ্গিকার প্রদান করলেও বিবাদীগণ অঙ্গীকারনামার শর্ত ভঙ্গ করে গত রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাত আনুমানিক নয় ঘটিকার সময় তাদের দাবীকৃত যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করতে থাকে। বিবাদীগণ লাঠি দ্বারা পিটিয়ে, এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা ও কালো দাগযুক্ত জখম করে। ১নং বিবাদী ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার পেছনে কাঠের শক্ত লাঠি দ্বারা আঘাত করে গুরুতর থেতলানো জখম করে। বিবাদীদের কবল থেকে ভিকটিম আত্মরক্ষার জন্য চিৎকার করলে ১নং বিবাদী ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরে।
উক্ত ঘটনার বিষয়টি ওইদিন রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার সময় দিলোয়ারা তার বাবাকে মোবাইলে কল করে জানায়। এসময় তিনি হেলাল উদ্দীনের মোবাইলে কল করলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পান। পরে তিনি তার মেয়েকে শান্তনা দিয়ে ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেন। পরদিন (২৬ অক্টোবর) সকালে তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পান।
এবিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো: কামাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বসতঘরের ভুতুরের সাথে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই। এঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী ও তার পরিবার পলাতক রয়েছে। পরে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে থানায় নিয়ে আসি। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে। এঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।