বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য বান্দরবানের বগা লেকের পানির রঙ হঠাৎ করেই ঘোলা হওয়ার পর অনেকটা হলুদ হয়ে গেছে। লেকের পানির রঙ হঠাৎ বদলে যাওয়ায় ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, হ্রদটির পানি ঘোলাটে দেখাচ্ছে। যদিও এই হ্রদটির নীল রঙের পানি দেখে অভ্যস্ত পর্যটকরা। খবর বিবিসি বাংলার। স্থানীয়রা জানায়, ঘটনাটি প্রচার পাওয়ার পর বদলে যাওয়া বগা লেক দেখতে আনোগোনা বেড়েছে পর্যটকদের। আর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিস্তর আলোচনা ও স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা ধরনের মিথ ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে জানা গেছে, প্রতিবছর শীতকালে জানুয়ারি মাসের দিকে লেকের পানি আপনা-আপনি ঘোলা হতে থাকে। ৩-৪ বছর পর পর পানি ঘোলা হতে হতে প্রায় হলুদ হয়ে যায়। এবারও তেমনটিই ঘটেছে। পানির এই ঘোলাটে ভাব মাসখানেক স্থায়ী হবার পর তা আবার ধীরে ধীরে ধূসর এবং পরে স্বচ্ছ নীল রঙ ধারণ করে।
গেল বগা লেকের পানির রঙ ঘোলা হওয়ার কারণ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিস নাহিদ সুলতানা। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ বা জলবায়ুর কারণেই লেকটির পানির রঙ পরিবর্তন হয়।
তিনি বলেন, বগা লেক যেহেতু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে কিছুটা উপরে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এবং এটি একটি প্রাকৃতিক হ্রদ তাই এর পানির বৈশিষ্ট্যও আলাদা। তিনি আরও বলেন, পানির রঙ যেহেতু বছরের নির্দিষ্ট একটি সময় পরিবর্তিত হয় তার মানে হলো সেখানকার পানির কেমিস্ট্রি অর্থাৎ পানিতে থাকা নানা ধরনের উপাদান ওই সময়ে পরিবর্তিত হয়ে যায়। তবে এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বগা লেকের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, শীতকালে বগা লেকের পানি ঘোলা হওয়ার দুটি কারণ থাকতে পারে।
প্রথমত, বগা লেকের পানিতে যে সমস্ত অ্যালগি বা ক্ষুদ্রাণু-ক্ষুদ্র প্রাণী ও উদ্ভিদ আছে সেগুলো হয় বছরের এ সময় এসে মারা যায় কিংবা তাদের গায়ের রঙ পরিবর্তিত হয়। আর এটি হয়ে থাকে বাইরের তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে।
তিনি মনে করেন, এসব ক্ষুদ্র প্রাণী ও উদ্ভিদ মারা গেলে সেগুলো পঁচে কাদায় পরিণত হবে যার কারণে পানি ঘোলা হবে। আর পানিতে যদি গন্ধ থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে ক্ষুদ্র প্রাণী ও উদ্ভিদ মারা যাওয়ার কারণে এটি হয়েছে।