আরিফ গাজী :
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের ১৪৩ নম্বর রামপুর (দঃ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবনের সংকটে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে হিন্দুদের আখড়ায় চলছে পাঠদান। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের ১৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, দেশ বিভাগের আগে ১৯৪০ সালে এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি কক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অধীনে বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয় চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ভবন। যা ২০১৩ সালে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়লে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
পরিত্যক্ত ঘোষণার পর ৪১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে খুব বিপাকে পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে টানা দুই বছর বিদ্যালয়ের পাশে থাকা হিন্দুদের আখড়ায় (সমাধীস্থল) খোলা আকাশের নিচে চলে পাঠদান। ২০১৫ সালে স্থানীয়দের সহযোগীতায় ওই আখড়ায় টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুইটি কক্ষে ও খোলা আকাশের নিচে ৭ বছর ধরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিত্রা পাল বলেন, আমি ২০০৭ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করি। ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষনার পর থেকে নতুন ভবনের জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত যা যা করণীয় আমি তাই করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো কোনো ভবন পাইনি। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর হার কমে যাচ্ছে। ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার সময় যে শিক্ষার্থী ছিল বর্তমানে তার অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। খুব দ্রুত যদি এখানে নতুন ভবন দেয়া না হয়, তাহলে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালানোটাই মুশকিল হয়ে যাবে।
মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আকতার জানান, আমাদের দীর্ঘদিনের একটা চাহিদা ছিল এখানে নতুন ভবন করার। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয় থেকে যে বার্ষিক জরিপ শুমারি পূরণ করা হয়। না বুঝে আমাদের প্রধান শিক্ষকগণ সেখানে তথ্য দিয়ে আসতেছিলো যে বিদ্যালয়ের ভবন আছে এবং ৪টি শ্রেণী কক্ষ আছে। আর যে শিক্ষার্থী সংখ্যা দেখানো হয়েছে সেই অনুপাতে শ্রেণিকক্ষ যথেষ্ট তাই হয়তো এতোদিন নতুন ভবন আসেনি। এটা মূলত মন্তব্যের কলামে লেখা উচিত ছিল যে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে দীর্ঘ ৯ বছর আগে। তবে আমি যোগদানের পর সেই তথ্যটি পরিবর্তন করে ভবন পরিত্যক্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। আশা করি নতুন ভবন আসলে এটি হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলাউদ্দিন ভূইয়া জনী বলেন, ভবন সংকটের কারণে ওই বিদ্যালয় থেকে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেন না কমে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গেলে প্রথমেই যেটা জরুরি হয়ে পরেছে সেটা হচ্ছে একটি নতুন ভবন। এখানে খুব দ্রুতই যেন একটি নতুন ভবন দেয়া হয় সেজন্য আমি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করবো।