মো.জাকির হোসেন :
কুমিল্লার ব্রাহ্মনপাড়ার টাকই গ্রামের শাহআলম নামের এক প্রবাসীকে অপহরণ করে প্রাননাশের হুমকী দিয়ে ৪ দিন আটকে রেখে পরিবারের কাছ থেকে অপহরনকারী চক্রের সদস্যরা বিকাশের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে অবশেষে মুক্তি দিয়েছে। ঘটনার সময়কাল ১২ থেকে ১৬ আগষ্ট মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরের।
অপহৃতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, জেলার ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়নের টাকই গ্রামের মৃত মফিজুল ইসলাম ডিলার ও মাতা আনবের নেছা’র পুত্র শাহআলম পরিবারের অভাব ঘুচাতে ২০১০ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে যায়। সেখানে একটি দোকানে কাজ করে আসছিল।
গত ১২ আগষ্ট বাসায় থাকা অবস্থায় ৫/৭ জনের একদল অপহরণকারী তার কক্ষে প্রবেশ করে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। এসময় তাকে প্রাননাশের হুমকী দিয়ে ওই একই তারিখে (১২ আগষ্ট) প্রথমে তার বন্ধু টাকই উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিম উদ্দিনের কাছে মোবাইল ফোন করে সমস্যান কথা বলে ৩ লাখ টাকা সহায়তা চায়।
বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের কাছে জানাতেও নিষেধ করে। তখন জসিম উদ্দিন শাহআলমের দেওয়া ০১৭৬৫২০৯০৭২, ০১৭৫৮১৫৭৪৯৩, ০১৭২৬৩৯২৬১৩, ০১৯০৯০৩৪২৪২, ০১৭৬৮১৯৭২৬৪, ০১৭৫৭৮০৯২৫৭ এই ৬টি নাম্বারে ২ লাখ ৫৬ হাজার,১৪ আগষ্ট আবারো জসিম আরো ২০ হাজার ৪’শ ৬০ টাকা সহ মোট ২ লাখ ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪’শ ৬০ টাকা প্রদান করে।
একইভাবে অপহরনকারী চক্র আটকে রেখে ১৩ আগষ্ট শাহআলমের মায়ের কাছ থেকে দু’লাখ,মামা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের দ্যূতিয়াপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের কাছ থেকে একাধিক বিকাশ নাম্বারে ২ লাখ ১০ হাজার ,১৪ আগষ্ট ওই একই ব্যক্তির কাছ থেকে ০১৯৪৩৭৯৫১৬৫, ০১৯১৯০৩৪২৪২ দুটি বিকাশ নাম্বারে ৮৪ হাজার ,১৫ আগষ্ট ওই মোবারকের কাছ থেকে আবারো ০১৭৫৭৮০৯২৫৭, ০১৭২৬৩৯২৬১৩ নাম্বারে আরো ১ লাখ, একইভাবে ১৫ আগষ্ট শাহআলমের ভাগনী বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের সুমি আক্তারের কাছ থেকে ১ লাখ এবং ১৬ আগষ্ট বিকেলে অপহৃতের ভাতিজা নাজমুলের কাছ থেকে ০১৭২৬৩৯২৬১৩, ০১৭৫৭৮০৯২৫৭ এই দুটি বিকাশ নাম্বারে করে আরো ১ লাখ টাকা সহ একাধিক বিকাশ নাম্বার এর মাধ্যমে অপহরনকারীরা প্রায় ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
অপহৃতের স্ত্রী নাছিমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ১৪ আগষ্ট সকালে আমার স্বামী শাহআলম মোবাইল ফোনে তার বন্দী থাকার কথা জানান। এসময় সে প্রানে বাঁচার আকুতি জানিয়ে বলেছিল আমাকে জীবনে দেখতে চাইলে আমি যেভাবে বলি সেভাবে টাকা পাঠিয়ে দিও। ফলে স্বামীর জীবন শঙ্কার কথা চিন্তা করে বিষয়টি কাউকে বলিনি।
পরবর্তিতে ১৬ আগষ্ট বিকেলে ভাতিজা নাজমুল ১ লাখ টাকা পাঠানোর পর রাতেই অপহরণকারীরা শাহআলমকে তার বাসার কাছে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ১৭ আগষ্ট সকালে জ্ঞান ফিরে আসলে সে মোবাইল ফোনে বন্দীদশার বিস্তারিত কথা জানান স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের।
এসময় তিনি জানান,অপহরণের আগে তাকে ইনজেকশন দিয়েছিল। এরপর সর্বদা তাকে ধারালো ছুরিসহ অন্যান অস্ত্র দিয়ে পাহাড়ায় রাখতো। পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার সময় অপহরনকারীরা কাছে থেকে নির্দেশনা দিত কথা বলার। স্ত্রী নাছিমা ও ভাতিজা মেহেদী আরো জানান,বিকাশে টাকা পাঠানোর পরপরই জহিরুল মির্জা নামের এক ব্যক্তি টাকা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতো শাহাালমের পরিবারকে। পরে তারা মালয়েশিয়ায় টাকা প্রদানের খবর পৌঁছে দিত।
মেহেদি জানান, জহিরুল মির্জা যে মোবাইল নাম্বারে তাদের সাথে কথা বলতো সেটা হচ্ছে ০১৭৫১৯১৭২৭০। যা অধিকাংশ সময় চালু থাকে। এই জহিরুল মির্জা রাজধানী ঢাকায় বসে মালয়েশিয়ায় অপরাধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও এই চক্রের বেশ ক’জন চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষাভাষী।