০৫:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ব্যবসায়ী দুলালকেখুন্তি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা ভাড়াটিয়া সুমি কুমিল্লার বেলতলীতে পিকআপ চাপায় পথচারী নিহত বিতর্কের মুখে সংসদের নির্বাচনী এলাকা সীমানা নির্ধারণ কারিগরি কমিটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান অপরাধী যে দলেরই হোক, কোনো ছাড় নেই- ওসি মোহাম্মদ সেলিম কুমিল্লা সদর দক্ষিণে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইয়ংস্টার সোশ্যাল অর্গানাইজেশন এর সদর দক্ষিন উপজেলার কমিটি গঠন নতুন পুরাতন বুঝি না,ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে-ডা. শফিকুর রহমান ছয় দফা দাবিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে হেনস্তা: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হানিফ গ্রেফতার

শিক্ষার্থীদের মনের কথা জানতে স্কুলে স্কুলে ‘ইউএনও বক্স’

  • তারিখ : ০১:১৮:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০
  • / 1116

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :
শিক্ষার্থীদের মনের কথা, বিভিন্ন সমস্যা জানতে ও সমাধান করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার উপজেলার স্কুলে স্কুলে ‘ইউএনও বক্স’ বসাতে শুরু করেছে।

এই বক্সে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ দিতে পারবেন। আর এটি খুলে সব অভিযোগ কিংবা পরামর্শ সরাসরি দেখবেন আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই। উপজেলার দুটি স্কুলে এটি পরীক্ষামূলকভাবে দেয়া হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন এই বক্সে অভিযোগ দিলে দ্রুত কাজ হবে। পরিবার ও শিক্ষকদের বলতে না পারা বিভিন্ন সমস্যা তারা অনায়াসে এই বক্সে লিখে দিতে পারবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিভিন্ন পরামর্শও এখানে দেয়া যাবে।

এ ব্যাপারে বুধবার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার জানান, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার মূলে ছিল ইভটিজিং। ভালো রেজাল্টের আশ্বাস দেখিয়ে যৌন হয়রানি ও প্রশ্নফাঁসের মতো অপরাধ।

তা ছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্লাস প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র্যা গিং– এসব সমস্যা সংক্রান্ত তথ্য সঠিক সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌঁছায় না।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা পরিবারের ভয়ে কিংবা শিক্ষকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে না পারার কারণে অনেক সময় চুপ করে থাকেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

এসব বিষয় মাথায় রেখে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাঠ ও স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটি করে ‘ইউএনও বক্স’ স্থাপন করে তালাবদ্ধ করে রাখার চিন্তা করেন। এর চাবি ইউএনও অথবা তার কোনো প্রতিনিধির কাছে থাকবে। এই বক্সটি সপ্তাহের একটি দিন খোলা হবে।

বক্সে কোনো অভিযোগ থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি বক্স বসানো হয়েছে।

এই ব্যাপারে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও অভিবাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বক্সটিকে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবেই দেখছেন। তারা মনে করেন পরিবার কিংবা শিক্ষকদের সঙ্গে বলতে না পারা অনেক সমস্যার কথাই তারা এই বক্সে লিখতে পারবে। এ ছাড়া ইভজিটিং, বখাটের উৎপাতসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে বলে মনে করছেন তারা।

রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সায়েদা খানম বুসরা জানান, অনেক সময় রাস্তায় আমাদের সঙ্গে অনেক অশোভন আচরণ করা হয়, যা আমরা পরিবার ও শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি না। এই বক্সটি হওয়াতে আমরা খুশি। কেননা এখন থেকে কোনো সমস্যা হলে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বলতে পারব। তবে সব ধরনের গোপনীয়তা যেন রক্ষা করা হয়।

নবম শ্রেণির ছাত্রী নূরে জান্নাত তোষা জানান, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। রাস্তাঘাটে কোনো ধারনের ডিস্টার্ব ফিল করলে এখানে জানানো যাবে। গার্লস স্কুলের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়।

অভিভাবক মো. সাইদুর মিয়া জানান, এই বক্সটি হওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি। কারণ যেকোনো সমস্যা আমরা সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানতে পারব। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি দেয়া হোক।

রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল আজাদ জানান, এই বক্সটি ইভটিজারদের জন্য হুমকি। শিক্ষার্থীদের মাঝে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। বাল্যবিবাহ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ হবে।
আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ‘ইউএনও বক্স’ বসানো খুবই প্রয়োজন। কেননা এই বক্সটি সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদারকি করবেন।

এই বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বুধবার সকালে যুগান্তরকে জানান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই ‘ইউএনও বক্স’ কাজে আসবে। সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিকে মনিটরিং করার কারণে এই বক্সটির ওপর সবার আস্থা তৈরি হবে।

নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্লাস প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্তি শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র্যা গিং– এসব সমস্যা কমে আসবে। প্রাথমিকভাবে এই বক্সটি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যেকোনোর পরামর্শও দেয়া যাবে এই বক্সে।

শেয়ার করুন

শিক্ষার্থীদের মনের কথা জানতে স্কুলে স্কুলে ‘ইউএনও বক্স’

তারিখ : ০১:১৮:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :
শিক্ষার্থীদের মনের কথা, বিভিন্ন সমস্যা জানতে ও সমাধান করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার উপজেলার স্কুলে স্কুলে ‘ইউএনও বক্স’ বসাতে শুরু করেছে।

এই বক্সে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ দিতে পারবেন। আর এটি খুলে সব অভিযোগ কিংবা পরামর্শ সরাসরি দেখবেন আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই। উপজেলার দুটি স্কুলে এটি পরীক্ষামূলকভাবে দেয়া হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন এই বক্সে অভিযোগ দিলে দ্রুত কাজ হবে। পরিবার ও শিক্ষকদের বলতে না পারা বিভিন্ন সমস্যা তারা অনায়াসে এই বক্সে লিখে দিতে পারবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিভিন্ন পরামর্শও এখানে দেয়া যাবে।

এ ব্যাপারে বুধবার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার জানান, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার মূলে ছিল ইভটিজিং। ভালো রেজাল্টের আশ্বাস দেখিয়ে যৌন হয়রানি ও প্রশ্নফাঁসের মতো অপরাধ।

তা ছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্লাস প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র্যা গিং– এসব সমস্যা সংক্রান্ত তথ্য সঠিক সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌঁছায় না।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা পরিবারের ভয়ে কিংবা শিক্ষকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে না পারার কারণে অনেক সময় চুপ করে থাকেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

এসব বিষয় মাথায় রেখে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাঠ ও স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটি করে ‘ইউএনও বক্স’ স্থাপন করে তালাবদ্ধ করে রাখার চিন্তা করেন। এর চাবি ইউএনও অথবা তার কোনো প্রতিনিধির কাছে থাকবে। এই বক্সটি সপ্তাহের একটি দিন খোলা হবে।

বক্সে কোনো অভিযোগ থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি বক্স বসানো হয়েছে।

এই ব্যাপারে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও অভিবাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বক্সটিকে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবেই দেখছেন। তারা মনে করেন পরিবার কিংবা শিক্ষকদের সঙ্গে বলতে না পারা অনেক সমস্যার কথাই তারা এই বক্সে লিখতে পারবে। এ ছাড়া ইভজিটিং, বখাটের উৎপাতসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে বলে মনে করছেন তারা।

রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সায়েদা খানম বুসরা জানান, অনেক সময় রাস্তায় আমাদের সঙ্গে অনেক অশোভন আচরণ করা হয়, যা আমরা পরিবার ও শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি না। এই বক্সটি হওয়াতে আমরা খুশি। কেননা এখন থেকে কোনো সমস্যা হলে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বলতে পারব। তবে সব ধরনের গোপনীয়তা যেন রক্ষা করা হয়।

নবম শ্রেণির ছাত্রী নূরে জান্নাত তোষা জানান, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। রাস্তাঘাটে কোনো ধারনের ডিস্টার্ব ফিল করলে এখানে জানানো যাবে। গার্লস স্কুলের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়।

অভিভাবক মো. সাইদুর মিয়া জানান, এই বক্সটি হওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি। কারণ যেকোনো সমস্যা আমরা সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানতে পারব। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি দেয়া হোক।

রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল আজাদ জানান, এই বক্সটি ইভটিজারদের জন্য হুমকি। শিক্ষার্থীদের মাঝে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। বাল্যবিবাহ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ হবে।
আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ‘ইউএনও বক্স’ বসানো খুবই প্রয়োজন। কেননা এই বক্সটি সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদারকি করবেন।

এই বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বুধবার সকালে যুগান্তরকে জানান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই ‘ইউএনও বক্স’ কাজে আসবে। সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিকে মনিটরিং করার কারণে এই বক্সটির ওপর সবার আস্থা তৈরি হবে।

নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্লাস প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্তি শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র্যা গিং– এসব সমস্যা কমে আসবে। প্রাথমিকভাবে এই বক্সটি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যেকোনোর পরামর্শও দেয়া যাবে এই বক্সে।