আকবর হোসেন :
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি বলেছেন, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে মিলেমিশে একসাথে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য এবং দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যেতে হবে৷ এই দেশটা আপনার- আমার সকলের। এই দেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের মানুষ বসবাস করে। সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বজায় রাখতে হবে৷ যারা সচেতন মানুষ। বিবেকবান মানুষ। দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা আছে, পরকাল এবং বর্তমান সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে। তাদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আপনারা সকলে সুন্দরভাবে মিলেমিশে বসবাস করবেন৷ এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের সাথে বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।
আজকে আমি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, ধর্মের প্রতি অনুরাগ, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালবাসা এবং তার মাধ্যমে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, সত্য বাস্তবায়ন করা এবং সৃজনশীলতা ও পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করার যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা তা আমি মনে করি বিবেকবান এবং নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব। আজকের এই বাংলাদেশ আমরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।
এ দেশের ইতিহাস ক্ষুধা-দারিদ্র্যতার ইতিহাস। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম এবং আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে, আয় -রোজগার বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের মাঝে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
গতকাল শনিবার কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার চাঁনগাঁও কোঁয়ার ইন্দ্রধাম বৌদ্ধ বিহারে থেরবাদী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ সাংঘিক সংগঠন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মাননীয় উপ- সংঘরাজ দর্শনবারিধি অধ্যাপক ধর্মরক্ষিত মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন৷ এসময় তিনি আরো বলেন, সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করলে, কারো মধ্যে কোন বিভেদ না থাকলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়। তাই আমি আজকের এই অনুষ্ঠানে সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানাবো, আমরা সবাই মিলেমিশে আমাদের প্রিয় দেশের জন্য কাজ করবো।
আমাদের দেশকে একটি একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত করব এবং তার সুফল যেন আমরা সবাই ভোগ করতে পারি। এর মধ্যে বেশকিছু ষড়যন্ত্র হয়, হবে এবং সবসময় হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য বহু লড়াই- সংগ্রাম মোকাবেলা করেছেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের জন্য তখনো ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ধর্মে- ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলোকে প্রতিহত করা প্রত্যেকটা বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্বটা আমরা যদি সঠিকভাবে পালন করি তাহলে আমরা সবাই ভালো থাকতে পারবো।
আমার নির্বাচনী এলাকা লাকসাম- মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। এই দুই উপজেলায় মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে থাকে এবং তাদের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন গড়ে তোলার জন্য আমাদের নেতৃবৃন্দকে আমার নির্দেশনা ছিলো এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে বলে আমি বিশ্বাস করি৷ আমাদের মেম্বার -চেয়ারম্যান, মেয়র-কাউন্সিলর, উপজেলার চেয়ারম্যান – ভাইস চেয়ারম্যান এবং আমাদের দলের নেতাকর্মীরা আমাদের এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য সবসময় আন্তরিক। তাদেরকে যখন যেই নির্দেশনা দেই তারা তা পালন করার চেষ্টা করে। আমাদের দুই উপজেলায় সকল ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে৷ কারো মধ্যে কোন বিভেদ নাই। আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতেও আমার নির্বাচনী এলাকায় সম্প্রীতির বন্ধন বজায় থাকবে।
সদ্য ২১শে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু মহামান্য সংঘরাজ শাসন শোভন ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমেদ, লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম সাইফুল আলম, লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান এড. ইউনুস ভূঁইয়া,লাকসাম পৌরসভা মেয়র অধ্যাপক মো. আবুল খায়ের, লাকসাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর ভাইস চেয়ারম্যান বাবু সুপ্ত ভুষন বড়ুয়া, কুমিল্লা বৌদ্ধ সমিতি ট্রাস্টি বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও সাধারণ সম্পাদক বাবু জ্যোতিষ সিংহ খোকন, চট্টগ্রাম কর আইনজীবি সমিতির প্রাক্তণ সভাপতি এড. এনায়েত উল্লাহ, লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মনোহগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত নাজিয়া হোসেন, কুমিল্লা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা ইফতেখার আলী, জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার নাসারুল্লাহ, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য এড. আবু তাহের, এড. তানজিনা আক্তার, লাকসাম পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাবারক উল্লাহ কায়েস, লাকসাম উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড. রফিকুল ইসলাম হিরা, বাকই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল আবুলসহ আরো অনেকে। পরে আলংনৃত্য, অনিত্য ও স্মৃতিচারণ সভা অনুষ্টিত হয়। অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধর্মগুরুকে চির বিদায় দিতে দেশের বিভিন্ন জেলার বৌদ্ধধর্মালম্বিরা অংশ নেন।