সিলেট থেকে জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পেল ১৫১ শিক্ষার্থী

সিলেট ব্যুরো :

সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মনোয়ার বখত ফাহিম। একা হাঁটতে পারে না বলে ছেলের সঙ্গে সবখানে যান মা ফুলেনা বেগম। গতকাল শনিবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও যথারীতি তিনি ছেলের সঙ্গে এসেছেন। মেধাবী ফাহিম সিলেট অঞ্চলের জীববিজ্ঞান উৎসবে অংশ নিতে এসেছিল। এদিন অদম্য ফাহিমের মতো জীববিজ্ঞানের আকর্ষণে উৎসবে সামিল হয়েছিল এই বিভাগের চার জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী। এখান থেকে ১৫১ শিক্ষার্থী জাতীয় পর্যায়ে অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। উৎসবের আয়োজক সমকাল ও বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (বিডিবিও)।

জিরাফের গলা লম্বা কেন, মানুষ কি অমর হতে পারবে, হূৎপিণ্ড থেকে ধমনীতে রক্তের বেগ কত, মানুষ ঘাস হজম করতে না পারলেও শাকসবজি কীভাবে হজম করে, জবা ফুলের সব অংশ পরিপূর্ণ থাকলেও ফল হয় না কেন, পাউরুটি বেশিক্ষণ বাইরে রাখলে শক্ত হলেও বিস্কুট নরম হয়ে যায় কেন- এমন বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌতূহলী প্রশ্ন করে উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। সরাসরি ও লিখিতভাবে দেওয়া তাদের এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের প্যানেল। অবশ্য অনেক প্রশ্নে তাদেরও আটকে দিয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে নেতৃত্ব দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ-সংলগ্ন মাঠে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান হাওলাদার। এ সময় বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, আঞ্চলিক ক ও সমকালের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে বিডি সভাপতি অধ্যাপক শহীদুর রশীদ ভূইয়া, অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক আহ্বায়ক অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু ও সমকালের সিলেট ব্যুরোপ্রধান চয়ন চৌধুরী। প্রধান অতিথি ও অন্য অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে উৎসবের সূচনা করেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক স্নেহাংশু শেখর চন্দ, ডিন অধ্যাপক রুহুল আমিন, ডিন অধ্যাপক সানজিদা পারভিন, ডিন অধ্যাপক রুমেজা খাতুন ও রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েব। এরপর অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এক ঘণ্টার পরীক্ষায় অংশ নেয়।

এ আয়োজনে বিশেষ সহযোগী কথাপ্রকাশ, প্রশিক্ষণ সহযোগী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি ও কারিগরি সহযোগী ল্যাববাংলা। এবারের উৎসবের স্লোগান- ‘সূর্যোদয়ের দেশে হোক নতুন সূর্যোদয়’। বাংলাদেশে অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ীরা জাপানে অনুষ্ঠেয় এবারের আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে। পরীক্ষা শেষে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের মাঠে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য মতিয়ার রহমান হাওলাদার। অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক শহীদুর রশীদ ভূইয়া ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডারের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন চয়ন চৌধুরী ও কথাপ্রকাশের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা এসএম শাহরিয়ার মাসুদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিডিবিওর আঞ্চলিক সেক্রেটারি সৈয়দ জাহিদ হাসান।

সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের বক্তৃতা পর্বের আগে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের শিক্ষকরা। এই প্যানেলে ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এনামুল কবীর, সহযোগী অধ্যাপক মাসুদুর রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক রুবাইয়াত নাজনীন আখন্দ।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, এই শতাব্দীতে জীববিজ্ঞান সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যাবে। সুশিক্ষা অর্জন করলে প্রশিক্ষণের দরকার পড়ে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুশিক্ষার মাধ্যমে জীববিজ্ঞানে বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অধ্যাপক শহীদুর রশীদ ভূইয়া বলেন, দেশে জীববিজ্ঞান একমাত্র জায়গা, যেখানে আমরা নানা আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছি। ধান, মাছসহ বিভিন্ন নতুন ও উন্নত প্রজাতি আমরা সৃষ্টি করেছি। একের পর এক গবেষণার পথ সৃষ্টি হচ্ছে।

ভবতোষ রায় বর্মণ বলেন, বিজ্ঞানের জ্ঞানের সাগরে ভাসা এই পৃথিবীতে নতুন প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এজন্য সবাইকে বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে।

সাংবাদিক চয়ন চৌধুরী বলেন, সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে নিয়মিত নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সমকাল।

অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, জীববিজ্ঞান ছাড়া পৃথিবী অচল। তাই প্রত্যেকের বিজ্ঞানের এই গুরুত্বপূর্ণ শাখার চর্চা করতে হবে।

সিলেট অঞ্চলে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শাহজালাল আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের মাসুমা ফেরদৌস তমা, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের তাসফিয়া জামাল শাফরিন, দি ফ্লাওয়ার্স কেজি অ্যান্ড হাইস্কুলের নুরে শাহদাত অনি, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রমিত দত্ত, আহমদ ফিদা হোসেন, পুলিশ লাইনস হাইস্কুলের মো. সাজিদুল ইসলাম রোহান, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ধীমান দাস দীপ, মাহথির মানসিব মোবাশ্বির, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের জুনায়েদ আল আদিব, পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের পিয়াল সরকার ও মো. ফয়সল আহমদ। জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ১৮ জন প্রথম রানার্সআপ ও ৩০ জন দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে।

সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিলেট সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তাসনিয়া তালুকদার নাজরাত, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের মারিয়ান রায় চৌধুরী, সুনামগঞ্জ এসসি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের মারিয়া মুস্তারী দিশা, দি ফ্লাওয়ার্স কেজি অ্যান্ড হাইস্কুলের শ্রুতি দে, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুর মোহাম্মদ নাইম, দি ফ্লাওয়ার্স কেজি অ্যান্ড হাই স্কুলের নওরিন আহমদ, ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের জাহিন তাসনিম নওশিন এবং মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মারুফ হাসান। সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ১৫ জন প্রথম রানার্সআপ ও ২৬ জন দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে।

হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী, স্কলার্সহোমের রিফা তাসনিয়া সুপ্রভা, শমসেরনগরের বিএএফ শাহিন কলেজের আবদুল্লাহ আল সাফি, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের তাসনিম ইবনাত, এমসি কলেজের জয়িতা তালুকদার, মিরপুর ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের রনি দত্ত, স্কলার্সহোমের আহমদ আল মনসুর এবং শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের হুমায়রা আনজুম প্রভা। হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ১৭ জন প্রথম রানার্সআপ ও ১৮ জন দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে।

এই আয়োজনে সিকৃবির এনজাইমের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সমকালের ফটো সাংবাদিক ইউসুফ আলী, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ সিলেটের সভাপতি সুব্রত বসু, সিনিয়র সহসভাপতি সুজিত দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব চৌধুরী, সুহৃদ সুচরিতা ভট্টাচার্য, তমালিকা দত্ত, তন্বী দাস, অনামিকা দাস, সুদীপা তালুকদার, অহনা মিতু প্রমুখ।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!