‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা/ খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি/ দুটি যদি জোটে অর্ধেক তার/ ফুল কিনিও হে অনুরাগী।’ কবিতার লাইনের মাধ্যমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই আহ্বান প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা অনন্ত।
বসন্ত ঋতুতে মাঠঘাট প্রান্তরে যে ফুল সহজেই নজর কেড়ে নেয় তার অন্যতম হলো বনজুঁই। কেউ কেউ একে আবার ভাট বা ঘেটু ফুলও বলেন। এই ফুল দিনে ফোটে এবং রাতে সৌরব ছড়ায়।
বনজুঁই চাষ হয় না। আবার শখের বশেও কেউ লাগায় না। এমনিতে অযত্ম আর অবহেলায় জন্মালেও এ ফুল দৃষ্টি কাড়ে সব মানুষের। মীরসরাইসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি বনজুঁই ফুল দেখা যায়। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। মূলত এটি বুনো ফুল। ঋতুরাজ বসন্তে দেখা যায় এই ফুল।
ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum Viscosum। এটি গ্রামবাংলার অতিপরিচিত উদ্ভিদ। ভারবেনাসেই (Verbenaceae) গণের এই ফুল ল্যামিয়াসেই (Lamiaceae) পরিবারভুক্ত। এটি ইনফরচুনেটাম (Infortunatum) প্রজাতির। গাছের প্রধান কন্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান। সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা। দেখতে কিছুটা পান পাতার আকৃতির। এমনকি খানিক খসখসে। ফুলের পাপড়ি পাঁচটি এবং পাপড়ির গোড়ার দিকটা হালকা বেগুনী রঙের।
প্রতিটি ফুলে চারটি করে পুংকেশর সামনের দিকে বেরিয়ে আসে। পুংকেশরের অগ্রভাগ হয় স্ফীত ও কালো। রাতে বেশ সৌরভ ছড়ায় এই ফুল। সাধারণত মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ বনজুঁই ফুল গ্রামের মেঠো পথের দুই ধারে ফুটে থাকতে দেখা যায়।
কবি ও সঙ্গীত শিল্পী রণজিৎ ধর বলেন, গাছ ভর্তি বনজুঁইয়ের সমারোহ দেখে সব বয়সের মানুষেরই মন জুড়িয়ে যায়। ছোট শিশুরা বনজুঁই ফুল নিয়ে খেলা করে। আমরাও ছোটবেলায় এ ফুল নিয়ে খেলা করতাম। বনজুঁই বা ভাট অবহেলিত ফুল হলেও এর রয়েছে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসালয় থেকে জানা যায়, এ ফুল শুধু সৌন্দর্য বিতরণ করে না। এর আছে নানা উপকারিতা। কাউকে পোকামাকড়ে কামড় দিলে ভাট ফুল রস করে ওই স্থানে দিলে দ্রুত উপশমের কাজ করে।
অনেকে আবার কৃমি আক্রান্ত হলে তা দূর করার জন্য এ ফুলের রস খেয়ে থাকেন। গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাট গাছের পাতা বেটে দুই-তিন দিন লাগালে উকুন মরে যায়।