খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও আবেদন আসেনি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোন করেছিলেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলে জানতে পেরেছি, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও আবেদন আসেনি। খালেদা জিয়ার পরিবারের লোকজন ও দলের লোকেরা বিচ্ছিন্নভাবে তার মুক্তির বিষয়ে কথা বলছেন।
গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের আবেদনটা জানাতে বলেছেন, মৌখিকভাবে। আমি সেটা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। আমি এটুকু বলতে পারি, এছাড়া কোনও লেনদেন বা কথাবার্তা হয়নি। কাল টকশোতে শুনলাম, তলে তলে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আমার মনে হয় বাস্তবে বিষয়টা তেমন কিছু নয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি আগে থেকেই বলে আসছি, খালেদা জিয়ার এই মামলাটি রাজনৈতিক মামলা নয়। সরকারের বিবেচনার বিষয়টা তখনই আসে, যখন বিষয়টি রাজনৈতিক বিবেচনার হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করছেন। রাজনৈতিক মামলা হলে সরকারের পক্ষে বিবেচনার বিষয় ছিল।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা যাবে। তবে প্যারোল কি কি কারণে দেওয়া যায় এবং দোষী বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যায় কিনা, আর তারা কি কি কারণে প্যারোলে মুক্তি চান, এসব বিষয় উল্লেখ করে লিখিতভাবে কোনও আবেদন তারা এখনও করেননি।
খালেদা জিয়ার দল কিংবা পরিবার যদি আবেদন করেন তবে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘যদিটা পরে দেখা যাবে।’ আমাদের বক্তব্য হচ্ছে প্যারোলের আবেদনের সঙ্গে বিষয়টির মিল আছে কিনা, এটা খতিয়ে দেখা। তাদের আবেদন খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার জন্য যৌক্তিক কিনা, এ বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে। যেহেতু খালেদা জিয়াকে আদালত দোষী ঘোষণা করেছে, কাজেই মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টটা আদালতের কাছেই যেতে হবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সাংবাদিকদের করা অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে অমানবিক কোনও কিছু সরকার করতে পারে না। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি সরকারের মাথায় আছে। তবে একটা বিষয় হচ্ছে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়টা তার দলের লোকেরা যেভাবে বলেন, চিকিৎসকরা কিন্তু সেভাবে বলছেন না।
বিএনপির ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদককে ফোন করা ও সরকারকে আন্দোলনের হুমকি বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা বিএনপির দ্বিচারিতা।’ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দফতর বদলের বিষয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রী পরিষদের সব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী সরকারের মধ্যে কাজের সুবিধার জন্য সময়ে সময়ে মন্ত্রী সভায় রদবদল করতে পারেন, কারও দায়িত্বের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। তারা কেউ তো বাদ যায়নি।
আগামীকাল দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা নিয়ে করা অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের সংসদীয় বোর্ড আছে, স্থানীয় সরকার বোর্ড আছে। দুটি বোর্ডেরই যৌথসভা হবে। আগামীকাল ১৯ জনের যৌথসভা হবে। এই সভায় আমাদের কাছে কিছু রিপোর্ট আছে, নেত্রীর কাছে তার নিজস্ব ওয়েতে নেওয়া কিছু তথ্য আছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে, তাছাড়া সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার বোর্ড প্রত্যেক প্রার্থীকে নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।