কুমিল্লার লালমাইয়ে অবৈধ ইটভাটা মালিকের দাপট

কুমিল্লা ব্যুরো :

কুমিল্লার লালমাইয়ে অবৈধ ইটভাটা সিন্ডিকেটের ক্ষমতার দাপট এখন এলাকায় ব্যপক আলোচিত। উপজেলার হাজখলা বাজারের পাশে অবস্থিত মেসার্স ইউনাইটেড ব্রিকস নামের ওই ইটভাটা ফের চালু হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলা এবং জেলা প্রশাসনের বাঁধা উপেক্ষা করে। এতে ভাটা কর্তৃপক্ষের খুটির জোর নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরকে চ্যালেঞ্জ করে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা কার্যক্রম হাতে নেয়ায় এলাকায় ব্যপক সমালোচনার সৃস্টি হয়েছে। এদিকে অবৈধ এ ভাটার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী এবং আশপাশের বহু কৃষি জমি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার লালমাই উপজেলার হাজতখলা বাজারের পাশে বেতুয়া গ্রামে অবস্থিত মেসার্স নিউ ইউনাইটেড ব্রিকস। আলোচিত সমালোচিত এ ভাটার নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। ভাটার দুইপাশে রয়েছে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর চাপাশে রয়েছে সবুজ বৃক্ষরাজী এবং শত শত বিঘা কৃষি জমি। কোলাহল মুক্ত এ গ্রামের পরিবেশকে ধ্বংস করতে ২০১৭ সালে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝখানে ফসলি জমিতে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার দলীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।

এ সময় গ্রামের লোকজন আপত্তি তুলে। কিন্তু গ্রামবাসীর আপত্তিকে উপেক্ষা করে আশপাশের নিরিহ কয়েকজন কৃষকের জমি জোরপুর্বক বেদখল করে নিউ ইউনাইটেড ব্রিকস নির্মান করা হয়। সরকার দলের লোকজন জড়িত থাকায় এ নিয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি স্থানীয় প্রশাসন। প্রায় চার বছর যাবত ভাটাটি কোন প্রকার লাইসেন্স অথবা অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ এ ভাটার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অসংখ্যবার মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা এখানে রহস্য জনক বলে দাবি স্থানীয়দের।

এদিকে পরিবেশের ব্যপক ক্ষতি সাধন করে এ ইটভাটা পরিচালনা করায় ভাটা মালিককে দু দফায় সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু কৃষি অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা রহস্য জনক বলে দাবি এলাকাবাসীর।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ ভাটায় কর্মরত এক কর্মচারী জানান, উপজেলা প্রশাসনসহ সকলের সাথে সুসম্পর্ক রেখেই এ ভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এ ভাটার মালিকানা নিয়েও একাধিক সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে মতবিরোধ। প্রভাবশালীদের সহায়তায় এ ভাটা এখন পরিচালনা করছে বোরহান উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি।

তিনিও এখন ভাটা পরিচালনায় প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কোন প্রকার কাগজপত্র না থাকায় অন্য উপজেলার একই নামের আরেকটি ভাটার নাম ব্যবহার করে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে। ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি সংশ্লিস্ট কর্মকতাদের জানা থাকলেও রহস্য জনক কারনে নেই কোন পদক্ষেপ। সব মিলিয়ে কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এ ভাটাটি সম্পুর্ন প্রতারণার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ ভাটার কার্যক্রম পুনরায় পরিচালনা শুরু করা হবে।

এমতাবস্থায় গ্রামের কৃষি জমি রক্ষা, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝূঁকি এড়াতে ভাটাটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি এলাকার লোকজনের। জেলা প্রশাসন অবৈধ এ ভাটা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকার ভূক্তভোগী জনসাধারনের।

ভাটা মালিক বোরহানউদ্দিন বলেন, আমরা ইটভাটার লাইসেন্স সম্পাদনের জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করছি, আমাদের ভাটায় পরিবেশের কোন ক্ষতি না হলেও ভাটাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি ভাটাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য।

কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, নিউ ইউনাইটেড নামক অবৈধ এ ভাটাটি বন্ধের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করে আসছি, অবৈধভাবে এ ভাটা পরিচালনার জন্য গত বছর আমরা মালিক পক্ষকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছি, আর এ বছর পরিবেশ আইনে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তারপরেও যদি ভাটাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া না হয় তাহলে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পরামর্শক্রমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!