লালমাইয়ে বিয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে মারধর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা
- তারিখ : ০৮:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / 166
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের ছোট বিজরা মুন্সি বাড়িতে
বিয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে রবের পক্ষকে মারধর, লুটপাট ও ব্ল্যাকমেইলের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পেরুল উত্তর ইউনিয়নের ছোট হাড়গিলা গ্রামের বর এর মা ভুক্তভোগী জাহানারা বেগম বাদী হয়ে মঙ্গলবার লালমাই থানায় ৫ জনকে এজহার নামীয় আসামী এবং আরো ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেন। কুমিল্লার লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শহীদুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামীরা হলেন, ছোট বিজরা গ্রামের আলী আক্কাসের ছেলে মহিন উদ্দিন (৪০), তার বাবা আলী আক্কাস, একই বাড়ির আলী আশরাফের ছেলে ফারুক (৪০), মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে মাসুদ (৩৮) ও মৃত আবুল খায়েরের ছেলে শাহআলম (৪০) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জন।
সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের ছোট বিজরা মুন্সি বাড়ির প্রবাসী মহিনউদ্দিনের মেয়ের সাথে একই উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের ছোট হাড়গিলা গ্রামের অলিউল্লার ছেলে শেখ রাসেলের সাথে সামাজিক নিয়ম মেনে উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়। গত শুক্রবার প্রায় দুই শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে বাকই উত্তর ইউনিয়নের ছোট বিজরা মুন্সি বাড়ির প্রবাসী মহিনউদ্দিনের মেয়েকে বিয়ে করাতে যায় বর পক্ষ। বর পক্ষের অধিকাংশ পুরুষ লোকজন খাওয়া শেষে চলে যাওয়ার পর শুরু হয় নতুন দৃশ্য। এক পর্যায়ে বর পক্ষের অভিভাবক পর্যায়ের পুরুষ লোকজনকে মেয়ের জেঠা ফারুকের বাড়িতে নিয়ে জিম্মি করে রাখায় উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়।
এ সময় মেয়ের পক্ষের মহিনউদ্দিন, ফারুক, আশরাফ, শাহআলম, মাসুদের নেতৃত্বে পাইভ ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে বর শেখ রাসেল, তার বড় ভাই শামসু, ছোট ভাই মেহেদী হাসান, খালাতো ভাই মাসুম, ফুফাতো ভাই রাসেলসহ বর পক্ষের লোকজনকে মারাত্মক আহত করে। তারা ছেলের বাবা অলিউল্লাহকেও মারধর করে।
কনে পক্ষের লোকজনের আঘাতে অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে কনের বাড়ির মেইন গেইট বন্ধ করে বাদী জাহানারা বেগম এবং বর এর বোন ও ভাবিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তাদের কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুটপাট করে নিয়ে যায়। এসময় কনের জন্য নিয়ে আসা প্রায় ৪ ভরি স্বর্ণ এবং বিয়ের কয়েকটি শাড়িসহ লাগেজ ভর্তি মালামাল জোরপূর্বক রেখে দেয় কনে পক্ষ।
এরপরেই কনের পক্ষের লোকজন বর পক্ষের পুরুষ ও নারীদের জিম্মি করে নগদ ২ লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের তেরো লাখ টাকার দুটি চেকে স্বাক্ষর এবং পাঁচটি খালি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়। এসময় একটি আইফোন ও একটি এনড্রয়েট ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং আরো একটি মোবাইল ফোন ভেঙ্গে ফেলে। পরে লালমাই থানা পুলিশের সহযোগিতায় বর পক্ষের লোকজন প্রাণে বেঁচে যায়।
বর এর ছোট ভাই ভুক্তভোগী মাহদী হাসান জানায়, মুলত ভাবকপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে শান্তা নামের এক প্রতারক কনে পক্ষকে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে উত্তেজিত করে এই ঘটনার ঘটিয়েছে। ওই শান্তা মেয়েটি আমার বড় ভাই শেখ রাসেলকে গত জুলাই মাসে ব্ল্যাকমেইল করে একটি বিয়ের নাটক সাজায়। ওই ব্ল্যাকমেইলিংয়ের একদিন পর আইনগতভাবে বিষয়টি মিমাংসা করেন শেখ রাসেল। বর্তমানে প্রতারক শান্তা মেয়েটি সৌদি আরবে তার স্বামী ও সন্তানদের কাছে রয়েছেন। তবুও ওই মেয়েটি একের পর এক মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার বড় ভাই শেখ রাসেলের বিয়ের দিনও ওই শান্তা মেয়েটি লোক মারফতে ছোট বিজরা গ্রামে গিয়ে কনের বাবা মহিনউদ্দিনের নিকট ছেলে অর্থাৎ বর শেখ রাসেল গত কয়েকমাস আগে শান্তা নামের ওই মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে অপবাদ দেয়। বিয়ের আগেরদিন আমাদের পক্ষ মেয়ের অভিভাবকদের অতীতে শান্তা নামের প্রতারকের ব্ল্যাকমেইলের বিষয়টি অবগত করেন। এই বিষয়টি জেনে শুনে মেয়ে পক্ষ রাজি হওয়ায় আমরা গত শুক্রবার আত্মীয় স্বজন নিয়ে বিয়ে করাতে যাই। ছোট বিজরা গ্রামের কনে পক্ষের লোকজন আমাদেরকে মারধর ও নগদ দুই লাখ টাকা, দুইটি মোবাইল ফোন, তেরো লাখ টাকার চেক ও পাঁচটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর এবং স্বর্ণালংকার লুটপাটের ঘটনা আমাদের পুনরায় ব্ল্যাকমেইলের পাশাপাশি সামাজিক ভাবে মানহানি করে।
থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাদীসহ ভুক্তভোগী পরিবার।
এবিষয়ে লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, মামলার আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দোষীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।