এমদাদুল হক সোহাগ:
কুমিল্লার সুনামধন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষের লেখা করোনা কালে হৃদরোগ বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এবছরের বই মেলায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। দারুণ বিধংসী নোভেল করোনা থেকে বেচে থাকার জন্য একজন হৃদরোগীর কি কি করনীয় বা করোনায় আক্রান্ত হলে কি করবেন বা করোনা রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি এসব নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন বইটির মধ্যে। তাছাড়া, করোনার উৎপত্তি, বিস্তার কোন পর্যায়ে কি কি চিকিৎসা সবই পাওয়া যাবে এই বইটিতে। চমৎকার প্রচ্ছদ অপসেট পেপারে মুদ্রিত ৬৫টি পৃষ্ঠার বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তিনশ টাকা। ঢাকার স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা য়ারোয়া বুক কর্ণার থেকে প্রকাশিত বইটির প্রকাশনা সহযোগী হিসেবে ছিল হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন কুমিল্লা।
বইটিতে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম শিরোনাম হচ্ছে, কোভিড-১৯ এর উপসর্গ, কোভিড-১৯ রোগের ইনকিউবেশন পিরিয়ড, কোভিড-১৯ সংক্রমনের হার, করোনা ছড়ানোর পদ্ধতি, করোনায় মারাত্মক অসুস্থ্ হয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিসমূহ, করোনা ও হৃদরোগের আন্ত:সম্পর্ক, হার্ট এ্যাটাকের ছদ্দবেশে করোনা, করোনা হার্টের ক্ষতি করে, হৃদরোগীদের করোনা হলে বিপদ বেশী, করোনা কালে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও হঠাৎ মৃত্যু, করোনায় সাইটোকাইন স্টর্ম, করোনা পরবর্তী শারীরিক সমস্যা, করোনাকালে মানসিক দুশ্চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক, করোনায় রক্ত জমাট বেঁধে বাড়ে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ইত্যাদি। বইটি পড়লে যে কেউ করোনা সংশ্লিষ্ট বিষয়, চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাপক ধারনা লাভ করবে। গুরুত্বপূর্ণ এই বইটি বই মেলা ছাড়াও কুমিল্লা সিডি প্যাথ এন্ড হসপিটালে পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মহিবুল্লাহ বলেন, অধ্যাপক ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ একজন বিপুল জনহিতৈষী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞই নন, তিনি একজন সুলেখক এবং কবিও বটে। ইতিপূর্বে বাংলা ভাষায় তাঁর লেখা ৫টি চিকিৎসা বিষয়ক বই প্রকাশিত হয়েছে। করোনা কালে হৃদরোগ বইটি বাংলা ভাষায় লেখা হৃদরোগ বিষয়ক প্রকাশনার জগতে একটি অনন্য সংযোজন। তিনি আরো বলেন, করোনা কালে হৃদরোগ বইটি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মাতৃভাষায় অত্যন্ত সহজ ও সাবলীর ভাবে লেখা জনসচেতনতামূলক সুলিখিত একটি বই যা পড়ে যে কোন ব্যক্তি, হৃদরোগী, চিকিৎসক, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র সকলেই উপকৃত হবেন।
অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ টাংগাইল জেলার নাগরপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি সরকারি স্কলারশীপে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দ থেকে ১৯৯২ সালে কার্ডিওলজিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল তাকে এমডি (কার্ডিওলজি) সমমান ডিগ্রি প্রদান করেন। তিনি ২০০৫ সালে আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলোজি এবং ২০০৭ সালে রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব এডিনবার্গ থেকে ফেলোশিপ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এ ছাড়াও হৃদরোগ চিকিৎসা ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলোজি ২০০৬ সালে তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেন। ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ একজন কার্ডিওলোজির অধ্যাপক এবং কুমিল্লার ময়নামতি মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা সিডি প্যাথ এন্ড হসপিটালে হৃদরোগে বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তার বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত তার লেখা তিনটি কাব্যগ্রন্থসহ আরও দশটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি হৃদরোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুণর্বাসন ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা, বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। যার মাধ্যমে তিনি হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতার পাশাপাশি কয়েক হাজার দুস্থ জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তিনি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংগঠন রোটারী ইন্টারন্যাশনাল এর হয়ে দীর্ঘদিন যাবত সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত। তিনি ২০০৭-০৮ রোটাবর্ষে রোটারী কাব অব কুমিল্লার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি মাল্টিপলপল হ্যারিস ফেলো এবং বেনিফ্যাক্টর।
অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, একজন চিকিৎসক তথা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে এই মাহামারীর সময়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই করোনা কালে হৃদরোগ বইটি রচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন সারা পৃথিবী থেকে এই প্রানঘাতী ভাইরাসকে বিতাড়িত করতে আমাদের আরও অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে। সুতরাং এই ভাইরাস সৃষ্ট রোগ এবং তার সাথে বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি – হৃদরোগের যে সম্পর্ক সে বিষয়ে জানার প্রয়োজনীয়তা থেকেই যাবে। আর এই বইটি সেই প্রয়োজন মেটাতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে।