দেলোয়ার হোসেন জাকির :
শীষ্য তার যোগ্য গুরু খুঁজে নিবে এটাই বাস্তব। তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীর বেলায় এটা কাঁটায় কাঁটায় মিলেছে। করোনা ভাইরাসের ভুয়া সনদ চিকিৎসাসেবার নামে বহুমাত্রিক প্রতারণাসহ অসংখ্য অভিযোগে অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাহেদের অন্যতম প্রধান সহকারী প্রতারক তারেক শিবলীকে আটক করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা পরিক্ষায় ভূয়া সনদ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে চাপের মুখে পরেছে বাংলাদেশের প্রবাসীরা।
তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীর প্রতারনা শুরু কুমিল্লা থেকে। ২০০৬-৭ সালের দিকে কুমিল্লায় একটি বিতর্ক ক্লাব চালাতো শিবলী।
ওই সময় কুমিল্লা বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সংগঠনের সাথে কাছাকছি সংখ্য গড়ে তোলে শিবলী। বেশ কয়েক বছর নানান সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান করে শিবলী। সেই থেকেই তারেক শিবলীর প্রতারনা শুরু।
শিবলীকে আটকের পর থেকেই কুমিল্লা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় তাকে নিয়ে, নাম ও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে অনেকেই বলেছেন তার প্রতারনা ও বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার কথা।
কুমিল্লায় বিতর্ক ক্লাব চালানোর সাথে নানান মানুষের আর্থিক দেনা-পাওনা ও বেশকয়েক জনের সাথে প্রতারনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিয়ে করেন তার বিতর্ক ক্লাবের সদস্য সোনিয়াকে। ২০১৪ সালের দিকে শিবলী গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত হয়। প্রথমে একটি অনলাইন এবং ঢাকার একটি ছোট পত্রিকায় কাজ শুরু করে।
জানা গেছে ২০১৭ সালের দিকে রিজেন্টের সাহেদের আইটি প্রধান ও সাহেদ সম্পাদিত নতুন কাগজের সাথে যুক্ত হয় তারেক শিবলী। সেই থেকে বড় জায়গায় প্রতারনা করার সুযোগ হয় তারেক শিবলীর। নতুন কাগজের ফেইসবুকে একটি অনলাইন টকশোর সঞ্চলনা করতো শিবলী। এর মাধ্যমে সাহেদের গুনকির্তন করা হতো।
করোনার ভুয়া সনদ প্রদানসহ অসংখ্য অভিযোগে সিলগালা করে দেয়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের ব্যক্তিগত সহকারী ও আইটি শাখার প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সূত্রে আটক করা হয়েছে সাহেদের ভায়রা ভাই নাট্যনির্মাতা মোহাম্মদ আলী বশিরকে। দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনার নায়ক সাহেদ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে নোটিস জারি করা হয়েছে। এ দিকে লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে রিজেন্টকে কোভিডের জন্য স্পেশালাইজ হিসেবে কাজ দেয়া হয়েছে তার সঠিক ব্যাখ্যা চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এ মামলায় বর্তমানে রিমান্ডে থাকা ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শিবলী ও আটককৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ। এ সম্পর্কে র্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন তারেক শিবলীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তিনি মোঃ সাহেদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়া সাহেদের ভায়রা মোহাম্মদ আলী বশিরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গ্রেফতারকৃত তারেক শিবলী সম্পর্কে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, তার কাজ ছিল মূলত আইটি বিভাগ সামাল দেয়া। করোনার নকল সনদ তৈরির বিষয়ে তারেক শিবলী অত্যন্ত নিপুণ কায়দায় নিজেই দায়িত্ব পালন করতেন। কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট নেয়া, রিপোর্ট নেগেটিভ পজেটিভ করার মতো কঠিন দায়িত্বটা সেই করত। সাহেদ তাকে দিয়েই বিশ্বস্ততার সঙ্গে সনদ তৈরি করাতেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে জানা যাবে এ পর্যন্ত কত সংখ্যক সনদ তৈরি করা হয়েছে। কত লোক প্রতারণার শিকার হয়েছে সে তথ্যও তার কাছে রয়েছে।