১২:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
লালমাইয়ে বিয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে মারধর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ব্যবসায়ী দুলালকেখুন্তি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা ভাড়াটিয়া সুমি কুমিল্লার বেলতলীতে পিকআপ চাপায় পথচারী নিহত বিতর্কের মুখে সংসদের নির্বাচনী এলাকা সীমানা নির্ধারণ কারিগরি কমিটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান অপরাধী যে দলেরই হোক, কোনো ছাড় নেই- ওসি মোহাম্মদ সেলিম কুমিল্লা সদর দক্ষিণে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইয়ংস্টার সোশ্যাল অর্গানাইজেশন এর সদর দক্ষিন উপজেলার কমিটি গঠন নতুন পুরাতন বুঝি না,ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে-ডা. শফিকুর রহমান ছয় দফা দাবিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি, নেই গাড়িয়ালের কণ্ঠে ভাওয়াইয়া

  • তারিখ : ১০:১৪:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২১
  • / 1172

কি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে… এসব ভাওয়াইয়া গানের সৃষ্টি হয়েছে গরুর গাড়িকে ঘিরে। গরুর গাড়ি আর গাড়িয়ালকে নিয়ে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিনের ভাওয়াইয়া দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও স্থান করে নিয়েছিল। এক সময় এ অঞ্চলে গরুর গাড়ি ছাড়া বিকল্প বাহনের কথা ভাবাই যেত না। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই গরুর গাড়িও নেই। নেই গাড়িয়ালের কণ্ঠে ভাওয়াইয়া গানও।

এক সময় রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের এক মাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। ধান কাটার সময় লাইন ধরে গরুর গাড়িতে করে ধান নেয়া হত কৃষকের উঠানে। গাড়িয়ালদের ভাওয়াইয়ার সুরে মুগ্ধ হত কৃষক-কৃষাণি। বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী যেত গরুর গাড়ি নিয়ে। সারিবদ্ধ গরুর গাড়ি দেখার জন্য রাস্তার দুপাশে মানুষ ভিড় করতো। নবান্ন, নতুন বছরকে ঘিরে আয়োজন করা হত গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা। হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ করতো প্রতেযোগিতার দৃশ্য।

এসবের কিছুই নেই এখন। গ্রামগঞ্জে দু’একজন বড় গৃহস্থ প্রাচীন ঐতিহ্যটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে সখের বসে। সময়ের প্রয়োজনে মানুষ যন্ত্র নির্ভর হওয়ায় জনপ্রিয় এই বাহনটি এখন আর ব্যবহার হচ্ছে না। যোগাযোগ, যাতায়াত, মালামাল পরিবহনসহ সব কাজেই এখন ব্যবহার হচ্ছে বাস, অটোরিক্সা, ভটভটি ইত্যাদি বাহন।

কয়েক দশক আগেও উত্তরাঞ্চলের মধ্যে গরুর গাড়ির চাকা তৈরির বিখ্যাত হাট ছিল রংপুরের বদরগঞ্জে। দূর- দূরান্ত থেকে গরুর গাড়ির চাকা ক্রয় করতে বদরগঞ্জে আসতো। এই চাকা তৈরী করে শত শত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন বদরগঞ্জে নেই গরুরগাড়ির চাকার হাট।

পীরগাছার কল্যানী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গরুর লালন-পালন, ক্রয়-ব্যয় বহুল হওয়ায় কৃষকরা এখন আর বাহনটির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তিনি বলেন, তার বাড়িতে এক সময় ৩টি গরুর গাড়ি ছিল। বাবা, দাদারা গরুর গাড়িতে চড়ে শহরের যেতেন। সে দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি।

ইতিহাসবিদ জুবায়ের আলী জুয়েল বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরু গাড়িকে এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে খুব দ্রুত এই গরুর গাড়ি ইতিহাসের পাতায় স্থান নিবে।

শেয়ার করুন

হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি, নেই গাড়িয়ালের কণ্ঠে ভাওয়াইয়া

তারিখ : ১০:১৪:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২১

কি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে… এসব ভাওয়াইয়া গানের সৃষ্টি হয়েছে গরুর গাড়িকে ঘিরে। গরুর গাড়ি আর গাড়িয়ালকে নিয়ে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিনের ভাওয়াইয়া দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও স্থান করে নিয়েছিল। এক সময় এ অঞ্চলে গরুর গাড়ি ছাড়া বিকল্প বাহনের কথা ভাবাই যেত না। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই গরুর গাড়িও নেই। নেই গাড়িয়ালের কণ্ঠে ভাওয়াইয়া গানও।

এক সময় রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের এক মাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। ধান কাটার সময় লাইন ধরে গরুর গাড়িতে করে ধান নেয়া হত কৃষকের উঠানে। গাড়িয়ালদের ভাওয়াইয়ার সুরে মুগ্ধ হত কৃষক-কৃষাণি। বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী যেত গরুর গাড়ি নিয়ে। সারিবদ্ধ গরুর গাড়ি দেখার জন্য রাস্তার দুপাশে মানুষ ভিড় করতো। নবান্ন, নতুন বছরকে ঘিরে আয়োজন করা হত গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা। হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ করতো প্রতেযোগিতার দৃশ্য।

এসবের কিছুই নেই এখন। গ্রামগঞ্জে দু’একজন বড় গৃহস্থ প্রাচীন ঐতিহ্যটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে সখের বসে। সময়ের প্রয়োজনে মানুষ যন্ত্র নির্ভর হওয়ায় জনপ্রিয় এই বাহনটি এখন আর ব্যবহার হচ্ছে না। যোগাযোগ, যাতায়াত, মালামাল পরিবহনসহ সব কাজেই এখন ব্যবহার হচ্ছে বাস, অটোরিক্সা, ভটভটি ইত্যাদি বাহন।

কয়েক দশক আগেও উত্তরাঞ্চলের মধ্যে গরুর গাড়ির চাকা তৈরির বিখ্যাত হাট ছিল রংপুরের বদরগঞ্জে। দূর- দূরান্ত থেকে গরুর গাড়ির চাকা ক্রয় করতে বদরগঞ্জে আসতো। এই চাকা তৈরী করে শত শত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন বদরগঞ্জে নেই গরুরগাড়ির চাকার হাট।

পীরগাছার কল্যানী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গরুর লালন-পালন, ক্রয়-ব্যয় বহুল হওয়ায় কৃষকরা এখন আর বাহনটির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তিনি বলেন, তার বাড়িতে এক সময় ৩টি গরুর গাড়ি ছিল। বাবা, দাদারা গরুর গাড়িতে চড়ে শহরের যেতেন। সে দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি।

ইতিহাসবিদ জুবায়ের আলী জুয়েল বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরু গাড়িকে এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে খুব দ্রুত এই গরুর গাড়ি ইতিহাসের পাতায় স্থান নিবে।