রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ছয়তলা বাড়ির মালিক শওকত হোসেনের মেজাজ সকাল থেকেই খারাপ। বাড়ির সবার সাথে কোনো কারণ ছাড়াই ঘরের এমাথা-ওমাথা পাঁয়তারা করছেন এবং ক্ষণে ক্ষণে স্ত্রী ও সন্তানদের ডেকে অহেতুক হইচই করে কথা বলছেন।
তার মেজাজ খারাপ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তিনি খবর পেয়েছেন করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ‘রেডজোন’ হিসেবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত রাজধানী ঢাকা এলাকায় আগামীকাল ৭ জুন থেকে লকডাউন শুরু হচ্ছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শওকত হোসেন বলেন, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ছয়তলা ভবনের পুরোটুকুই খালি পড়ে আছে। নিউমার্কেট ও আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটের দোকানের স্বল্প আয়ের কর্মচারীরা তার বাড়ির ভাড়াটিয়া। দু’মাস আগে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর মার্কেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার বাড়ি খালি হয়ে যায়।
ভাড়াটিয়া সবাই গ্রামে ফিরে যায়। ফলে দু’মাস এক টাকাও ভাড়া পাননি। গত ১ জুন মার্কেট খুলে দিলে ভাড়াটিয়ারা ফেরত আসে। ফেরার পর ভাড়া চাইলে তারা জানায়, মার্কেট বন্ধ থাকে তারা বেতন-ভাতা কিছুই পাননি। এই দু’মাস ভাড়া মাফ চেয়ে আগামী মাসে ভাড়া দেবেন বলে অনুরোধ জানান।
এখন আবার নতুন করে লকডাউন শুরু হলে এবং মার্কেট বন্ধ থাকলে ভাড়াটিয়ারা আবার বেতন-ভাতা নিয়ে নানা অজুহাতে ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানাবে এ কথা ভেবে তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বলে জানান।
শওকত হোসেন বলেন, ভাড়া বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল সরকার মাফ করবে না। মানুষের অসচেতনতার কারণে সরকার আবার লকডাউন দিতে বাধ্য হচ্ছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরিধান করা, বাইরে বের হলে নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব (কমপক্ষে তিন ফুট) বজায় রাখা এবং ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধৌত করার পরামর্শ দিলেও অনেকেই তা মানছেন না। রাস্তায় বের হলে মনে হয় না যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।
অনেকেই মাস্ক না পরে রাস্তায় বের হচ্ছেন, মাস্ক পরিধান করলেও সঠিক নিয়ম না মেনে মুখের নিচে নামিয়ে রাখছেন। রাস্তাঘাটে অসংখ্য মানুষ শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে চলাফেরা করছেন। এসব কারণেই সরকার লকডাউন দিতে বাধ্য হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন তিনি।
শওকত হোসেনের মতো দুশ্চিন্তার ভাঁজ এখন রাজধানী ঢাকার শত শত বাড়ির মালিকের। এসব বাড়ির মালিকরা বাড়ি ভাড়ার টাকায় সংসারের খরচ মিটিয়ে বেশ আয়েশি জীবনযাপন করলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেক বাড়ির মালিক মাসের টাকা মাসে ভাড়া পাচ্ছেন না, আবার অনেক ভাড়াটিয়া আয় রোজগার নেই অজুহাতে বাড়িভাড়া বকেয়া রাখছেন আবার কেউবা গত দু’মাসের ভাড়া দিতে পারবেন না বলে ক্ষমা করে দিতে বলছেন।
রাজধানীর মিরপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিড লেভেলের কর্মকর্তা আহসানুল হক বলেন, দু’মাস ধরে অফিস বন্ধ থাকায় বেতন-ভাতা ও ঈদের বোনাস কিছুই এখনও পাইনি। আয় রোজগার না থাকায় অফিস পরে পরিশোধ করবে বললেও কবে হাতে টাকা পাব কে জানে? টাকা না থাকলেও বাসাভাড়া ও সংসার খরচ থেমে নেই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়ির মালিকরা যেমন বিপাকে পড়েছেন তেমনি বিপাকে পড়েছেন আহসানুল হকের মতো ভাড়াটিয়ারা। কিছু আগের মতো স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মনে শান্তি ফিরে আসবে না বলে সবাই মনে করেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আজ মোট রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ২৬ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৮৪৬ জনের মৃত্যু হলো। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৬৩৫ জন।
সুত্র: জাগো নিউজ।