কুমিল্লা ফরটিস হাসপাতালে ১৯ করোনা রোগীর বিল সাড়ে ৫ কোটি টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঢাকা-কুমিল্লা সড়কের আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওড়া এলাকায় অবস্থান এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইন্সটিটিউট হাসপাতালের। সকলের কাছে এটি ফরটিস হাসপাতাল নামেই পরিচিত। করোনাকালীন সময়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের আগ পর্যন্ত (গত ১০ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত) ২২ দিনে ১৯ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় ফরটিস হাসপাতালে। আর এতেই ঘটেছে ‘দিনদুপুরে ডাকাতির’ মতো ঘটনা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমেক হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের আগ পর্যন্ত জেলা করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক মাল্টি সেক্টর কমিটি করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি ফরটিস হাসপালটিকে অধিগ্রহণ করেছিল। হাসপাতালটি ১৯ জন করোনা রোগীর চিকিৎসা দিয়ে এখন আইসিইউসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫৮৭ টাকা বিল দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরে এই ‘ভুতুরে’ বিলটি দাখিল করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, একই রোগীদের চিকিৎসা খরচ বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকার বিল দাখিল করা হয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের পরিচালকের কাছে। ফরটিস হাসপাতালের এমন ‘ডাকাতি বিলকাণ্ডে’ কুমিল্লা জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে শুরু করে সকলের মধ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে কুমেক হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের আগ পর্যন্ত ২২ দিনে মোট ১৯ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় ফরটিস হাসপাতালে। এর মধ্যে ৪ জন রোগী মারা যান। আর অপর ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন। আর এতেই ওই ভুতুরে বিল তৈরি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও ফরটিস হাসপাতালে সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ দিয়ে করোনা আক্রান্তদের আইসিইউ সেবা দিয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফরটিস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু তাদের আইসিইউ ইউনিটের ফ্লোর ও ইউটিলিটি সুবিধা ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে মাত্র।

কুমেক সূত্র জানায়, ২২ দিনে ১৯ জন করোনা রোগীর চিকিৎসা বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকা এবং ওই হাসপাতালের আইসিইউসহ অন্যান্য স্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫৮৭ টাকা সরকারকে যদি পরিশোধ করতে হয় এক্ষেত্রে প্রতি রোগীর জন্য খরচ পড়বে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো। আর এই ধরনের খরচ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি ‘ডাকাতি বিলকাণ্ড’।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. সাঈদ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আমরা ওই ১৯ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। যদিও এদের মধ্যে ৪ জন রোগী মারা গেছেন। আমরা তাদের চিকিৎসা, থাকা, ওষুধপত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকার বিল দাখিল করেছি কুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। আর এই হাসপাতালের একটি বড় কক্ষে ১০ বেডের আইসিইউ, ভেন্টিলেটর স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ৫ কোটিরও অধিক টাকা খরচ হয়েছে। এজন্য আমাদের হাসপাতালের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় থেকে এই খরচের বিলটি স্বাস্থ্য অধিদফতরে দাখিল করা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। বিষয়টি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

তবে শুক্রবার (১৭ জুলাই) এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, কুমেক হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের আগ পর্যন্ত ওই হাসপাতালটিতে ২২ দিনে মোট ১৯ জন রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। তবে রোগীদের ওষুধ, চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব করা হয়েছে কুমেক হাসপাতাল থেকে। এরপরও ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সেবা বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকা ও আইসিইউসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার বিল দাখিল করেছে। যা একেবারেই অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা দেশের এই ক্রান্তিকালে তাদের কাছ থেকে মোটেও এমনটা আশা করিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
error: ধন্যবাদ!