ছুটির দিনে সড়কে ঝরল ২১ প্রাণ

ছুটির দিনে দেশের সাত জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জনসহ ৭ জন, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ৬ জন নিহত হয়। এছাড়া মাগুরায় ৩ জন, গাজীপুরের কালীগঞ্জে ২ জন, ভোলা, বগুড়া ও যশোরে ১ জন করে নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার রাতে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যুরো প্রধান ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জনসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঘিওর-দৌলতপুর আঞ্চলিক সড়কের মূলকান্দি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার চাষাভাদ্রা গ্রামের বাদ্যকরপাড়া গ্রামের গোবিন্দ বাদ্যকর (৩২), তার মেয়ে রাঁধে বাদ্যকর (৪), স্ত্রী ববিতা বাদ্যকর (২৫), বাবা হরে কৃষ্ণ (৫৫), চাচি খুশি বালা (৫০) ও চাচাতো ভাই রামপ্রসাদ বাদ্যকর (৩২)। আরেকজন হলেন দৌলতপুর উপজেলার সমেতপুর গ্রামের সিএনজিচালক জামাল (৩২)।

নিহতদের মধ্যে খুশি বালা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। বাকি সবাই হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।

নিহতের স্বজনদের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার চাষাভাদ্রা গ্রামের বাদ্যকরপাড়ার গোবিন্দ বাদ্যকর তার অসুস্থ মেয়ে রাঁধে বাদ্যকরকে নিয়ে মানিকগঞ্জে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দৌলতপুর মূলকান্দি এলাকায় তাদের বহনকারী সিএনজিটি পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা ভিলেজ লাইনের একটি যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিতে থাকা পরিবারের সবাই নিহত হন।

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত ডাক্তার নাফমুন রইস জানান, হাসপাতালে আনার আগেই সবাই মারা গেছেন।

দৌলতপুর থানার ওসি রেজাউল করীম জানান, দুর্ঘটনাকবলিত ভিলেজ লাইনের বাসটি আটক করা হলেও চালক ও সহকারী পলাতক রয়েছেন।

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল): টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। শুক্রবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উপজেলার ইচাইল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতদের মধ্যে বাসের যাত্রী ও পথচারী রয়েছে।

বিষয়টি মির্জাপুর গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফর হোসেন নিশ্চিত করেছেন। তিনি যুগান্তরকে জানান, রংপুর থেকে ছেড়ে আসা সেবা ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাস ইচাইল এলাকায় বিকল হয়ে পড়ে। পরে মেরামতের জন্য বাসটি রাস্তার পাশে দাঁড় করানো হয়। সকাল ৭টার দিকে ঢাকাগামী সবজিভর্তি ট্রাক বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও দুজন মারা যায়। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। নিহতদের এখনও পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে জানান ওসি।

মাগুরা: মাগুরায় ট্রাক উল্টে চাপা পড়ে প্রাণ ২ নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পৃথক আরেকটি দুর্ঘটনায় আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার জেলার পৃথক স্থানে এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।

নিহতরা হলেন- স্বর্ণলতা মজুমদার (২৫), সাথী মজুমদার (৩৫) এবং আহাদ আলি মোল্যা (৬০)।

পুলিশ জানায়, শালিখার থৈপাড়া গ্রামের মিল্টন বিশ্বাসের স্ত্রী স্বর্ণলতা তার ভাইয়ের স্ত্রী সাথী মজুমদারকে নিয়ে একটি অটোরিকশায় মাগুরার রামনগর এলাকায় এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা মাগুরা-ফরিদপুর সড়কের ঠাকুরবাড়ি এলাকায় পৌঁছে অটোরিকশা থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এ সময় ঢাকাগামী সবজিবোঝাই একটি ট্রাক অন্য একটি অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়। এতে ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন স্বর্ণলতা, সাথী এবং একই পরিবারের সেতু এবং অপর্ণা।

ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে স্বর্ণলতা মজুমদারের মৃত্যু হয়। সাথী মজুমদারকে সেখান থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তারও মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনায় আহত সেতু মজুমদার ও অপর্ণা মজুমদারকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে আহাদ আলি মোল্যা (৬০) নামে এক পল্লী চিকিৎসক সকালে মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর এলাকায় নছিমনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া এলাকায়।

কালীগঞ্জ (গাজীপুর): গাজীপুরের কালীগঞ্জে গাড়ি চাপায় নুরুল ইসলাম (৪৩) ও মোকারম (৩৫) নামের দুইজন নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গী-ঘোড়াশাল মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার বাগারপাড়া নামকস্থানে। শুক্রবার বাদজুমা নিহতের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

নিহত নুরুল ইসলাম কালীগঞ্জ পৌরসভার মুনসুরপুর গ্রামের মৃত তরব আলী খন্দকারের ছেলে, সে পেশায় অটোচালক এবং নিহত মোকারম একই উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ গ্রামের মোস্তফার ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সন্ধ্যা রাতে ঘোড়াশালগামী অটোটি কালীগঞ্জ বাইপাস সড়কের বাঘারপাড়া এলাকায় পৌছলে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া একটি গাড়ি অটো উপরে উঠিয়ে দেয় এতে করে অটোচালকসহ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এদিকে তাদের চাপা দিয়ে গাড়িটি পালিয়ে যায়। পরে ওই সড়কে চলাচলকারী টঙ্গীগামী একটি প্রাইভেটকার বাঘারপাড়া স্ট্যান্ডে স্থানীয়দের জানান।

স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেয়। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানার এসআই আবদুল কুদ্দুস ও মোয়াজ্জেম হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

কালীগঞ্জ থানার ওসি একে এম মিজানুল হক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহতদের পরিবারের কোনো আপত্তি না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়া তাদের পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

যুগান্তর রিপোর্ট, ভোলা: ভোলায় মালবাহী ট্রলির ধাক্কায় নিজাম উদ্দিন মিরণ (৪২) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী মৃত্যু হয়েছে। নিহত নিজাম উদ্দিন মিরণ ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। শুক্রবার দুপুরে ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের বাংলাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বাংলাবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা বলেন, দুপুরের দিকে ৩ জন আরোহী নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ভোলা শহরের দিকে আসছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি মালবাহী ট্রলির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিজাম উদ্দিন মিরন নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রলিটি জব্দ করেছে। তবে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রলির চালক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা যায়নি।

বগুড়া ব্যুরো: বগুড়ার নন্দীগ্রামে খেলতে গিয়ে ধান বোঝাই অটো ভ্যানের চাপায় জাহিদ হোসেন নামে চার বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকালে উপজেলার বেলঘড়িয়া গ্রামে এ হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। শিশুটির মৃত্যুতে শুধু তার পরিবারে নয়; পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে।

পুলিশ ও স্বজনরা জানান, শিশু জাহিদ হোসেন নন্দীগ্রাম উপজেলার বেলঘড়িয়া গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে। শিশুটি শুক্রবার বিকালে খেলার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। বাড়ির পাশে রাস্তায় অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করছিল। এ সময় ধানবোঝাই ব্যাটারিচালিত একটি অটোভ্যান তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই জাহিদের মৃত্যু হয়। চালক ভ্যান রেখে পালিয়ে যান।

নন্দীগ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আজিজুর রহমান জানান, ভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে। মামলা হলে চালককে গ্রেফতার করা হবে।

যশোর ব্যুরো: যশোরে অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আবদুর রহমান (৪৫) সদর উপজেলার মন্ডলগাতি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শহরের ভোলাট্যাংক রোডে টাইলসের দোকান এসএ ট্রেডার্সের মালিক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আব্দুর রহমান মোটর সাইকেল নিয়ে খড়কি ধোপাপাড়া রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় রেললাইনের ফাঁকে চাকা আটকে যায়। এসময় মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তিনি মোটরসাইকেলের চাকা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যে ট্রেন চলে আসে। ট্রেনের চাপায় গুরুত্বর আহত হন। তাকে যশোর জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়।

এই হাসপাতালের চিকিৎসক সৌরভ হোসেন জানান, ট্রেনের ধাক্কায় আহত আবদুর রহমানের মাথায় হেলমেট থাকলেও তিন স্থানে গভীর ক্ষত হয়। এছাড়া হাত-পাসহ শরীরের অন্যান্য স্থানের আঘাতও ছিল গুরুতর। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।

যশোর রেলওয়ে পুলিশের এসআই তারিকুল ইসলাম জানান, মন্ডলগাতি গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুর রহমান যশোর শহরে আসছিলেন। খোলাডাঙ্গার ধোপাপাড়ায় অবৈধ ক্রসিং পার হওয়ার সময় খুলনা থেকে কুড়িগ্রামের চিলিহাটিগামী রকেট ট্রেন তাকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

কোতোয়ালি থানার এসআই খালিদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে মোটরসাইকেল চালককে মৃত দেখতে পাই। লাশের পকেটে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে পরিচয় পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় খুলনা রেলওয়ে থানায় মামলা হবে।

যুগান্তর

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
error: ধন্যবাদ!