তিন অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে পেঁয়াজের দাম

ডেস্ক রিপোর্ট : ফের অস্থির পেঁয়াজের বাজার। ভারতে বন্যা, অন্ধ্রপ্রদেশে পেঁয়াজের মোকামে শ্রমিকদের ধর্মঘট ও বাংলাদেশের মাওয়া ঘাটে ফেরি পারাপার বন্ধ থাকা- এই তিন অজুহাত হাজির করে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। গত এক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর সিন্ডিকেট করে যারা পণ্যটির দাম বাড়িয়েছিল তাদের তালিকা সরকারের কাছে আছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনেক মজুদদার বেশি দামে বিক্রির আশায় গত বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছিল, চলতি বছর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় আগের সেই মজুদ করা পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এখন সেই লোকসান উঠাতে তারা বিভিন্ন অজুহাত সামনে রেখে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।

জানতে চাইলে ভোক্তার স্বার্থ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। এর মধ্যে পেঁয়াজ নিয়ে পুরনো সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত বছর পেঁয়াজ নিয়ে যারা সিন্ডিকেট করে ভোক্তাকে চাপে ফেলেছিল তাদের তালিকা সরকারের কাছে থাকার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। যে কারণে সেই একই অজুহাতে অসাধুরা পণ্যটির দাম বাড়াতে শুরু করেছে। অবিলম্বে মুনাফাখোরদের এই তৎপরতা বন্ধে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অধিদফতরের তদারকি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশে চাল, আলু, পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ রয়েছে। তাই নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজি করলে অধিদফতর জিরো টলারেন্স দেখাবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। তবে মালিবাগ কাঁচাবাজারে এই পেঁয়াজ ৫৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা একদিন আগে বুধবার বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। আর মাসখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে, আর মাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া একইদিন আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা।

নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, পাইকারি বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বেশি দামে এনে বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকাররা বলছেন, ‘সরবরাহ কম, তাই দাম বাড়তি। যা নেয়ার নিয়ে নেন, পরে দাম আরও বাড়বে।’ তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে।

পণ্যটির দাম বাড়ার চিত্র বৃহস্পতিবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় দেখা গেছে। টিসিবি বলছে, মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর কেজিতে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দিন পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা। যা একদিন আগে বুধবার বিক্রি হয়েছে ৪০-৪২ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩২-৩৩ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২২-২৩ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৬-১৮ টাকা।

হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র ঘোষ বলেন, ভারতে বন্যা হয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশে পেঁয়াজের মোকামে শ্রমিকরা তিন দিন ধর্মঘট করছেন- সে কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। এছাড়া মাওয়া ঘাটে ফেরি পারাপার বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। তিনি বলেন, মাসের শুরুতে অনেকেই বেতন পেয়ে একবারে বেশি করে পণ্য কিনতে ভোক্তারা বাজারে আসছে। একবার বেশি চাহিদা বৃদ্ধি ও বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় পণ্যটির দাম বেড়েছে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
error: ধন্যবাদ!