০৫:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পিস্তল নিয়ে গ্রেফতার হওয়া রাসেল সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের কেউ নয়- সায়েম মজুমদার  নাঙ্গলকোটে মহিলাদল আদ্রা উওর ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার লক্ষে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন কুমিল্লায় ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে কিশোর কুমিল্লায় চাঁদাবাজবিরোধী অভিযানে হামলা, আহত ৩ পুলিশ সদস্য ইউসুফ মোল্লা টিপুকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে যৌথ বিবৃতি কুমিল্লায় যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল কুমিল্লা সদর দক্ষিণে পিস্তলসহ যুবদল কর্মী আটক দুর্গাপূজায় ৯ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হানিফ ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ২

ভালো নেই গ্রামের কৃষক, মাঠে পুড়ে গেছে সোনালী ধান

  • তারিখ : ০৮:১৭:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০
  • / 1192

এমদাদুল হক সোহাগঃ

এক ভাড় ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন কৃষক তোতা মিয়া। চোখ দুটি ছলছল করছে। ঘামে শরীরের শার্টটির অধিকাংশ অংশই ভেজা। বুকফাটা আর্তনাদ যেন প্রকাশ করতে পারছেন না। একভার ধানে সবই চিটা আর পুড়ে যাওয়া ধান গাছ। পুরো ভাড়ের মধ্যে কেজি খানেক ভালো ধানও হবেনা। যে আশা নিয়ে বোরো আবাদ করেছিলেন তা সবই আজ প্রকৃতির বিরুপ আচরণে পন্ডশ্রমে পরিণত হয়েছে। শুধু তোতা মিয়া নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বিলঘর গ্রামের পশ্চিম বিলে প্রায় সব কৃষকেরই একই অবস্থা। প্রকৃতিতে মহামারী করোনা ভাইরাসের অশোভ থাবায় যেন আজ ক্ষতবিক্ষত কৃষকের স্বপ্নের ফসলও।

বৈশাখের শেষ বিকেলে ধানের ভাড় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কৃষক তোতা মিয়ার সাথে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। ধানের ফলন কেমন হয়েছে জানতে চাইলে, আক্ষেপ নিয়ে বলেন, খোদার গজব আসছে!! তিন কানি জমিতে (৩৩ শতকে এক কানি) ইরিধান (বোরো আবাদ) করেছি। নিজের পরিশ্রম ছাড়াও প্রায় পয়ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পানি খরচ দিতে হয়েছে কানি প্রতি আড়াই হাজার টাকা করে। ভালো ফলনের আশায় যা যা করা দরকার যেমন সার, কীটনাশক ছিটানো সহ সবই করা হয়েছিলো। কিন্ত এমন ফলন হবে কল্পনাও করিনাই। যে ধান হয়েছে তা কেটে বাড়ি এনে মাড়াই করার খরচও উঠবেনা। যদি খড় বিক্রিও করি বা দাম ধরি তাহলেও নাহ। আমরা কৃষকেরা এবছর ধ্বংশ হয়ে গেছি। এসময় উপস্থিত একই গ্রামের মাহফুজুর রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন, আমার জমিতেও একই রকম অবস্থা। এবছর আল্লাহর কি গজব এসেছে তিনিই ভালো জানেন। সব ফসল জ্বলে গেছে, চিটা আর চিটা। ধান গাছই মরে গেছে। খরচ তো দূরের কথা কামলা দিয়ে এগুলো কেটে বাড়ি এনে মাড়াই করার খরচও উঠবেনা।

কৃষক তোতা মিয়া জানান, একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী ৬০০ টাকা। এ টাকার সাথে সকালে নাস্তা ও দুপুরের খাবারও দিতে হয়। তারপরেও কাজের লোক পাওয়া যায়না। করোনা ভাইরাসের কারনে কাজের লোক খোজে পাওয়া দায়। তিন কানি জমি নিজের কিনা জানতে চাইলে, কৃষক তোতা মিয়া জানান ৯০ হাজার টাকায় তিন কানি জমি মালিকের কাছ থেকে দায়সুদি (যতদিন জমির মালিক ৯০ হাজার টাকা ফেরত না দিবেন ততদিন জমি তার কাছে থাকবে) নিয়েছেন। নিজের হলে কষ্ট কম হতো। গতবছর ফলন কেমন হয়েছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরও তেমন ভালো ফলন হয়নি। তারপরেও গতবছর, একই জমিতে প্রায় ৪০মন ধান পেয়েছিলাম। কসবা পশ্চিম ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার কবির আহম্মদ জানান, বিলের অধিকাংশ ফলনই নষ্ট হয়ে গেছে। যে ফলন আশা করা হয়েছিলো তা হয়নি। এবছর কৃষকেরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কসবা প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক মোঃ সোলেমান খাঁন জানান, কসবা উপজেলার অনেক জায়গাতেই বোরো আবাদের ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন এলাকার বোরো আবাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া মাঠের চিত্র ও তথ্য সংগ্রহ করেছি। কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভূইয়া জীবন বলেন, আমি শোনেছি কৃষকের মাঠের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ধানই চিটা এবং জ্বলে গেছে। আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা প্রণোদনা পাবেন।

কসবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বলেন, এবছর কসবা উপজেলার ১৩৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আমি কসবা উপজেলায় নতুন এসেছি। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছি। সব এলাকায় ফসল নষ্ট হয়নি। কয়েকটি এলাকায় এমন হয়েছে। এ রোগের নাম নেক ব্লাস্ট। এটি নতুন কোন রোগ নয়। এ রোগের একটি অনুকূল আবহাওয়া রয়েছে। যে বছর এ রোগের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করে সেবছরই প্রকোপ দেখা যায়। ফলে ধান চিটা ও গাছ জ্বলে যায়। শুধু কসবা নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাতেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। কসবায় এখনো অধিকাংশ জমিতে ফুল আসতেছে। আশার কথা হচ্ছে, এখন যদি বালাইনাশক ব্যবহার করা যায়, তাহলে এ রোগের কবল থেকে অধিকাংশ ফসল রক্ষা করা যাবে। নেক ব্লাস্ট রোগ থেকে ফসল রক্ষার জন্য ট্রুপার, নাটিভো, ডিফা, সেলটিমা, ফিলিয়া নামীয় বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসিত হবেন কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। তাছাড়া, বিশেষ কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমি প্রস্তাব পাঠাবো।

শেয়ার করুন

ভালো নেই গ্রামের কৃষক, মাঠে পুড়ে গেছে সোনালী ধান

তারিখ : ০৮:১৭:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০

এমদাদুল হক সোহাগঃ

এক ভাড় ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন কৃষক তোতা মিয়া। চোখ দুটি ছলছল করছে। ঘামে শরীরের শার্টটির অধিকাংশ অংশই ভেজা। বুকফাটা আর্তনাদ যেন প্রকাশ করতে পারছেন না। একভার ধানে সবই চিটা আর পুড়ে যাওয়া ধান গাছ। পুরো ভাড়ের মধ্যে কেজি খানেক ভালো ধানও হবেনা। যে আশা নিয়ে বোরো আবাদ করেছিলেন তা সবই আজ প্রকৃতির বিরুপ আচরণে পন্ডশ্রমে পরিণত হয়েছে। শুধু তোতা মিয়া নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বিলঘর গ্রামের পশ্চিম বিলে প্রায় সব কৃষকেরই একই অবস্থা। প্রকৃতিতে মহামারী করোনা ভাইরাসের অশোভ থাবায় যেন আজ ক্ষতবিক্ষত কৃষকের স্বপ্নের ফসলও।

বৈশাখের শেষ বিকেলে ধানের ভাড় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কৃষক তোতা মিয়ার সাথে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। ধানের ফলন কেমন হয়েছে জানতে চাইলে, আক্ষেপ নিয়ে বলেন, খোদার গজব আসছে!! তিন কানি জমিতে (৩৩ শতকে এক কানি) ইরিধান (বোরো আবাদ) করেছি। নিজের পরিশ্রম ছাড়াও প্রায় পয়ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পানি খরচ দিতে হয়েছে কানি প্রতি আড়াই হাজার টাকা করে। ভালো ফলনের আশায় যা যা করা দরকার যেমন সার, কীটনাশক ছিটানো সহ সবই করা হয়েছিলো। কিন্ত এমন ফলন হবে কল্পনাও করিনাই। যে ধান হয়েছে তা কেটে বাড়ি এনে মাড়াই করার খরচও উঠবেনা। যদি খড় বিক্রিও করি বা দাম ধরি তাহলেও নাহ। আমরা কৃষকেরা এবছর ধ্বংশ হয়ে গেছি। এসময় উপস্থিত একই গ্রামের মাহফুজুর রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন, আমার জমিতেও একই রকম অবস্থা। এবছর আল্লাহর কি গজব এসেছে তিনিই ভালো জানেন। সব ফসল জ্বলে গেছে, চিটা আর চিটা। ধান গাছই মরে গেছে। খরচ তো দূরের কথা কামলা দিয়ে এগুলো কেটে বাড়ি এনে মাড়াই করার খরচও উঠবেনা।

কৃষক তোতা মিয়া জানান, একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী ৬০০ টাকা। এ টাকার সাথে সকালে নাস্তা ও দুপুরের খাবারও দিতে হয়। তারপরেও কাজের লোক পাওয়া যায়না। করোনা ভাইরাসের কারনে কাজের লোক খোজে পাওয়া দায়। তিন কানি জমি নিজের কিনা জানতে চাইলে, কৃষক তোতা মিয়া জানান ৯০ হাজার টাকায় তিন কানি জমি মালিকের কাছ থেকে দায়সুদি (যতদিন জমির মালিক ৯০ হাজার টাকা ফেরত না দিবেন ততদিন জমি তার কাছে থাকবে) নিয়েছেন। নিজের হলে কষ্ট কম হতো। গতবছর ফলন কেমন হয়েছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরও তেমন ভালো ফলন হয়নি। তারপরেও গতবছর, একই জমিতে প্রায় ৪০মন ধান পেয়েছিলাম। কসবা পশ্চিম ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার কবির আহম্মদ জানান, বিলের অধিকাংশ ফলনই নষ্ট হয়ে গেছে। যে ফলন আশা করা হয়েছিলো তা হয়নি। এবছর কৃষকেরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কসবা প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক মোঃ সোলেমান খাঁন জানান, কসবা উপজেলার অনেক জায়গাতেই বোরো আবাদের ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন এলাকার বোরো আবাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া মাঠের চিত্র ও তথ্য সংগ্রহ করেছি। কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভূইয়া জীবন বলেন, আমি শোনেছি কৃষকের মাঠের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ধানই চিটা এবং জ্বলে গেছে। আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা প্রণোদনা পাবেন।

কসবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বলেন, এবছর কসবা উপজেলার ১৩৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আমি কসবা উপজেলায় নতুন এসেছি। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছি। সব এলাকায় ফসল নষ্ট হয়নি। কয়েকটি এলাকায় এমন হয়েছে। এ রোগের নাম নেক ব্লাস্ট। এটি নতুন কোন রোগ নয়। এ রোগের একটি অনুকূল আবহাওয়া রয়েছে। যে বছর এ রোগের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করে সেবছরই প্রকোপ দেখা যায়। ফলে ধান চিটা ও গাছ জ্বলে যায়। শুধু কসবা নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাতেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। কসবায় এখনো অধিকাংশ জমিতে ফুল আসতেছে। আশার কথা হচ্ছে, এখন যদি বালাইনাশক ব্যবহার করা যায়, তাহলে এ রোগের কবল থেকে অধিকাংশ ফসল রক্ষা করা যাবে। নেক ব্লাস্ট রোগ থেকে ফসল রক্ষার জন্য ট্রুপার, নাটিভো, ডিফা, সেলটিমা, ফিলিয়া নামীয় বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসিত হবেন কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। তাছাড়া, বিশেষ কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমি প্রস্তাব পাঠাবো।